১১:১১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বই হারিয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থীর আহাজারী

পেট্রোল দিয়ে ঘরে আগুন লাগিয়ে পুরো দুটি পরিবারকে হত্যার চেষ্টা

গভীর রাতে ঘরের চালে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন লাগিয়ে পুরো পরিবারকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ মিলেছে। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে পুড়িয়ে মেরে ফেলার এই অপচেষ্টা চালানো হয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের দাবি। আগুনে সর্বস্ব পুড়ে ছাই হয়েছে। তবে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে ২টি পরিবারের ৫ জন শিশুসহ ১১ টি মানুষ। নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে পরিবারটি। জীবনধারণের প্রয়োজনীয় সবকিছু হারিয়ে দিশেহারা তারা।

বিশেষ করে এইচএসসি পরীক্ষার্থী এক মেধাবী শিক্ষার্থী তার বই খাতাসহ লেখাপড়ার সব উপকারণ এবং কষ্ট করে তৈরী করা বিষয়ভিত্তিক নোট হারিয়ে আহাজারী করছে। এ ঘটনায় এলাকায় এক চরম হৃদয় বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। টনাটি ঘটেছে সোমবার (১৯ মে) রাত পৌনে ১২টায় নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের চরকপাড়ায় (জোদ্দারপাড়া) মৃত বাছান মামুদের ছেলে আব্দুল আজিজ ও হানিফ উদ্দিনের বাড়িতে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে ক্ষতিগ্রস্থরা।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, হানিফ উদ্দিনের মাটির দেয়াল ও ধানের খড়ের চালের দুটি ঘর এবং আব্দুল আজিজের সেমিপাকা টিনের ২টি ও একটি ছাপড়া ঘর সম্পূর্ণরুপে পুড়ে গেছে। ঘরের আসবাবপত্র, কাপড়, বই-খাতা, কাগজপত্রসহ সব কিছুই ছাই ও কয়লা হয়ে পড়ে আছে। পুরো বাড়ি জুড়ে কান্নার রোল। পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনসহ কৌতুহলী লোকজন আসামাত্রই সেই রোল আরও বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ছে। তার মাঝে বইয়ের জন্য আহাজারী করা এইচএসসি পরীক্ষার্থী এক মেধাবী শিক্ষার্থীর কান্ন্াই বেশি মর্মাহত করছে আগন্তুকদের। আগুনে প্রতিবেশী মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে তরিকুলেরও ২টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে ক্ষতির পরিমান ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ৫ লাখ টাকা।

ক্ষতিগ্রস্থ ও হত্যাচেষ্টার শিকার আব্দুল আজিজ বলেন, গতকাল রোববার বিকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি ও ঝড় হয়েছে। একারণে বিদ্যুৎ না থাকায় রাত প্রায় ১০ টার মধ্যেই আমরা খেয়ে শুয়ে পরি। কিন্তু আমার মেঝ মেয়ের আর ২ মাস পর এইচএসসি পরীক্ষা। তাই সে চার্জার লাইটের আলোতে প্রতিদিনের মত পড়া করছিল। রাত প্রায় ১টার দিকে সেই প্রথম টের পার আগুনের বিষয়টি। তাছাড়া ইতোমধ্যে প্রতিবেশীরাও আগুন আগুন চিৎকার করলে ঘুম ভেঙ্গে দেখি মাথার উপর ব্যাপক আগুন। তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বের হয়ে দেখি মেয়ের ঘরে তালা দেয়া। যা আমরা তাদের নিরাপত্তার জন্যই দেই। দ্রæত তালা খুলে তাদের বের করি। কিন্তু আগুন প্রবল বেগে জ¦লে উঠায় দ্রæতই সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কিছুই বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, অবশ্যই আগুন লাগানো হয়েছে। বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট বা অন্যকোনভাবে আগুন লাগেনি। কেননা আগুনের সুত্রপাত মূলতঃ পাশে আমার ভাইয়ের মাটির বেড়া ও খড়ের চালার ঘর থেকে। অথচ গতকাল বিকাল থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত খুবই বৃষ্টি হয়েছে। ওই বৃষ্টি ভেজা খড়ের ও টিনের চালে আগুন লাগার কোন কারণ নেই। নিশ্চয়ই কেউ বাইরে থেকে দাহ্য কোন পদার্থ ছিটিয়ে আগুন লাগিয়েছে। সে কারণে মাত্র ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই সব পুড়ে শেষ হয়েছে। দাহ্য পদার্থ ছাড়া আগুন এতো দ্রæতগতিতে জ¦লার কথা নয়। তাই আমরা আশঙ্কা করছি প্রতিহিংসা বশতঃ আমাদের দুই ভাইয়ের পুরো পরি¦বারকে হত্যা করার উদ্দেশ্যেই এমন ভয়ানক কান্ড ঘটানো হয়েছে। আল্লাহ সহায় ছিলো বলেই সব সম্পদ হারালেও আমারা প্রাণে রক্ষা পেয়েছি।

এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল আজিজ বলেন, জানিনা কে বা কারা এই নৃশংসতা ঘটিয়েছে। তবে ধারণা করছি সম্প্রতি জমি নিয়ে বিরোধে যারা আমাদের সাথে আইনগতভাবে পরাজিত হয়েছেন তারাই এধরণের অপচেষ্টা চালিয়েছে। কেননা আগুনের সময় অন্যপাড়ার লোকজন আসার সময় ওই প্রতিপক্ষরা তাদের বাধা দিয়েছে। এমনকি ফায়ার সার্ভিসের লোকজন তদন্ত রিপোর্ট নেয়ার সময়ও তারা স্থানীয় ইউপি মেম্বারের উপস্থিতিতেই আমাদের উপর চড়াও হয়। অর্থ ও জনবলে তারা শক্তিশালী হওয়ায় অন্যায়ভাবে আমাদেরকে পর্যুদস্ত করতেই এমন জঘন্য পথ বেছে নিয়েছে। আমরা থানায় অভিযোগ দিয়েছি। সঠিকভাবে তদন্ত পুর্বক প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনসহ জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি। যারা আমাদের মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছে তারা যেন কোনভাবেই ছাড় না পায় প্রশাসনের প্রতি সেই অনুরোধ রাখছি।

আব্দুল আজিজের মেয়ে সৈয়দপুর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মোছাঃ আখিজা আক্তার আঁখি বলেন, মানুষ কতটা পশুত্বের স্বভাবের হলো এমন অমানবিক কাজ করতে পারে। আমি টের পাচ্ছিলাম কেউ একজন বাড়ির পিছনে এসেছে এবং সে টিনের চালে কিছু একটা ছিটিয়ে দিচ্ছে। তখন পেট্রোল জাতীয় দাহ্য পদার্থের গন্ধ আমার নাকে আসে। সে সময় বৃষ্টি না হওয়ায় এবং রাতের শুনশান নিরবতা থাকায় স্পষ্ট বুঝতে পেরেছি। এর ঠিক মুহুর্ত পরেই চালে দাউ দাউ করে আগুন জ¦লতে দেখি। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই পুড়ো ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এরমধ্যেই বাবা-মা এসে ঘরের তালা খুলে আমাদের রক্ষা করে। চালের টিন ও কাঠ পুড়ে নিচে পড়ে সহসাই সব কিছু ভষ্ম করে দিয়েছে।

সে আহাজারী করে বলে, আমরা এখন একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেলাম। আল্লাহ নিজ হাতে আমাদের রক্ষা করেছেন। অন্ধাকরে বা আগুনের তীব্রতায় বিহŸল হয়ে যদি আমাদের ঘরের তালার চাবি না পেতো বা খুলতে দেরি হতো, তাহলে যে কি হতো তা আল্লাহই ভালো জানেন। হয়তো আজ ঘরের অন্যান্য জিনিসপত্রের মতই আমরা দুই ভাইবোন কয়লা হয়ে যেতাম। প্রাণে বেঁচে গেলেও আমাদের বাড়িঘরের সবকিছুসহ আমার বই-খাতাও শেষ। আমার বাবা একজন দিনমজুর হয়ে কষ্ট করে উপার্জিত অর্থে আমাদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। কিন্তু প্রতিহিংসা পোষণকারীরা আমাদের এই মেধাবী হওয়ার অর্জনকে সহ্য করতে পারছেন না। তাই আমাদের পুরো পরিবারকে পুড়িয়ে মারার মত অপতৎপরতা চালালো। এখন আমি নতুন করে বই কিনে কিভাবে আমার পরীক্ষার প্রস্তুতি নিবো? আমার নিজের করা নোটগুলো কোথায় পাবো? এমন অপরাধের দৃষ্টান্তমুলক বিচার চাই।
সৈয়দপুর ফায়ার সার্ভিস অফিসের সিনিয়র স্টেশন মাস্টার হামিদুর রহমান জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সহ ক্ষতির পরিমান নিরুপনে প্রাথমিক তদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে আগুনের সুত্রপাত সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে যে, দাহ্য কোন পদার্থের মাধ্যমে আগুন ধরেছে। বিশদ তদন্তের পর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হবে।
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ফইম উদ্দিন বলেন, বাড়িতে আগুন লাগানোর অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

নীলফামারীতে রব্বানী হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন

বই হারিয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থীর আহাজারী

পেট্রোল দিয়ে ঘরে আগুন লাগিয়ে পুরো দুটি পরিবারকে হত্যার চেষ্টা

প্রকাশিত ০৯:০৩:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

গভীর রাতে ঘরের চালে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন লাগিয়ে পুরো পরিবারকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ মিলেছে। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে পুড়িয়ে মেরে ফেলার এই অপচেষ্টা চালানো হয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের দাবি। আগুনে সর্বস্ব পুড়ে ছাই হয়েছে। তবে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে ২টি পরিবারের ৫ জন শিশুসহ ১১ টি মানুষ। নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে পরিবারটি। জীবনধারণের প্রয়োজনীয় সবকিছু হারিয়ে দিশেহারা তারা।

বিশেষ করে এইচএসসি পরীক্ষার্থী এক মেধাবী শিক্ষার্থী তার বই খাতাসহ লেখাপড়ার সব উপকারণ এবং কষ্ট করে তৈরী করা বিষয়ভিত্তিক নোট হারিয়ে আহাজারী করছে। এ ঘটনায় এলাকায় এক চরম হৃদয় বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। টনাটি ঘটেছে সোমবার (১৯ মে) রাত পৌনে ১২টায় নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের চরকপাড়ায় (জোদ্দারপাড়া) মৃত বাছান মামুদের ছেলে আব্দুল আজিজ ও হানিফ উদ্দিনের বাড়িতে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে ক্ষতিগ্রস্থরা।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, হানিফ উদ্দিনের মাটির দেয়াল ও ধানের খড়ের চালের দুটি ঘর এবং আব্দুল আজিজের সেমিপাকা টিনের ২টি ও একটি ছাপড়া ঘর সম্পূর্ণরুপে পুড়ে গেছে। ঘরের আসবাবপত্র, কাপড়, বই-খাতা, কাগজপত্রসহ সব কিছুই ছাই ও কয়লা হয়ে পড়ে আছে। পুরো বাড়ি জুড়ে কান্নার রোল। পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনসহ কৌতুহলী লোকজন আসামাত্রই সেই রোল আরও বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ছে। তার মাঝে বইয়ের জন্য আহাজারী করা এইচএসসি পরীক্ষার্থী এক মেধাবী শিক্ষার্থীর কান্ন্াই বেশি মর্মাহত করছে আগন্তুকদের। আগুনে প্রতিবেশী মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে তরিকুলেরও ২টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে ক্ষতির পরিমান ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ৫ লাখ টাকা।

ক্ষতিগ্রস্থ ও হত্যাচেষ্টার শিকার আব্দুল আজিজ বলেন, গতকাল রোববার বিকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি ও ঝড় হয়েছে। একারণে বিদ্যুৎ না থাকায় রাত প্রায় ১০ টার মধ্যেই আমরা খেয়ে শুয়ে পরি। কিন্তু আমার মেঝ মেয়ের আর ২ মাস পর এইচএসসি পরীক্ষা। তাই সে চার্জার লাইটের আলোতে প্রতিদিনের মত পড়া করছিল। রাত প্রায় ১টার দিকে সেই প্রথম টের পার আগুনের বিষয়টি। তাছাড়া ইতোমধ্যে প্রতিবেশীরাও আগুন আগুন চিৎকার করলে ঘুম ভেঙ্গে দেখি মাথার উপর ব্যাপক আগুন। তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বের হয়ে দেখি মেয়ের ঘরে তালা দেয়া। যা আমরা তাদের নিরাপত্তার জন্যই দেই। দ্রæত তালা খুলে তাদের বের করি। কিন্তু আগুন প্রবল বেগে জ¦লে উঠায় দ্রæতই সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কিছুই বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, অবশ্যই আগুন লাগানো হয়েছে। বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট বা অন্যকোনভাবে আগুন লাগেনি। কেননা আগুনের সুত্রপাত মূলতঃ পাশে আমার ভাইয়ের মাটির বেড়া ও খড়ের চালার ঘর থেকে। অথচ গতকাল বিকাল থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত খুবই বৃষ্টি হয়েছে। ওই বৃষ্টি ভেজা খড়ের ও টিনের চালে আগুন লাগার কোন কারণ নেই। নিশ্চয়ই কেউ বাইরে থেকে দাহ্য কোন পদার্থ ছিটিয়ে আগুন লাগিয়েছে। সে কারণে মাত্র ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই সব পুড়ে শেষ হয়েছে। দাহ্য পদার্থ ছাড়া আগুন এতো দ্রæতগতিতে জ¦লার কথা নয়। তাই আমরা আশঙ্কা করছি প্রতিহিংসা বশতঃ আমাদের দুই ভাইয়ের পুরো পরি¦বারকে হত্যা করার উদ্দেশ্যেই এমন ভয়ানক কান্ড ঘটানো হয়েছে। আল্লাহ সহায় ছিলো বলেই সব সম্পদ হারালেও আমারা প্রাণে রক্ষা পেয়েছি।

এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল আজিজ বলেন, জানিনা কে বা কারা এই নৃশংসতা ঘটিয়েছে। তবে ধারণা করছি সম্প্রতি জমি নিয়ে বিরোধে যারা আমাদের সাথে আইনগতভাবে পরাজিত হয়েছেন তারাই এধরণের অপচেষ্টা চালিয়েছে। কেননা আগুনের সময় অন্যপাড়ার লোকজন আসার সময় ওই প্রতিপক্ষরা তাদের বাধা দিয়েছে। এমনকি ফায়ার সার্ভিসের লোকজন তদন্ত রিপোর্ট নেয়ার সময়ও তারা স্থানীয় ইউপি মেম্বারের উপস্থিতিতেই আমাদের উপর চড়াও হয়। অর্থ ও জনবলে তারা শক্তিশালী হওয়ায় অন্যায়ভাবে আমাদেরকে পর্যুদস্ত করতেই এমন জঘন্য পথ বেছে নিয়েছে। আমরা থানায় অভিযোগ দিয়েছি। সঠিকভাবে তদন্ত পুর্বক প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনসহ জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি। যারা আমাদের মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছে তারা যেন কোনভাবেই ছাড় না পায় প্রশাসনের প্রতি সেই অনুরোধ রাখছি।

আব্দুল আজিজের মেয়ে সৈয়দপুর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মোছাঃ আখিজা আক্তার আঁখি বলেন, মানুষ কতটা পশুত্বের স্বভাবের হলো এমন অমানবিক কাজ করতে পারে। আমি টের পাচ্ছিলাম কেউ একজন বাড়ির পিছনে এসেছে এবং সে টিনের চালে কিছু একটা ছিটিয়ে দিচ্ছে। তখন পেট্রোল জাতীয় দাহ্য পদার্থের গন্ধ আমার নাকে আসে। সে সময় বৃষ্টি না হওয়ায় এবং রাতের শুনশান নিরবতা থাকায় স্পষ্ট বুঝতে পেরেছি। এর ঠিক মুহুর্ত পরেই চালে দাউ দাউ করে আগুন জ¦লতে দেখি। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই পুড়ো ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এরমধ্যেই বাবা-মা এসে ঘরের তালা খুলে আমাদের রক্ষা করে। চালের টিন ও কাঠ পুড়ে নিচে পড়ে সহসাই সব কিছু ভষ্ম করে দিয়েছে।

সে আহাজারী করে বলে, আমরা এখন একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেলাম। আল্লাহ নিজ হাতে আমাদের রক্ষা করেছেন। অন্ধাকরে বা আগুনের তীব্রতায় বিহŸল হয়ে যদি আমাদের ঘরের তালার চাবি না পেতো বা খুলতে দেরি হতো, তাহলে যে কি হতো তা আল্লাহই ভালো জানেন। হয়তো আজ ঘরের অন্যান্য জিনিসপত্রের মতই আমরা দুই ভাইবোন কয়লা হয়ে যেতাম। প্রাণে বেঁচে গেলেও আমাদের বাড়িঘরের সবকিছুসহ আমার বই-খাতাও শেষ। আমার বাবা একজন দিনমজুর হয়ে কষ্ট করে উপার্জিত অর্থে আমাদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। কিন্তু প্রতিহিংসা পোষণকারীরা আমাদের এই মেধাবী হওয়ার অর্জনকে সহ্য করতে পারছেন না। তাই আমাদের পুরো পরিবারকে পুড়িয়ে মারার মত অপতৎপরতা চালালো। এখন আমি নতুন করে বই কিনে কিভাবে আমার পরীক্ষার প্রস্তুতি নিবো? আমার নিজের করা নোটগুলো কোথায় পাবো? এমন অপরাধের দৃষ্টান্তমুলক বিচার চাই।
সৈয়দপুর ফায়ার সার্ভিস অফিসের সিনিয়র স্টেশন মাস্টার হামিদুর রহমান জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সহ ক্ষতির পরিমান নিরুপনে প্রাথমিক তদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে আগুনের সুত্রপাত সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে যে, দাহ্য কোন পদার্থের মাধ্যমে আগুন ধরেছে। বিশদ তদন্তের পর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হবে।
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ফইম উদ্দিন বলেন, বাড়িতে আগুন লাগানোর অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।