নীলফামারীর সৈয়দপুরে একটি জর্দা ফ্যাক্টরীর মালিক আয়েশা সিদ্দিকা নেপালীর শখের পোষা বিদেশী শিকারী কুকুরের আক্রমনে একজন নারীর শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। গুরুত্বর জখম অবস্থায় হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
এর প্রতিবাদ করায় ফ্যাক্টরী মালিক দূর্ব্যবহার করাসহ ভুক্তভোগী পরিবারের উপর উপর্যুপরী হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে এলাকাবাসী বিচারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করার প্রেক্ষিতে পুলিশ ফ্যাক্টরীতে অভিযান চালালে মালিক পালিয়ে গেছে। পরে একটি পরিত্যক্ত ঘরে লুকিয়ে থাকা ম্যানেজার আইযুব আলী (৫৫) কে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের চৌমহনী নয়াপাড়া এলাকায়। কুকুরের কামড়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা নারী ওই পাড়ার জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে মুক্তারিনা বেগম (২৮)। তিনি সৈয়দপুর বিমানবন্দরে একটি এয়ার কোম্পানীর সিকিউরিটি সেকশনে কর্মরত। প্রতিদিনের মত গত শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৬ টায় বাড়ির পাশে সৈয়দপুর-পার্বতীপুর সড়কে ভ্যানের জন্য অপেক্ষা করছিল। এমন সময় জর্দা ফ্যাক্টরীর ৪ টি জার্মান শেপার্ড দূর্ধর্ষ শিকারী কুকুর তাকে ঘিরে ফেলে।
সে আতঙ্কে চিৎকার করলে কুকুরগুলো তাকে আক্রমন করে এবং মুহুর্তে শরীরের মাংসল স্থানগুলো থেকে মাংস খুবলে খায়। এমনকি মাথায় আক্রমন করে বাম পাশে খুলি তুলে ফেলে। এতে চরমভাবে ক্ষতবিক্ষত হয়ে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। এমতাবস্থায় আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নেয়। কিন্তু তার অবস্থা নাজুক থাকায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে সেখানে সে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (আইসিইউ) তে চিকিৎসারত।
আহত মুক্তারিনার চাচা নুরে আলম বলেন, ঘটনার পর পরই পরিবারের লোকজন জর্দা ফ্যাক্টরী মালিক আয়েশা সিদ্দিকা নেপালীর কাছে গেলে তিনি তাদের সাথে অশোভন আচরণ করেন এবং অহংকারের সাথে বলেন, আমি প্রয়োজনে আরও হিং¯্র প্রাণী পুষবো, সিংহ, কুমির রাখবো। তাতে তোদের কি করার আছে কর। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এলাকাবাসী প্রতিবাদ জানালে তিনি তাদের সাথেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এমনকি তার ম্যানেজারসহ লোকজনকে পাঠিয়ে হুমকি প্রদর্শন করেন। এসময় আমার দুই ভাতিজা রেজওয়ান ও মেজবাহের উপর হামলা চালায়। তাই বাধ্য হয়ে তার বিচারের দাবিতে আমরা আজ সড়ক অবরোধ করেছি।
এলাকার প্রতিমা রানী নামে একজন বলেন, এর আগেও একাধিক ব্যক্তিকে ওই কুকুরগুলো কামড়িয়েছে। একারণে আমরা বার বার আবাসিক এলাকায় যেন তার কুকুর না ঢোকে সেজন্য বলেছি। কিন্তু তিনি প্রতিদিনই রাতে কুকুরগুলো ছেড়ে দেন এবং সকালে ধরে আটকে রাখেন। এত দূর্ধর্ষ ও শিকারী কুকুর কোনভাবেই ছেড়ে দেয়া উচিত নয়। এবাপারে তিনি বলেন, তার ফ্যক্টরীতে চুরি হয় তাই রাতে ছেড়ে দেন। এতে আমরা চরম আতঙ্কে দিনাতিপাত করি। নুক্তরিনাকে যেভাবে আক্রমন করে জখম করেছে তাতে আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। এলাকার কেউ আর নিরাপদ নই। এই কুকুরগুলো এখান থেকে সরিয়ে ফেলার দাবি জানাই। নয়তো আরও বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এলাকার বেশ কয়েকজন অভিযোগে করেন যে, কুকুরগুলোকে নিয়মিত মাংস খাওয়ানো হয়। হয়তো গত কয়েকদিন তাদের মাংস দেয়া হয়নি। একারণে এতটা হিংস্র হয়ে উঠেছে এবং ছাড়া পেয়ে মানুষের উপর আক্রমন করে বসেছে। তাছাড়া এত হিংস্র পশুকে এভাবে ছেড়ে দেয়া কোনভাবেই ঠিক হয়নি। এর বিচার হওয়া দরকার । নয়তো ফ্যাক্টরী মালিক আরও বেপরোয়াভাবে কুকুরগুলোকে ছাড়চে এবং প্রতিবাদ করলে টাকার গরমে মানুষের সাথে অশোভন আচরণ করবে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই মনিরুজ্জামান মনির বলেন, মুক্তার পরিবার বাদি হয়ে মালিক ও ম্যানেজারসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩০-৪০ জনের নামে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং ১৫। এর প্রেক্ষিতে রোববার বেলা ১ টার দিকে ফ্যাক্টরীতে অভিযান চালাই। এতে মালিক পক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে আইয়ুব আলী একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি ফ্যক্টরীর ম্যানেজার বলে জানা গেছে। অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে প্রচেষ্টা চলছে।
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ রেজাউল করিম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে আইযুব আলী নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে।























