০৭:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫

সৈয়দপুর লায়ন্স স্কুলের শিক্ষকদের অভিযোগ প্রতিষ্ঠানে অভিনব আয়নাঘর বিদ্যমান

নীলফামারীর সৈয়দপুর লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা অভিযোগ করেছেন যে, প্রতিষ্ঠানটিতে এক ধরণের অভিনব ্আয়নাঘর বিদ্যমান। দীর্ঘদিন থেকে এই আয়নাঘরের মাধ্যমে শারিরিক নির্যাতন না চালালেও এখানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্থিক ও মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় চব্বিশের বিপ্লব উত্তর সময়েও চালানো হচ্ছে সেই অমানবিক ও অযৌক্তিক কর্মকান্ড। এমন অভিযোগ তুলে ধরে ক্লাবের সভাপতি ও যুবদল নেতা জাকির হোসেন মেননের নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিচার দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।

মঙ্গলাবার (২১ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ৩ টায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিতভাবে বিভিন্ন অভিযোগ করেন তারা। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানটির সদ্য ঘোষিত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মজিবর রহমান চৌধুরী মুকুল। অভিযোগপত্র পাঠ করে শোনান সিনিয়র শিক্ষক কাজী আসাদুজ্জামান স্বাধীন। এসময় দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম দূর্ণীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনরহত ১৭০ জন শিক্ষক কর্মচারী। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগে পরদিন ৬ আগস্ট যুবদল নেতা মো. জাকির হোসেন মেনন লায়ন্স ক্লাবের পাসওয়ার্ড হ্যাক করে নিজেকে সভাপতি দাবি করেন এবং দলীয় দাপটে পূর্বের প্রায় ৪২ জন সদস্যকে ড্রপ আউট করে পরিবার তান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন লায়ন্স ক্লাবকে।

এরপর তিনি লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজের কর্তৃত্ব হাতে নিয়ে শুরু করেছেন নানা রকম দূর্নীতি। প্রথমেই তিনি লায়ন্স ক্লাবের নিয়ম ভঙ্গ করে তার স্ত্রীসহ আত্মীয়-স্বজনকে স্কুলের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া তার আস্থাভাজন ব্যক্তিকে ক্সুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদে বসিয়ে সেই সভাপতির সম্মানী প্রদানের নামে প্রতি মাসে ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। একইভাবে নিযোগ বিধি লঙ্ঘন করে চতুর্থ জ্যৈষ্ঠ শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাণিয়ে তার মাধ্যমেও দূর্নীতি করে লাখ লাখ টাকা পকেটস্থ করছেন। স্কুলের অর্থ নানাভাবে ক্লাবের একাউন্টে নিয়ে তসরুপ করছেন।

এমন অনিয়ম দূর্নীতির প্রতিবাদ করায় ক্লাব সভাপতি জাকির হোসেন মেনন অনেক সিনিয়র শিক্ষককে খালি হাতে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়াসহ নানাভাবে হেনস্থা ও হয়রানি করছেন। এর প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগি শিক্ষক কর্মচারীরা উপজেলা প্রশাসনসহ জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়। এতে অভিযোগকারীদের স্কুল থেকে বের করে দেয়ার মত ধৃষ্টতা দেখায়। এতে শিক্ষকরা আন্দোলন শুরু করে। পরে শিক্ষার্থীরাও সেই আন্দোলনে যোগ দিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। শেষে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপজেলা প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যস্থতায় অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগে স্কুল সভাপতি শফিয়ার রহমান ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মশিউর রহমানকে অব্যাহতি দেয় ক্লাব সভাপতি জাকির হোসেন মেনন।

একই বৈঠকে তিনি সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর ই আলম সিদ্দিকী কে স্কুলের সভাপতি ও সিনিয়র শিক্ষক মজিবর রহমান চৌধুরী মুকুলকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে ঘোষণা দেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি আর সেই ঘোষণা মোতাবেক কাগজকলমে নতুন সভাপতি ও অধ্যক্ষকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং হয়রানী করতে থাকেন। আজাবধি এই জটিলতা বজায় থাকায় প্রতিষ্ঠানের ১৭০ জন শিক্ষক কর্মচারী বিগত সেপ্টেম্বর ও চলতি অক্টোবর মাসের বেতন ভাতা পায়নি। এনিয়ে সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপি’র সভাপতি অধ্যক্ষ আলহাজ¦ আব্দুল গফুর সরকার সমাধানের উদ্যোগ নিলেও জাকির হোসেন মেনন কোন পাত্তা দিচ্ছেন না।

এমনকি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে অনিয়ম ও দূর্নীতি তদন্তে গঠিত কমিটির সদস্য অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (শিক্ষা), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সৈয়দপুর সার্কেল) ও উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজারকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে আর্থিক অডিট করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা সৃুষ্টি করেছেন। তার বক্তব্য তদন্ত কমিটি কারা? তাদের প্রতিও স্পর্ধা প্রদর্শন করেছেন লায়ন্স ক্লাব অব সৈয়পদুর ৩১৫এ২ এর সভাপতি জাকির হোসেন মেনন। শিক্ষকরা এসব বিষয়ে প্রশাসন, সরকারের উর্ধ¦তন কর্র্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করেছেন। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে জাকির হোসেন মেনন বেতন প্রদানের ব্যবস্থা না নিলে তারা আরও কঠোর আন্দোলন করার হুশিয়ারী দেন।

প্রতিষ্ঠানের আয়নাঘর প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মজিবর রহমান চৌধুরী মুকুল বলেন, একজন শিক্ষক অবসর নিলে নিয়মানুযায়ী ন্যুনতম ৪০ লাখ টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু লায়ন্স ক্লাব এখানে মাত্র ৪ লাখ টাকা দিয়ে শিক্ষকদের বিদায় করছেন। যা চরম মানবেতর ও দেশের আইন পরিপন্থি। এক্ষেত্রে লায়ন্স ক্লাবের এই অনিয়মতান্ত্রিক বিষয় খতিয়ে দেখার দাবিও জানান তিনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে নীলফামারীতে মিষ্টি বিতরণ

সৈয়দপুর লায়ন্স স্কুলের শিক্ষকদের অভিযোগ প্রতিষ্ঠানে অভিনব আয়নাঘর বিদ্যমান

প্রকাশিত ০৮:৪৭:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫

নীলফামারীর সৈয়দপুর লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা অভিযোগ করেছেন যে, প্রতিষ্ঠানটিতে এক ধরণের অভিনব ্আয়নাঘর বিদ্যমান। দীর্ঘদিন থেকে এই আয়নাঘরের মাধ্যমে শারিরিক নির্যাতন না চালালেও এখানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্থিক ও মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় চব্বিশের বিপ্লব উত্তর সময়েও চালানো হচ্ছে সেই অমানবিক ও অযৌক্তিক কর্মকান্ড। এমন অভিযোগ তুলে ধরে ক্লাবের সভাপতি ও যুবদল নেতা জাকির হোসেন মেননের নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিচার দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।

মঙ্গলাবার (২১ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ৩ টায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিতভাবে বিভিন্ন অভিযোগ করেন তারা। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানটির সদ্য ঘোষিত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মজিবর রহমান চৌধুরী মুকুল। অভিযোগপত্র পাঠ করে শোনান সিনিয়র শিক্ষক কাজী আসাদুজ্জামান স্বাধীন। এসময় দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম দূর্ণীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনরহত ১৭০ জন শিক্ষক কর্মচারী। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগে পরদিন ৬ আগস্ট যুবদল নেতা মো. জাকির হোসেন মেনন লায়ন্স ক্লাবের পাসওয়ার্ড হ্যাক করে নিজেকে সভাপতি দাবি করেন এবং দলীয় দাপটে পূর্বের প্রায় ৪২ জন সদস্যকে ড্রপ আউট করে পরিবার তান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন লায়ন্স ক্লাবকে।

এরপর তিনি লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজের কর্তৃত্ব হাতে নিয়ে শুরু করেছেন নানা রকম দূর্নীতি। প্রথমেই তিনি লায়ন্স ক্লাবের নিয়ম ভঙ্গ করে তার স্ত্রীসহ আত্মীয়-স্বজনকে স্কুলের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া তার আস্থাভাজন ব্যক্তিকে ক্সুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদে বসিয়ে সেই সভাপতির সম্মানী প্রদানের নামে প্রতি মাসে ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। একইভাবে নিযোগ বিধি লঙ্ঘন করে চতুর্থ জ্যৈষ্ঠ শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাণিয়ে তার মাধ্যমেও দূর্নীতি করে লাখ লাখ টাকা পকেটস্থ করছেন। স্কুলের অর্থ নানাভাবে ক্লাবের একাউন্টে নিয়ে তসরুপ করছেন।

এমন অনিয়ম দূর্নীতির প্রতিবাদ করায় ক্লাব সভাপতি জাকির হোসেন মেনন অনেক সিনিয়র শিক্ষককে খালি হাতে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়াসহ নানাভাবে হেনস্থা ও হয়রানি করছেন। এর প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগি শিক্ষক কর্মচারীরা উপজেলা প্রশাসনসহ জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়। এতে অভিযোগকারীদের স্কুল থেকে বের করে দেয়ার মত ধৃষ্টতা দেখায়। এতে শিক্ষকরা আন্দোলন শুরু করে। পরে শিক্ষার্থীরাও সেই আন্দোলনে যোগ দিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। শেষে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপজেলা প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যস্থতায় অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগে স্কুল সভাপতি শফিয়ার রহমান ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মশিউর রহমানকে অব্যাহতি দেয় ক্লাব সভাপতি জাকির হোসেন মেনন।

একই বৈঠকে তিনি সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর ই আলম সিদ্দিকী কে স্কুলের সভাপতি ও সিনিয়র শিক্ষক মজিবর রহমান চৌধুরী মুকুলকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে ঘোষণা দেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি আর সেই ঘোষণা মোতাবেক কাগজকলমে নতুন সভাপতি ও অধ্যক্ষকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং হয়রানী করতে থাকেন। আজাবধি এই জটিলতা বজায় থাকায় প্রতিষ্ঠানের ১৭০ জন শিক্ষক কর্মচারী বিগত সেপ্টেম্বর ও চলতি অক্টোবর মাসের বেতন ভাতা পায়নি। এনিয়ে সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপি’র সভাপতি অধ্যক্ষ আলহাজ¦ আব্দুল গফুর সরকার সমাধানের উদ্যোগ নিলেও জাকির হোসেন মেনন কোন পাত্তা দিচ্ছেন না।

এমনকি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে অনিয়ম ও দূর্নীতি তদন্তে গঠিত কমিটির সদস্য অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (শিক্ষা), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সৈয়দপুর সার্কেল) ও উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজারকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে আর্থিক অডিট করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা সৃুষ্টি করেছেন। তার বক্তব্য তদন্ত কমিটি কারা? তাদের প্রতিও স্পর্ধা প্রদর্শন করেছেন লায়ন্স ক্লাব অব সৈয়পদুর ৩১৫এ২ এর সভাপতি জাকির হোসেন মেনন। শিক্ষকরা এসব বিষয়ে প্রশাসন, সরকারের উর্ধ¦তন কর্র্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করেছেন। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে জাকির হোসেন মেনন বেতন প্রদানের ব্যবস্থা না নিলে তারা আরও কঠোর আন্দোলন করার হুশিয়ারী দেন।

প্রতিষ্ঠানের আয়নাঘর প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মজিবর রহমান চৌধুরী মুকুল বলেন, একজন শিক্ষক অবসর নিলে নিয়মানুযায়ী ন্যুনতম ৪০ লাখ টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু লায়ন্স ক্লাব এখানে মাত্র ৪ লাখ টাকা দিয়ে শিক্ষকদের বিদায় করছেন। যা চরম মানবেতর ও দেশের আইন পরিপন্থি। এক্ষেত্রে লায়ন্স ক্লাবের এই অনিয়মতান্ত্রিক বিষয় খতিয়ে দেখার দাবিও জানান তিনি।