জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, যারা পুরনো বন্দোবস্ত, দখলদারিত্ব ও সন্ত্রাসের রাজনীতি ফিরিয়ে আনবে, তাদের পরিণতিও হাসিনার মতো হবে। রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের শেষে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না এনসিপি।
জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে মন্তব্য করে নাহিদ আরো বলেন, স্পষ্টভাবে আমরা হুঁশিয়ারি দিতে চাই, যদি সরকার বা অন্য কেউ মনে করে থাকেন হাজারো, লক্ষ মানুষ যাঁরা রাজপথে নেমেছিলেন, তাঁরা ঘরে ফিরে গেছেন, তাহলে আপনারা ভুল ভাবছেন। আমরা বাংলার প্রতিটি পথে-প্রান্তরে যাব। আমরা বাংলার ছাত্র, জনতা, তরুণদের আবারও রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানাব।
তিনি বলেন, ব্রিটিশদের বিপক্ষে নীল বিদ্রোহ আন্দোলন, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী। তাই জাতীয় নাগরিক পার্টি নতুন দেশ গড়তে উত্তরাঞ্চল রংপুর থেকে পদযাত্রা শুরু করেছে। কারন বিদ্রোহের উত্তরাঞ্চল থেকে আমরা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের স্লোগান তুলেছি। পদযাত্রায় দেশের ৬৪ জেলার জনগণের দুঃখ-দুর্দশা শুনে আগামী ৩ আগষ্ট এনসিপি ঢাকার শহীদ মিনারে বিশাল জনসভার মাধ্যমে ইশতেহার ও ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুপুর আড়াইটায় জুলাইয়ের পদযাত্রার তৃতীয়দিন নীলফামারী জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে পদসভা তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, রংপুরের কৃষক সন্তান আবু সাঈদ, নীলফামারীর সপ্তম শ্রেনীর ছাত্র রুবেল ইসলাম ও সৈয়দপুরের মেধাবী শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেনের বিদ্রোহ আমরা মনে রেখেছি। তারা নিজেদের বুকে বুলেট নিয়ে জীবন দিয়ে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে ত্বরান্বিত করেছেন। আমরা সেই ইতিহাসকে বুকে ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি।
নাহিদ তার পাশে নীলফামারীর জুলাই যোদ্ধা সপ্তম শ্রেনীর ছাত্র শহীদ রুবেল হোসেনের বাবা রফিকুল ইসলামের হাত ধরে বলেন, খুনি শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না শেখ হাসিনার বিচার হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত দেশের মানুষ শান্ত থাকবে না। তিনি বলেন, নির্বাচনের কথা বলে মূলা ঝুলানো হচ্ছে। আমরা ধোঁকাবাজিতে বিশ্বাস করব না। আমরা অবশ্যই নির্বাচন চাই, নির্বাচিত সরকার চাই। কিন্তু অবশ্যই শেখ হাসিনাসহ সব হত্যাকারীকে বিচারের আওতায় আনতে হবে আগে। রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার হতে হবে আগে। সংস্কারের মধ্য দিয়েই নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। ছাত্র–জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও মাফিয়াতন্ত্র শেষ হয়নি। আমাদের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস ধরে রাখতে হবে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিচার এখনো সম্পন্ন না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন নাহিদ ইসলাম বলেন, আমাদের মধ্যে হতাশা রয়েছে। আমরা এখনো বিচার সম্পন্ন দেখতে পাইনি। আমাদের যে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ, আমাদের যে সংস্কার সেটিও সম্পূর্ণরূপে দেখতে পাইনি। দেখা যাচ্ছে সেই আগের মতো চাঁদাবাজি, দূর্নীতি চলছে। আর কেউ কেউ নির্বাচন নির্বাচন শ্লোগান তুলে যাচ্ছে। এটি সংস্কার ছাড়া হতে দেয়া যাবেনা।
তিনি বলেন, অনেকে মনে করেন, এটা সরকার পতনের আন্দোলন ছিল কেবল। আমরা মনে করি, এটা কেবল সরকার পতনের আন্দোলন ছিল না। এটি ছিল নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। একটি দল পরিবর্তন বা ক্ষমতার হস্তান্তরের জন্যই গণ-অভ্যুত্থান ঘটেনি। গণ-অভ্যুত্থান ঘটেছিল গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার জন্য।
উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সঞ্চালনায় পদসভায় বক্তব্য রাখেন মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ ও যুগ্ন মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) আবু সায়েদ লিওন। এসময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, নাহিদা সারওয়ার নিভা, এনসিপির নীলফামারী জেলা আহ্বায়ক মোহাম্মদ আবদুল মজিদ সহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।