১১:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

বিএনপিতে প্রার্থীর ছড়াছড়ি প্রচারে এগিয়ে জামায়াত

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি জেলা নীলফামারী। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে তিস্তা নদীবিধৌত নীলফামারীর চারটি সংসদীয় আসনেই বইছে ভোটের হাওয়া। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী এলাকায় ইতোমধ্যে সরব হয়ে উঠেছেন। জুলাই আন্দোলনের পর ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নেই মাঠে।

তবে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনী মাঠে বিচরণে ক্রমেই জমে উঠছে ভোটের হাওয়া। এখন এসব সম্ভাব্যপ্রার্থী শহর, গ্রামসহ বিভিন্ন জনবহুল স্থান কিংবা সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ উঠোন বৈঠক করছেন। অপরদিকে ভোটের মাঠে উপস্থিতি জানাতে অনেকে সাঁটিয়েছেন ব্যানার-পোস্টার-ফেস্টুনসহ ডিজিটাল ব্যানার।

নীলফামারীর চারটি আসনে বিএনপি, নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জাতীয় পার্টিসহ  কিছু দল এখনো তাদের প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করেনি। তবে চারটি আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করায় জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে ইসলামী বাংলাদেশের প্রার্থীরা মাঠে এগিয়ে রয়েছেন। গণঅধিকার পরিষদের একটি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। তবে দলীয় মনোনয়ন ঘোষণা না হলেও বিএনপি, এনসিপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা বসে নেই। তারাও রীতিমতো প্রচার  চালিয়ে যাচ্ছেন।

নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) ॥ জাতীয় সংসদের তিনশ’ আসনের মধ্যে নীলফামারী-১ হলো ১২তম আসন। আসনটি ডোমার ও ডিমলা উপজেলা নিয়ে গঠিত। ডোমার উপজেলায় রয়েছে ১০টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা। ডিমলা উপজেলায় রয়েছে ১০টি ইউনিয়ন। মোট ২০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ভোটারসংখ্যা ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৯৮৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৩০ হাজার ২৫৯, মহিলা ২ লাখ ২৫ হাজার ৭২৫ এবং হিজরা ২জন। মোট ভোটারের মধ্যে ডোমার উপজেলায় ২ লাখ ১৪ হাজার ৯২৬ জন এবং ডিমলা উপজেলায় ২ লাখ ৪১ হাজার ৬০ জন।

জেলা নির্বাচন অফিস হতে প্রাপ্ত তথ্য মতে এই আসনে বিগত ১২টি নির্বাচনে প্রথম, পঞ্চম, অষ্টম, দশম একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিলেন। দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি, তৃতীয়, চতুর্থ, সপ্তম ও নবম সংসদে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিজয়ী হন।

নীলফামারী-১ আসনটিতে বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য দলের প্রচারে মাঠে রয়েছেন একক প্রার্থী। সেখানে বিএনপির প্রার্থী হয়ে একাধিকবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন। এবারও তিনি বিএনপির একক মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি কেন্দ্রীয় জেলা বিএনপির সদস্য এবং ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এ্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক।

অপরদিকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির মজলিসে শূরা সদস্য ও জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার দলঘোষিত একক প্রার্থী। প্রধান ওই দুই দলের দুই হেভিওয়েট মাঠে প্রচারে থাকায় অনেকটা জমে উঠেছে ভোটের হাওয়া। এছাড়া এই আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ডোমার উপজেলার সহসভাপতি আব্দুল জলিল এবং খেলাফত মজলিসের হাবিবুর রহমান দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে লে. কর্নেল (অব.) তছলিম উদ্দিন, ন্যাপের সভাপতি জেভেল গানির প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখনো চূড়ান্ত হয়নি এনসিপির প্রার্থী। তবে জনসমর্থন অর্জনে দলটির বিভিন্ন সভা-সমাবেশসহ সামাজিক কার্যক্রম চলমান আছে বলে জানান দলটির জেলা সমন্বয়ক আব্দুল মজিদ।

বিএনপির একক সম্ভাব্যপ্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে দীর্ঘদিন দেশে থাকতে পারিনি। এবার দেশ ও এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চাই। তিনি বলেন, এবার নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার উঠবে। কারণ, সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি সরকারি দল হবে। আর সরকারদলীয় এমপি স্বাভাবিকভাবে এলাকার ইতিবাচক উন্নয়নে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।

জামায়াত প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার জানান, নির্বাচনী এলাকার সাধারণ মানুষের চাপে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। তাই জয়ের বিষয়ে আশাবাদী। নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়নে দল-মত ভুলে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চান তিনি। এ আসনে প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে বড় ফ্যাক্টর তিস্তাপাড়ের ভোটার। এ ভোটাররাই যে প্রার্থীকে সমর্থন দেবেন, জয়টা তার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তবে অনেক আগে থেকেই বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা তিস্তাপাড়ের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন। এবার হিন্দু ভোটারদের অনেকে জামায়াতের প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছেন। এ কারণে সাধারণ ভোটাররা ভোটের হিসাব-নিকাশ কষতে পারছেন না। তবে নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসবে, হিসাব-নিকাশটা আরও সহজ হবে।

 

নীলফামারী-২ (সদর) ॥ জেলা সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন এবং একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা নিয়ে জাতীয় সংসদের ১৩তম আসন নীলফামারী-২ (সদর)। আসনটির মোট ভোটার তিন লাখ ৮০ হাজার ৯১৭ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ৯০ হাজার ৬৩৮ ও পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯০ হাজার ২৭৭ এবং তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) ভোটার ২ জন। এর আগে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিল তিন লাখ ৫৮ হাজার ৭৯১ জন। সে হিসাবে ভোটার বৃদ্ধি পেয়েছে ২২ হাজার ১২৬।

এ আসনে ২০০১ থেকে ২০২৪ সালের মোট পাঁচটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে টানা নির্বাচিত হন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন আসাদুজ্জামান নূর। ৫ আগস্টের পর তার বিরুদ্ধে চারটি হত্যা মামলা ও দুদকের একটি মামলা দায়ের হয়েছে। বিগত ১২টি নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে, এ আসনে আওয়ামী লীগ সাতবার নির্বাচিত হয়েছে। এছাড়া জাতীয় পার্টি তিনবার, বিএনপি একবার, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) একবার। এ আসনে জামায়াত আগে থেকেই শক্তিশালী ছিল।

আওয়ামী লীগের পতনের পর জামায়াতের আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছে। এ আসনে বিএনপি ভালো কিছু করতে চাইলে জামায়াতের সঙ্গে তাদের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে বলে সাধারণ ভোটারদের মতপ্রকাশ করতে দেখা যায়।
তবে জামায়াতের প্রচারের সঙ্গে বিএনপির প্রচার  এখন পাড়া মহল্লার উঠানে উঠানে শুরু হয়েছে। নতুন আধুনিক মডেল জেলা সদর উপহার দিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তবে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন কে পাবেন তা এখনো অধরা থেকে গেছে। এদিকে আসনটিতে এবার জামায়াতের দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আল-ফারুক আব্দুল লতিফকে। তিনি প্রবীণ আইনজীবী জেলা জামায়াতের সাবেক আমির মরহুম আব্দুল লতিফের ছেলে।

এদিকে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম হাছিবুল ইসলাম হাসিবকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজ কল্যাণ সম্পাদক অধ্যাপক আবু হেলাল এই আসনের সম্ভাব্যপ্রার্থী। অপরদিকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা গোলাম রব্বানী ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামী বাংলাদেশের মুফতি আবদুল্লাহ আল মঞ্জুরকে দল থেকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী রয়েছেন দলটির জেলা কমিটির সদস্যসচিব সাজ্জাদ পারভেজ। এনসিপির পক্ষে প্রার্থী চূূড়ান্তের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী আব্দুল মজিদ।

অপরদিকে বিএনপিতে রয়েছে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। তাদের মধ্যে প্রচারে উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে রয়েছেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ.এইচ.এম সাইফুল্লাহ রুবেল। ইতোমধ্যে তিনি নেমেছেন গণসংযোগের মাঠে। তিনি ছাড়াও এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশায় রয়েছেন দুই আমেরিকা প্রবাসী। তাদের মধ্যে একজন হলেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সামসুজ্জামান এবং অপরজন সাবেক ছাত্রদল নেতা ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাবেরুল ইসলাম লিটন। এর পাশাপাশি জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলমগীর সরকার এবং জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী আখতারুজ্জামান জুয়েল।

জামায়াত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আল ফারুক আব্দুল লতিফ ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি বলে তার দলীয় মনোনয়ন এবার বিজয়ের দিকে আশার হাত বাড়িয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ভোটে জনগণের রায়ে নির্বাচিত হলে সকলকে সঙ্গে নিয়ে জেলা সদর আসনটির উন্নয়ন ঘটাতে চাই। এই জেলা সদরটি উন্নয়নে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী এএইচএম সাইফুল্লাহ রুবেল। তিনি বলেন, উন্নয়ন বঞ্চিত নীলফামারী সদর আসনটি নতুন রূপে ঢেলে সাজাতে চাই। তাই নতুন রূপে বিএনপির নেতাকর্মী তারুণ্যদীপ্ত হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি।
একইভাবে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্যপ্রার্থী সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, এবার জাতীয় পার্টি কোনো জোটে যাবে না। এ আসনটি জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হলেও জোটগত কারণে আওয়ামী লীগকে ছেড়ে দিতে হয়েছিল। এবার তা হচ্ছে না। এজন্য ভোটারদের বহুদিনের ইচ্ছা পূরণ হবে। শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে ভোটাররা তাকেই বেছে নেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বিএনপির সম্ভাব্যপ্রার্থী সাবেক জেলা সভাপতি আখম আলমগীর সরকার বলেন, দলের দুর্দিনে তিনি হাল ধরে রেখেছিলেন। এ কারণে দল তাকে নিরাশ করবে না।  জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মীর সেলিম ফারুক জানান, বিগত দিনে জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করায় আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী ছিল না। এবার তারুণ্যদীপ্ত বিএনপি গড়ে উঠেছে।

 

নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) ॥ জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে নীলফামারী-৩ ১৪ নম্বর আসন। জলঢাকা উপজেলার ১১ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে আসনটি গঠিত। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নীলফামারী-৩ আসনে প্রথম, পঞ্চম, দশম ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়। দ্বিতীয় সংসদে মুসলিম লীগ, তৃতীয়, সপ্তম, অষ্টম সংসদে জামায়াতে ইসলামী, নবম ও একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টি এবং দ্বাদশ নির্বাচনে মহাজোটের জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত মেজর রানা মো. সোহেলকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদ্দাম হোসেন পাভেল নির্বাচিত হন। বর্তমানে বিভিন্ন মামলায় তিনিও কারাগারে বন্দী। গত ৫ আগস্টের পর উপজেলাটি এখন আওয়ামী লীগ শূন্য। এখন বিএনপি ও জামায়াত এবং এনসিপি ও গণঅধিকারের নেতাকর্মীরা প্রাণচাঞ্চল্য নিয়ে রয়েছেন।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৯০ হাজার ৮১৩ জন। নারী ভোটার ১ লাখ ৪৩ হাজার ১৮, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ৭৯৩ ও তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) ভোটার ২ জন। এর আগে দ্বাদশ  সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিল  দুই লাখ ৭৫ হাজার ৬৯৮ জন।
১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে আসনটিতে নির্বাচিত হন জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী। এরপর থেকে এলাকাটি পরিচিত হয় জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে। সেটি ২০০৮ সালে হাতছাড়া হয় আওয়ামী লীগের মহাজোটের কাছে। মহাজোটের জোরে সেবার নির্বাচিত হন জাতীয় পাটির প্রার্থী। হারানো আসন উদ্ধারে এবার রংপুর মহানগর জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি ও জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ্ সালাফীকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি।

বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন জেলা বিএনপির সদস্য বিশিষ্ট শিল্পপতি টানা দুইবারের উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ সৈয়দ আলী ও অপরজন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম। তবে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি দল থেকে বহিষ্কৃত ফাহমিদ ফায়সাল কমেট চেšধুরী, তার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনিও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী।

এই আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপির) প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। তবে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে প্রার্থী হতে পারেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আবু সাঈদ লিওন। তার বাড়ি এই উপজেলায়। গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি) পক্ষে এই আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সোহাগ হোসাইন বাবু। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমজাদ হোসেন সরকার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের শরিফুল ইসলাম ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামী বাংলাদেশের ঘোষিত প্রার্থী হলেন মাওলানা জাফর আহমদ। জাতীয় পার্টির পক্ষে সম্ভাব্যপ্রার্থী সাবেক এমপি মেজর (অব.) রানা মহম্মদ সোহেল।

জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সালাফি বলেন, আসনটি জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি। এর আগে এই আসন থেকে জামায়াতের প্রার্থী তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ দিনের ভোট যদি রাতে না করত, আগের চারটি সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীই নির্বাচিত হতেন। তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর মানুষের চিন্তা-চেতনারও বিপ্লব ঘটেছে। গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতিটি স্থানে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। সামনে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এ আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পারব ইনশাআল্লাহ। বিএনপির সম্ভাব্যপ্রার্থী আলহাজ সৈয়দ আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার অসহায় মানুষজনের পাশে থেকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। টানা দুইবার উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে ভোটারা আমাকে বিজয়ী করেছিল। আমি আশা করি বিএনপি আমাকে মনোনয়ন দিলে আসনটি আমি দলকে উপহার দিতে পারব।

অপরদিকে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ স¤পাদক ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মইনুল ইসলাম বলেন, বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। দল মনোনয়ন দিলে ভোটারদের রায়ে জয়লাভ করব।
গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি) এই আসনে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সোহাগ হোসাইন বাবু মনোনয়ন পেয়েছেন। তার বাড়ি জলঢাকায়। তিনি বলেন, জলঢাকা এলাকায় তাদের দলের কর্মকা- শক্তিশালী। এলাকার মানুষজন তাকে সমর্থন দিয়েছেন। তিনি আশাবাদী, নির্বাচিত হলে অবহেলিত জলঢাকার উন্নয়ন করে দৃশ্যপট পরিবর্তন ঘটনাতে সক্ষম হব।

এদিকে এই আসনে এনসিপির রাজনৈতিক কর্মসূচি বেশ জোরেশোরেই হয়ে থাকে। বেশির ভাগ তরুণ রয়েছে দলটির সঙ্গে। এবার এলাকায় দৃশ্যমান উন্নয়ন করতে হলে প্রয়োজন তরুণ নেতৃত্ব অনেকে তা মনে করছেন। চূড়ান্ত ঘোষণা না হলেও নীলফামারী-৩ ও নীলফামারী-৪ দুটি আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপির) সম্ভাব্য প্রার্থী হবেন দলটির উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আবু সাইদ লিওন। এমনটি জানালেন দলটির জেলা সমন্বয়ক আব্দুল মজিদ।

 

নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ) ॥ বিমানের আকাশ পথে উত্তরবঙ্গের প্রবেশ দ্বার হিসেবে পরিচিত রেলের শহর সৈয়দপুর উপজেলা। নীলফামারীর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আসন এটি। সৈয়দপুর ঘিরে যে কোনো নির্বাচন এলেই উঠে আসে উর্দুভাষী (অবাঙালি) ভোটার বড় নিয়ামক। অপর দিকে ভিক্ষুকমুক্ত উপজেলা ছাড়াও কিশোরগঞ্জে সমতল মাটিতে চাষ হচ্ছে চা। রয়েছে অসংখ্য পোল্টিশিল্প ও কৃষিতে আগাম আলু উৎপাদনের সুতিকাগার।

এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৯৫১। নারী ভোটার ২ লাখ ২২ হাজার ৯৬৮, পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২৩ হাজার ৯৭৯ ও তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) ভোটার ৫ জন। এর মধ্যে সৈয়দপুরে মোট ভোটার ২ লাখ ২৫ হাজার ২৯৮ জনের সঙ্গে উর্দুভাষী (অবাঙালী) ভোটার রয়েছে ৭৮ হাজার ৫৫জন। কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ২১ হাজার ৬৫৩ জন।

জামায়াতে ইসলামীর দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সৈয়দপুর উপজেলা শাখার আমির হাফেজ মাওলানা আব্দুল মুনতাকিম। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাহ্দী হাসান, ইসলামী আন্দোলনের আলহাজ শহিদুল ইসলাম ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামীর মাওলানা রেজাউল করিম। তবে বিএনপি, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দল এখনো প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেনি।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবিশিষ্ট কণ্ঠশিল্লী বেবী নাজনীন, সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিলকিস ইসলাম প্রমুখ। অন্যরা হলেন- সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুল গফুর সরকার, উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এস এম ওবায়দুর রহমান, সাবেক ছাত্রদল নেতা সৈয়দপুর জেলা বিএনপির সদস্য সহকারী অধ্যাপক শওকত হায়াৎ শাহ্, সৈয়দপুর জেলা বিএনপির সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম জনি, সৈয়দপুর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি শওকত চৌধুরী, কিশোরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন।

এই আসনেও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) সম্ভাব্যপ্রার্থী দলটির উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আবু সাইদ লিওন। গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি) পক্ষে এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশায় রয়েছে দলটির সৈয়দপুর উপজেলা শাখার সভাপতি মনোয়ার হোসেন। জাতীয় পার্টির পক্ষে সাবেক সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান আদেলের নাম উঠে এসেছে। তবে আসনটিতে গত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল স্বতন্ত্রপ্রার্থী বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক। তিনি জানালেন এবারও তিনি স্বতন্ত্র হিসাবে প্রার্থী হতে চান।

এছাড়া বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও ৪ বারের পৌর মেয়র মরহুম আমজাদ সরকারের ছেলে ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়াদ আরফান সরকার রানাও জানিয়েছেন, তিনি বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন। না পেলে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হবেন।
নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ায় জামায়াতের প্রার্থী হাফেজ মাওলানা আব্দুল মুনতাকিমের প্রচার  তুঙ্গে রয়েছে। তিনি বলেন, এই আসনের সকল মানুষ আমার। তাদের দুঃখ, কষ্ট যেন আমার। এই অনুভূতি নিয়ে আমি রাজনীতি করছি। সর্বোপরি সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তি প্রতিষ্ঠা হচ্ছে আমার ব্রত। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সম্ভাব্যপ্রার্থী আলহাজ শহিদুল ইসলাম। তিনিও দলীয় সভা সমাবেশ ছাড়াও মাঠ পর্যায়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

এনসিপির উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আবু সাইদ লিওন বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি সাম্য মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের রাজনীতি করে। দেশ থেকে চিরতরে বৈষম্য দূর করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছি। আগামী নির্বাচনে নীলফামারী-৪ আসনে বা নীলফামারী ৩ আসনের ন্যায় প্রার্থী হতে চান তিনি। তারুণ্যের ভাবনায় আগামীতে এ আসনকে এগিয়ে নিতে চাই।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী বেবি নাজনীন বলেন, বিগত ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার হয়েছি। বাধ্য হয়ে দেশের মায়া ছেড়ে প্রবাস জীবন কাটিয়েছি। আমি এই আসনের মেয়ে। তাই আবারও ফিরে এসেছি। এ আসনের মানুষজন আমার পরম আত্মীয়। মহান রাব্বুল আলামিন যদি সুযোগ দান করেন, তাহলে মুরুব্বিদের পরামর্শে তরুণদের সঙ্গে নিয়ে আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাব।

জনপ্রিয় সংবাদ

নীলফামারীতে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ইউনিটের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন-২০২৫ অনুষ্ঠিত

বিএনপিতে প্রার্থীর ছড়াছড়ি প্রচারে এগিয়ে জামায়াত

প্রকাশিত ১২:০৬:৫৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি জেলা নীলফামারী। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে তিস্তা নদীবিধৌত নীলফামারীর চারটি সংসদীয় আসনেই বইছে ভোটের হাওয়া। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী এলাকায় ইতোমধ্যে সরব হয়ে উঠেছেন। জুলাই আন্দোলনের পর ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নেই মাঠে।

তবে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনী মাঠে বিচরণে ক্রমেই জমে উঠছে ভোটের হাওয়া। এখন এসব সম্ভাব্যপ্রার্থী শহর, গ্রামসহ বিভিন্ন জনবহুল স্থান কিংবা সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ উঠোন বৈঠক করছেন। অপরদিকে ভোটের মাঠে উপস্থিতি জানাতে অনেকে সাঁটিয়েছেন ব্যানার-পোস্টার-ফেস্টুনসহ ডিজিটাল ব্যানার।

নীলফামারীর চারটি আসনে বিএনপি, নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জাতীয় পার্টিসহ  কিছু দল এখনো তাদের প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করেনি। তবে চারটি আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করায় জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে ইসলামী বাংলাদেশের প্রার্থীরা মাঠে এগিয়ে রয়েছেন। গণঅধিকার পরিষদের একটি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। তবে দলীয় মনোনয়ন ঘোষণা না হলেও বিএনপি, এনসিপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা বসে নেই। তারাও রীতিমতো প্রচার  চালিয়ে যাচ্ছেন।

নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) ॥ জাতীয় সংসদের তিনশ’ আসনের মধ্যে নীলফামারী-১ হলো ১২তম আসন। আসনটি ডোমার ও ডিমলা উপজেলা নিয়ে গঠিত। ডোমার উপজেলায় রয়েছে ১০টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা। ডিমলা উপজেলায় রয়েছে ১০টি ইউনিয়ন। মোট ২০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ভোটারসংখ্যা ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৯৮৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৩০ হাজার ২৫৯, মহিলা ২ লাখ ২৫ হাজার ৭২৫ এবং হিজরা ২জন। মোট ভোটারের মধ্যে ডোমার উপজেলায় ২ লাখ ১৪ হাজার ৯২৬ জন এবং ডিমলা উপজেলায় ২ লাখ ৪১ হাজার ৬০ জন।

জেলা নির্বাচন অফিস হতে প্রাপ্ত তথ্য মতে এই আসনে বিগত ১২টি নির্বাচনে প্রথম, পঞ্চম, অষ্টম, দশম একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিলেন। দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি, তৃতীয়, চতুর্থ, সপ্তম ও নবম সংসদে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিজয়ী হন।

নীলফামারী-১ আসনটিতে বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য দলের প্রচারে মাঠে রয়েছেন একক প্রার্থী। সেখানে বিএনপির প্রার্থী হয়ে একাধিকবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন। এবারও তিনি বিএনপির একক মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি কেন্দ্রীয় জেলা বিএনপির সদস্য এবং ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এ্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক।

অপরদিকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির মজলিসে শূরা সদস্য ও জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার দলঘোষিত একক প্রার্থী। প্রধান ওই দুই দলের দুই হেভিওয়েট মাঠে প্রচারে থাকায় অনেকটা জমে উঠেছে ভোটের হাওয়া। এছাড়া এই আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ডোমার উপজেলার সহসভাপতি আব্দুল জলিল এবং খেলাফত মজলিসের হাবিবুর রহমান দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে লে. কর্নেল (অব.) তছলিম উদ্দিন, ন্যাপের সভাপতি জেভেল গানির প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখনো চূড়ান্ত হয়নি এনসিপির প্রার্থী। তবে জনসমর্থন অর্জনে দলটির বিভিন্ন সভা-সমাবেশসহ সামাজিক কার্যক্রম চলমান আছে বলে জানান দলটির জেলা সমন্বয়ক আব্দুল মজিদ।

বিএনপির একক সম্ভাব্যপ্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে দীর্ঘদিন দেশে থাকতে পারিনি। এবার দেশ ও এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চাই। তিনি বলেন, এবার নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার উঠবে। কারণ, সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি সরকারি দল হবে। আর সরকারদলীয় এমপি স্বাভাবিকভাবে এলাকার ইতিবাচক উন্নয়নে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।

জামায়াত প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার জানান, নির্বাচনী এলাকার সাধারণ মানুষের চাপে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। তাই জয়ের বিষয়ে আশাবাদী। নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়নে দল-মত ভুলে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চান তিনি। এ আসনে প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে বড় ফ্যাক্টর তিস্তাপাড়ের ভোটার। এ ভোটাররাই যে প্রার্থীকে সমর্থন দেবেন, জয়টা তার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তবে অনেক আগে থেকেই বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা তিস্তাপাড়ের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন। এবার হিন্দু ভোটারদের অনেকে জামায়াতের প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছেন। এ কারণে সাধারণ ভোটাররা ভোটের হিসাব-নিকাশ কষতে পারছেন না। তবে নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসবে, হিসাব-নিকাশটা আরও সহজ হবে।

 

নীলফামারী-২ (সদর) ॥ জেলা সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন এবং একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা নিয়ে জাতীয় সংসদের ১৩তম আসন নীলফামারী-২ (সদর)। আসনটির মোট ভোটার তিন লাখ ৮০ হাজার ৯১৭ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ৯০ হাজার ৬৩৮ ও পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯০ হাজার ২৭৭ এবং তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) ভোটার ২ জন। এর আগে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিল তিন লাখ ৫৮ হাজার ৭৯১ জন। সে হিসাবে ভোটার বৃদ্ধি পেয়েছে ২২ হাজার ১২৬।

এ আসনে ২০০১ থেকে ২০২৪ সালের মোট পাঁচটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে টানা নির্বাচিত হন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন আসাদুজ্জামান নূর। ৫ আগস্টের পর তার বিরুদ্ধে চারটি হত্যা মামলা ও দুদকের একটি মামলা দায়ের হয়েছে। বিগত ১২টি নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে, এ আসনে আওয়ামী লীগ সাতবার নির্বাচিত হয়েছে। এছাড়া জাতীয় পার্টি তিনবার, বিএনপি একবার, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) একবার। এ আসনে জামায়াত আগে থেকেই শক্তিশালী ছিল।

আওয়ামী লীগের পতনের পর জামায়াতের আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছে। এ আসনে বিএনপি ভালো কিছু করতে চাইলে জামায়াতের সঙ্গে তাদের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে বলে সাধারণ ভোটারদের মতপ্রকাশ করতে দেখা যায়।
তবে জামায়াতের প্রচারের সঙ্গে বিএনপির প্রচার  এখন পাড়া মহল্লার উঠানে উঠানে শুরু হয়েছে। নতুন আধুনিক মডেল জেলা সদর উপহার দিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তবে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন কে পাবেন তা এখনো অধরা থেকে গেছে। এদিকে আসনটিতে এবার জামায়াতের দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আল-ফারুক আব্দুল লতিফকে। তিনি প্রবীণ আইনজীবী জেলা জামায়াতের সাবেক আমির মরহুম আব্দুল লতিফের ছেলে।

এদিকে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম হাছিবুল ইসলাম হাসিবকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজ কল্যাণ সম্পাদক অধ্যাপক আবু হেলাল এই আসনের সম্ভাব্যপ্রার্থী। অপরদিকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা গোলাম রব্বানী ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামী বাংলাদেশের মুফতি আবদুল্লাহ আল মঞ্জুরকে দল থেকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী রয়েছেন দলটির জেলা কমিটির সদস্যসচিব সাজ্জাদ পারভেজ। এনসিপির পক্ষে প্রার্থী চূূড়ান্তের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী আব্দুল মজিদ।

অপরদিকে বিএনপিতে রয়েছে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। তাদের মধ্যে প্রচারে উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে রয়েছেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ.এইচ.এম সাইফুল্লাহ রুবেল। ইতোমধ্যে তিনি নেমেছেন গণসংযোগের মাঠে। তিনি ছাড়াও এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশায় রয়েছেন দুই আমেরিকা প্রবাসী। তাদের মধ্যে একজন হলেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সামসুজ্জামান এবং অপরজন সাবেক ছাত্রদল নেতা ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাবেরুল ইসলাম লিটন। এর পাশাপাশি জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলমগীর সরকার এবং জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী আখতারুজ্জামান জুয়েল।

জামায়াত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আল ফারুক আব্দুল লতিফ ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি বলে তার দলীয় মনোনয়ন এবার বিজয়ের দিকে আশার হাত বাড়িয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ভোটে জনগণের রায়ে নির্বাচিত হলে সকলকে সঙ্গে নিয়ে জেলা সদর আসনটির উন্নয়ন ঘটাতে চাই। এই জেলা সদরটি উন্নয়নে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী এএইচএম সাইফুল্লাহ রুবেল। তিনি বলেন, উন্নয়ন বঞ্চিত নীলফামারী সদর আসনটি নতুন রূপে ঢেলে সাজাতে চাই। তাই নতুন রূপে বিএনপির নেতাকর্মী তারুণ্যদীপ্ত হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি।
একইভাবে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্যপ্রার্থী সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, এবার জাতীয় পার্টি কোনো জোটে যাবে না। এ আসনটি জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হলেও জোটগত কারণে আওয়ামী লীগকে ছেড়ে দিতে হয়েছিল। এবার তা হচ্ছে না। এজন্য ভোটারদের বহুদিনের ইচ্ছা পূরণ হবে। শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে ভোটাররা তাকেই বেছে নেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বিএনপির সম্ভাব্যপ্রার্থী সাবেক জেলা সভাপতি আখম আলমগীর সরকার বলেন, দলের দুর্দিনে তিনি হাল ধরে রেখেছিলেন। এ কারণে দল তাকে নিরাশ করবে না।  জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মীর সেলিম ফারুক জানান, বিগত দিনে জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করায় আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী ছিল না। এবার তারুণ্যদীপ্ত বিএনপি গড়ে উঠেছে।

 

নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) ॥ জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে নীলফামারী-৩ ১৪ নম্বর আসন। জলঢাকা উপজেলার ১১ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে আসনটি গঠিত। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নীলফামারী-৩ আসনে প্রথম, পঞ্চম, দশম ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়। দ্বিতীয় সংসদে মুসলিম লীগ, তৃতীয়, সপ্তম, অষ্টম সংসদে জামায়াতে ইসলামী, নবম ও একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টি এবং দ্বাদশ নির্বাচনে মহাজোটের জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত মেজর রানা মো. সোহেলকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদ্দাম হোসেন পাভেল নির্বাচিত হন। বর্তমানে বিভিন্ন মামলায় তিনিও কারাগারে বন্দী। গত ৫ আগস্টের পর উপজেলাটি এখন আওয়ামী লীগ শূন্য। এখন বিএনপি ও জামায়াত এবং এনসিপি ও গণঅধিকারের নেতাকর্মীরা প্রাণচাঞ্চল্য নিয়ে রয়েছেন।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৯০ হাজার ৮১৩ জন। নারী ভোটার ১ লাখ ৪৩ হাজার ১৮, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ৭৯৩ ও তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) ভোটার ২ জন। এর আগে দ্বাদশ  সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিল  দুই লাখ ৭৫ হাজার ৬৯৮ জন।
১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে আসনটিতে নির্বাচিত হন জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী। এরপর থেকে এলাকাটি পরিচিত হয় জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে। সেটি ২০০৮ সালে হাতছাড়া হয় আওয়ামী লীগের মহাজোটের কাছে। মহাজোটের জোরে সেবার নির্বাচিত হন জাতীয় পাটির প্রার্থী। হারানো আসন উদ্ধারে এবার রংপুর মহানগর জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি ও জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ্ সালাফীকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি।

বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন জেলা বিএনপির সদস্য বিশিষ্ট শিল্পপতি টানা দুইবারের উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ সৈয়দ আলী ও অপরজন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম। তবে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি দল থেকে বহিষ্কৃত ফাহমিদ ফায়সাল কমেট চেšধুরী, তার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনিও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী।

এই আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপির) প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। তবে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে প্রার্থী হতে পারেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আবু সাঈদ লিওন। তার বাড়ি এই উপজেলায়। গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি) পক্ষে এই আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সোহাগ হোসাইন বাবু। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমজাদ হোসেন সরকার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের শরিফুল ইসলাম ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামী বাংলাদেশের ঘোষিত প্রার্থী হলেন মাওলানা জাফর আহমদ। জাতীয় পার্টির পক্ষে সম্ভাব্যপ্রার্থী সাবেক এমপি মেজর (অব.) রানা মহম্মদ সোহেল।

জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সালাফি বলেন, আসনটি জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি। এর আগে এই আসন থেকে জামায়াতের প্রার্থী তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ দিনের ভোট যদি রাতে না করত, আগের চারটি সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীই নির্বাচিত হতেন। তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর মানুষের চিন্তা-চেতনারও বিপ্লব ঘটেছে। গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতিটি স্থানে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। সামনে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এ আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পারব ইনশাআল্লাহ। বিএনপির সম্ভাব্যপ্রার্থী আলহাজ সৈয়দ আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার অসহায় মানুষজনের পাশে থেকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। টানা দুইবার উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে ভোটারা আমাকে বিজয়ী করেছিল। আমি আশা করি বিএনপি আমাকে মনোনয়ন দিলে আসনটি আমি দলকে উপহার দিতে পারব।

অপরদিকে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ স¤পাদক ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মইনুল ইসলাম বলেন, বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। দল মনোনয়ন দিলে ভোটারদের রায়ে জয়লাভ করব।
গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি) এই আসনে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সোহাগ হোসাইন বাবু মনোনয়ন পেয়েছেন। তার বাড়ি জলঢাকায়। তিনি বলেন, জলঢাকা এলাকায় তাদের দলের কর্মকা- শক্তিশালী। এলাকার মানুষজন তাকে সমর্থন দিয়েছেন। তিনি আশাবাদী, নির্বাচিত হলে অবহেলিত জলঢাকার উন্নয়ন করে দৃশ্যপট পরিবর্তন ঘটনাতে সক্ষম হব।

এদিকে এই আসনে এনসিপির রাজনৈতিক কর্মসূচি বেশ জোরেশোরেই হয়ে থাকে। বেশির ভাগ তরুণ রয়েছে দলটির সঙ্গে। এবার এলাকায় দৃশ্যমান উন্নয়ন করতে হলে প্রয়োজন তরুণ নেতৃত্ব অনেকে তা মনে করছেন। চূড়ান্ত ঘোষণা না হলেও নীলফামারী-৩ ও নীলফামারী-৪ দুটি আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপির) সম্ভাব্য প্রার্থী হবেন দলটির উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আবু সাইদ লিওন। এমনটি জানালেন দলটির জেলা সমন্বয়ক আব্দুল মজিদ।

 

নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ) ॥ বিমানের আকাশ পথে উত্তরবঙ্গের প্রবেশ দ্বার হিসেবে পরিচিত রেলের শহর সৈয়দপুর উপজেলা। নীলফামারীর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আসন এটি। সৈয়দপুর ঘিরে যে কোনো নির্বাচন এলেই উঠে আসে উর্দুভাষী (অবাঙালি) ভোটার বড় নিয়ামক। অপর দিকে ভিক্ষুকমুক্ত উপজেলা ছাড়াও কিশোরগঞ্জে সমতল মাটিতে চাষ হচ্ছে চা। রয়েছে অসংখ্য পোল্টিশিল্প ও কৃষিতে আগাম আলু উৎপাদনের সুতিকাগার।

এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৯৫১। নারী ভোটার ২ লাখ ২২ হাজার ৯৬৮, পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২৩ হাজার ৯৭৯ ও তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) ভোটার ৫ জন। এর মধ্যে সৈয়দপুরে মোট ভোটার ২ লাখ ২৫ হাজার ২৯৮ জনের সঙ্গে উর্দুভাষী (অবাঙালী) ভোটার রয়েছে ৭৮ হাজার ৫৫জন। কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ২১ হাজার ৬৫৩ জন।

জামায়াতে ইসলামীর দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সৈয়দপুর উপজেলা শাখার আমির হাফেজ মাওলানা আব্দুল মুনতাকিম। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাহ্দী হাসান, ইসলামী আন্দোলনের আলহাজ শহিদুল ইসলাম ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামীর মাওলানা রেজাউল করিম। তবে বিএনপি, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দল এখনো প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেনি।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবিশিষ্ট কণ্ঠশিল্লী বেবী নাজনীন, সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিলকিস ইসলাম প্রমুখ। অন্যরা হলেন- সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুল গফুর সরকার, উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এস এম ওবায়দুর রহমান, সাবেক ছাত্রদল নেতা সৈয়দপুর জেলা বিএনপির সদস্য সহকারী অধ্যাপক শওকত হায়াৎ শাহ্, সৈয়দপুর জেলা বিএনপির সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম জনি, সৈয়দপুর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি শওকত চৌধুরী, কিশোরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন।

এই আসনেও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) সম্ভাব্যপ্রার্থী দলটির উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আবু সাইদ লিওন। গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি) পক্ষে এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশায় রয়েছে দলটির সৈয়দপুর উপজেলা শাখার সভাপতি মনোয়ার হোসেন। জাতীয় পার্টির পক্ষে সাবেক সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান আদেলের নাম উঠে এসেছে। তবে আসনটিতে গত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল স্বতন্ত্রপ্রার্থী বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক। তিনি জানালেন এবারও তিনি স্বতন্ত্র হিসাবে প্রার্থী হতে চান।

এছাড়া বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও ৪ বারের পৌর মেয়র মরহুম আমজাদ সরকারের ছেলে ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়াদ আরফান সরকার রানাও জানিয়েছেন, তিনি বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন। না পেলে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হবেন।
নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ায় জামায়াতের প্রার্থী হাফেজ মাওলানা আব্দুল মুনতাকিমের প্রচার  তুঙ্গে রয়েছে। তিনি বলেন, এই আসনের সকল মানুষ আমার। তাদের দুঃখ, কষ্ট যেন আমার। এই অনুভূতি নিয়ে আমি রাজনীতি করছি। সর্বোপরি সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তি প্রতিষ্ঠা হচ্ছে আমার ব্রত। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সম্ভাব্যপ্রার্থী আলহাজ শহিদুল ইসলাম। তিনিও দলীয় সভা সমাবেশ ছাড়াও মাঠ পর্যায়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

এনসিপির উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আবু সাইদ লিওন বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি সাম্য মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের রাজনীতি করে। দেশ থেকে চিরতরে বৈষম্য দূর করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছি। আগামী নির্বাচনে নীলফামারী-৪ আসনে বা নীলফামারী ৩ আসনের ন্যায় প্রার্থী হতে চান তিনি। তারুণ্যের ভাবনায় আগামীতে এ আসনকে এগিয়ে নিতে চাই।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী বেবি নাজনীন বলেন, বিগত ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার হয়েছি। বাধ্য হয়ে দেশের মায়া ছেড়ে প্রবাস জীবন কাটিয়েছি। আমি এই আসনের মেয়ে। তাই আবারও ফিরে এসেছি। এ আসনের মানুষজন আমার পরম আত্মীয়। মহান রাব্বুল আলামিন যদি সুযোগ দান করেন, তাহলে মুরুব্বিদের পরামর্শে তরুণদের সঙ্গে নিয়ে আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাব।