১১:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আতর বিক্রির টাকায় পরিবার চলে নওমুসলিম আব্দুল্লাহর

আতর বিক্রি করে পাঁচ সন্তানসহ সাত সদস্যের পরিবার চলে নওমুসলিম আব্দুল্ল্যাহ হিল মাহাদীর। তার দোকানের নাম দিয়েছেন ‘আব্দুল্লাহ আতর’ হাউস। তার নাম ছিল, পরিতোষ চন্দ্র রায়। হিন্দু পরিবারে জন্ম নেওয়া আব্দুল্লাহকে অভাব-অনটন, ভয়ভীতি দমাতে পারেনি। শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবন ব্যবস্থা।

আব্দুল্লাহ নীলফামারী পৌর শহরের বাড়াই পাড়া মহল্লার শ্রী ধৌলু চন্দ্র রায় ও নিলাবতি রাণীর ছেলে। চার ভাইবোনের মধ্যে আব্দুল্লাহ ছিল তৃতীয়। কিন্ত ছোট বেলা থেকেই তার চলাফেরা খাওয়া দাওয়া ছিল মুসলিম পরিবারের সাথে। স্কুলের বন্ধুরাও (পড়ার সাথী) ছিল মুসলিম।

এক পর্যায়ে ছেলে মেয়ে নিয়ে মুসলিম ধর্ম গ্রহন করেন সে। এঘটনায় বাবার পরিবার থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়ে, শুরু হয় তার অভাব অনাটন আর দুঃখ কষ্ট। কিন্ত সে কারো কাছে ভিক্ষা না করে ৩৫০ টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেন আতর বিক্রি। এরপর বাজারে দোকানে আতর, তসবি, টুপি, সুরমা, মেসয়াক ও জায়নামাজ বিক্রি করেন। পাশাপাশি, নিজের হাতে সংগ্রহ করা খাঁটি মধু ও কালোজিরার তেল বিক্রি করে থাকেন।

জানতে চাইলে আব্দুল্লাহ বলেন, ‘স্কুল জীবন থেকে ইসলাম ধর্মের প্রতি ভালবাসা, ভাল লাগা। আমার ক্লাসের বন্ধুরাও ছিলো মুসলামান। মস্জিদের আজান হলে মন চল যেত মস্জিদে। ফলে সকল বাধা পেরিয়ে ২০০১ সালে সেচ্ছায় কোর্টের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছেলে মেয়ের পড়াশোনাসহ সাত সদস্যের পরিবার চলে আতর, টুপির ব্যবসা থেকে। অন্য পেশায় না গিয়ে এই দোকান দিয়ে কোন রকমে চলে সংসার জীবন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, কোরআন তেলাওত ও এই দোকানেই তার একমাত্র ভরসা।’

জেলা শহরের বড় বাজার মসজিদ সংলগ্ন ফায়ার সার্ভিস রোডে ভাড়ায় একটি ছোট দোকান ঘর নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। কিন্ত অভাব অনাটনের সংসারে দোকনে খুব একটা মালপত্র নেই। তাই একজন নওমুসলিম হিসেবে সরকারী বা বেসরকারী সহায়তার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।

ওই মসজিদের ঈমাম মাওলানা মুক্তি হাবিবুল্লাহ রহমানী জানান, আমার মসজিদের পাশেই দোকান। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও আদায় করেন। নওমুসলিম হিসেবে অন্যভাবে আয় করতে পারতো, কিন্ত তা না করে হালাল পথে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এজন্য ধনবাদ তাকে। প্রত্যেকের উচিৎ তার পাশে দাঁড়ানো।

জেলা শহরের নিউবাবু পাড়ার বাসিন্দা মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, আব্দুল্লাহ নওমুসলিম হিসেবে মানুষের কাছে হাত পেতে সংসার চালাতে পারতো, কিন্ত ওই রাস্তায় না গিয়ে আতরের ব্যবসা করে সংসার চালাচ্ছে। তার দোকানে ঈদ ছাড়াও সব সময় টুপি, বিভিন্ন ধরণের আতর, সুরমা, তসবি, মেসওয়াক, জায়নামাজ, ঘাঁটি মধু ও কালোজিরার তেল পাওয়া যায়। একজন নওমুসলিম হিসেবে প্রত্যেকের উচিৎ তার প্রতি সদয় হওয়া, তাকে সাহায্য করা।

নীলফামারী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নুর আলম বলেন, আবদুল্লাহ আতর বিক্রি করে সাত সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ চালান। এটা খুবেই ভাল দিক। স্থানীয় প্রশাসনসহ সরকারী বেসরকারীভাবে তাঁর পাশে দাঁড়ানোর আহব্বান জানান তিনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

নীলফামারীতে রব্বানী হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন

আতর বিক্রির টাকায় পরিবার চলে নওমুসলিম আব্দুল্লাহর

প্রকাশিত ০৩:২৬:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

আতর বিক্রি করে পাঁচ সন্তানসহ সাত সদস্যের পরিবার চলে নওমুসলিম আব্দুল্ল্যাহ হিল মাহাদীর। তার দোকানের নাম দিয়েছেন ‘আব্দুল্লাহ আতর’ হাউস। তার নাম ছিল, পরিতোষ চন্দ্র রায়। হিন্দু পরিবারে জন্ম নেওয়া আব্দুল্লাহকে অভাব-অনটন, ভয়ভীতি দমাতে পারেনি। শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবন ব্যবস্থা।

আব্দুল্লাহ নীলফামারী পৌর শহরের বাড়াই পাড়া মহল্লার শ্রী ধৌলু চন্দ্র রায় ও নিলাবতি রাণীর ছেলে। চার ভাইবোনের মধ্যে আব্দুল্লাহ ছিল তৃতীয়। কিন্ত ছোট বেলা থেকেই তার চলাফেরা খাওয়া দাওয়া ছিল মুসলিম পরিবারের সাথে। স্কুলের বন্ধুরাও (পড়ার সাথী) ছিল মুসলিম।

এক পর্যায়ে ছেলে মেয়ে নিয়ে মুসলিম ধর্ম গ্রহন করেন সে। এঘটনায় বাবার পরিবার থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়ে, শুরু হয় তার অভাব অনাটন আর দুঃখ কষ্ট। কিন্ত সে কারো কাছে ভিক্ষা না করে ৩৫০ টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেন আতর বিক্রি। এরপর বাজারে দোকানে আতর, তসবি, টুপি, সুরমা, মেসয়াক ও জায়নামাজ বিক্রি করেন। পাশাপাশি, নিজের হাতে সংগ্রহ করা খাঁটি মধু ও কালোজিরার তেল বিক্রি করে থাকেন।

জানতে চাইলে আব্দুল্লাহ বলেন, ‘স্কুল জীবন থেকে ইসলাম ধর্মের প্রতি ভালবাসা, ভাল লাগা। আমার ক্লাসের বন্ধুরাও ছিলো মুসলামান। মস্জিদের আজান হলে মন চল যেত মস্জিদে। ফলে সকল বাধা পেরিয়ে ২০০১ সালে সেচ্ছায় কোর্টের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছেলে মেয়ের পড়াশোনাসহ সাত সদস্যের পরিবার চলে আতর, টুপির ব্যবসা থেকে। অন্য পেশায় না গিয়ে এই দোকান দিয়ে কোন রকমে চলে সংসার জীবন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, কোরআন তেলাওত ও এই দোকানেই তার একমাত্র ভরসা।’

জেলা শহরের বড় বাজার মসজিদ সংলগ্ন ফায়ার সার্ভিস রোডে ভাড়ায় একটি ছোট দোকান ঘর নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। কিন্ত অভাব অনাটনের সংসারে দোকনে খুব একটা মালপত্র নেই। তাই একজন নওমুসলিম হিসেবে সরকারী বা বেসরকারী সহায়তার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।

ওই মসজিদের ঈমাম মাওলানা মুক্তি হাবিবুল্লাহ রহমানী জানান, আমার মসজিদের পাশেই দোকান। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও আদায় করেন। নওমুসলিম হিসেবে অন্যভাবে আয় করতে পারতো, কিন্ত তা না করে হালাল পথে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এজন্য ধনবাদ তাকে। প্রত্যেকের উচিৎ তার পাশে দাঁড়ানো।

জেলা শহরের নিউবাবু পাড়ার বাসিন্দা মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, আব্দুল্লাহ নওমুসলিম হিসেবে মানুষের কাছে হাত পেতে সংসার চালাতে পারতো, কিন্ত ওই রাস্তায় না গিয়ে আতরের ব্যবসা করে সংসার চালাচ্ছে। তার দোকানে ঈদ ছাড়াও সব সময় টুপি, বিভিন্ন ধরণের আতর, সুরমা, তসবি, মেসওয়াক, জায়নামাজ, ঘাঁটি মধু ও কালোজিরার তেল পাওয়া যায়। একজন নওমুসলিম হিসেবে প্রত্যেকের উচিৎ তার প্রতি সদয় হওয়া, তাকে সাহায্য করা।

নীলফামারী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নুর আলম বলেন, আবদুল্লাহ আতর বিক্রি করে সাত সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ চালান। এটা খুবেই ভাল দিক। স্থানীয় প্রশাসনসহ সরকারী বেসরকারীভাবে তাঁর পাশে দাঁড়ানোর আহব্বান জানান তিনি।