০৪:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫

সাত বছরেও এসিসিএফ ব্যাংকের আমানতের টাকা ফেরত পাইনি গ্রাহকরা

ইসলামি শরিয়া ভিত্তিক পরিচালিত আজিজ কো-অপারেটিপ কর্মাস এন্ড ফাইন্যান্স ব্যাংক (এসিসিএফ) এর ম্যানেজার জাহিদুজ্জামান শাহ ফকিরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্বসাধের অভিযোগ উঠেছে। সে নীলফামারী সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের ফকির পাড়া গ্রামের জাকির হোসেন শাহর ছেলে।

ব্যাংকটি জেলা শহরের কিচেন মার্কেটস্থ এলাকা সাব্বির ভিলার দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত। ভুক্তভোগীরা সেখানে মাথা ঠুঁকে কাঁন্না করে বিভিন্ন অফিস আদালতে অভিযোগ দায়ের করেও কোন সুরাহা মেলেনি।

কথিত ব্যাংকটি ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও মুল কার্যক্রম চালু হয় ২০১৮ সালে। তিনি প্রথমে আলতাফ হোসেনসহ ছয়জন কর্মকর্তা ও কর্মচারি নিয়ে কার্যক্রম চালু করেন। ওই সময় ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যা ছিল প্রায় পাঁচশতাধিক।

আকর্ষণীয় মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে দাবি করেন ভুক্তভোগীরা। আইনি জটিলতা থাকায় সাত বছর পেরিয়ে গেলেও আমানতের টাকা আজও ফেরত পাইনি দাবি ভুক্তভোগিদের।

ব্যাংকের বাসার মালিক ও ভুক্তভোগী সাব্বির আহমেদ বলেন, “আমি ম্যানেজারের লোভনিও কথায় বেশী লাভের আশায় সাত বছর হলো ২ লাখ টাকা জমা রেখেছি। প্রথমদিকে তিন, চার মাসের লাভের টাকা দিলেও এখন বাসা ভাড়াও পাচ্ছিনা,আামানতের টাকারও হদিস নাই, ম্যানেজার ফোনও ধরে না। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন লাভ হয়নি। তিনি বলেন, এমন পাঁচশতাধিক গ্রাহক এসিসিএফ ব্যাংকে টাকা রেখে পথে বসেছে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গ্রাহক জানান, “সে প্রতিবেশী হওয়ায় তার কথার ওপর ভিত্তি করে ব্যাংকে ৮ লাখ টাকা আমানত রেখেছি। এখন মুনাফাও নাই আসল টাকাও নাই। প্রায় ৪-৫ বছর ধরে পিছনে পিছনে ঘুরেও একটি টাকা তুলতে পারিনি। শুধু তাই নয়, স্থানীয় র‌্যাব অফিস, সমবায় অফিস, ডিসি অফিস, সদর থানায় ও এসপি অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন সমাধান মেলেনি। তার বিরুদ্ধে আদালতে (কোর্টে) দু,একজন গ্রাহক মামলা করেছে, কিন্ত কি হবে জানিনা।”

মাসুদ আলম নামের একজন গ্রাহক বলেন, “অধিক মুনাফার আশায় শত শত গ্রাহক ম্যানেজারের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আমানত রাখেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে গ্রাহকরা আমানতের টাকা চাইলে, ফেরত দিতে গরিমসি করেন। এরপর গ্রাহকরা খবর পেয়ে টাকার জন্য অফিসে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে ব্যাংক বন্ধ করে গা ঢাকা দেন ম্যানেজার জাহিদ। সে এখন আর ফোনও ধরেন না।”

একই ব্যাংকের গ্রাহক শামিম জানান, “লাভের আশায় আমরা তিন ভাই মিলে প্রায় ৮ লাখ টাকা ব্যাংকে আমানত রাখি। কিন্ত হঠাৎ ব্যাংকটির সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে গা ঢাকা দেয় ম্যানেজার জাহিদ। ফলে গ্রাহকদের সন্দেহ হলে, সরেজমিনে এসে দেখি ঘটনা সত্য ও ব্যাংক তালাবন্ধ। বর্তমানে আইনের আশ্রয় নিয়েও কোন ফলাফল পাচ্ছি না।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংকের একজন কর্মচারি জানান, “বেশী মুনাফার লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়ে ম্যানেজার নিজের নামে রাখতেন। গ্রাহকরা এবিষয়ে কিছুই জানতো না। এরপর ব্যাংকের কয়েকজন গ্রাহক তাদের হিসাব থেকে টাকা তুলতে এসে দেখে তাদের নামে টাকা নেই, তখনই প্রতারণার বিষয়টি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর গ্রাহকরা টাকা ফেরত নিতে এসে দেখে ব্যাংকটি তালাবন্ধ।”

অভিযুক্ত ব্যাংকের ম্যানেজার জাহিদুজ্জামান শাহ এর মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। জানতে চাইলে জেলা সমবায় কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, “আমার যতটুকু জানি সারাদেশে এধরণের ব্যাংকের কোনও নিবন্ধন বা রেজিষ্ট্রেশন নেই। পুরোটাই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গালী দেখিয়ে ঋণদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল কথিত ব্যাংকের ম্যানেজার জাহিদুজ্জান। যা সমবায় আইনে দন্ডীয় অপরাধ।” এ ব্যাপারে, জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান, “জাহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন।”

জনপ্রিয় সংবাদ

নীলফামারীতে ট্রেনের ধাক্কায় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মৃত্যু

সাত বছরেও এসিসিএফ ব্যাংকের আমানতের টাকা ফেরত পাইনি গ্রাহকরা

প্রকাশিত ০১:১১:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

ইসলামি শরিয়া ভিত্তিক পরিচালিত আজিজ কো-অপারেটিপ কর্মাস এন্ড ফাইন্যান্স ব্যাংক (এসিসিএফ) এর ম্যানেজার জাহিদুজ্জামান শাহ ফকিরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্বসাধের অভিযোগ উঠেছে। সে নীলফামারী সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের ফকির পাড়া গ্রামের জাকির হোসেন শাহর ছেলে।

ব্যাংকটি জেলা শহরের কিচেন মার্কেটস্থ এলাকা সাব্বির ভিলার দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত। ভুক্তভোগীরা সেখানে মাথা ঠুঁকে কাঁন্না করে বিভিন্ন অফিস আদালতে অভিযোগ দায়ের করেও কোন সুরাহা মেলেনি।

কথিত ব্যাংকটি ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও মুল কার্যক্রম চালু হয় ২০১৮ সালে। তিনি প্রথমে আলতাফ হোসেনসহ ছয়জন কর্মকর্তা ও কর্মচারি নিয়ে কার্যক্রম চালু করেন। ওই সময় ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যা ছিল প্রায় পাঁচশতাধিক।

আকর্ষণীয় মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে দাবি করেন ভুক্তভোগীরা। আইনি জটিলতা থাকায় সাত বছর পেরিয়ে গেলেও আমানতের টাকা আজও ফেরত পাইনি দাবি ভুক্তভোগিদের।

ব্যাংকের বাসার মালিক ও ভুক্তভোগী সাব্বির আহমেদ বলেন, “আমি ম্যানেজারের লোভনিও কথায় বেশী লাভের আশায় সাত বছর হলো ২ লাখ টাকা জমা রেখেছি। প্রথমদিকে তিন, চার মাসের লাভের টাকা দিলেও এখন বাসা ভাড়াও পাচ্ছিনা,আামানতের টাকারও হদিস নাই, ম্যানেজার ফোনও ধরে না। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন লাভ হয়নি। তিনি বলেন, এমন পাঁচশতাধিক গ্রাহক এসিসিএফ ব্যাংকে টাকা রেখে পথে বসেছে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গ্রাহক জানান, “সে প্রতিবেশী হওয়ায় তার কথার ওপর ভিত্তি করে ব্যাংকে ৮ লাখ টাকা আমানত রেখেছি। এখন মুনাফাও নাই আসল টাকাও নাই। প্রায় ৪-৫ বছর ধরে পিছনে পিছনে ঘুরেও একটি টাকা তুলতে পারিনি। শুধু তাই নয়, স্থানীয় র‌্যাব অফিস, সমবায় অফিস, ডিসি অফিস, সদর থানায় ও এসপি অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন সমাধান মেলেনি। তার বিরুদ্ধে আদালতে (কোর্টে) দু,একজন গ্রাহক মামলা করেছে, কিন্ত কি হবে জানিনা।”

মাসুদ আলম নামের একজন গ্রাহক বলেন, “অধিক মুনাফার আশায় শত শত গ্রাহক ম্যানেজারের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আমানত রাখেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে গ্রাহকরা আমানতের টাকা চাইলে, ফেরত দিতে গরিমসি করেন। এরপর গ্রাহকরা খবর পেয়ে টাকার জন্য অফিসে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে ব্যাংক বন্ধ করে গা ঢাকা দেন ম্যানেজার জাহিদ। সে এখন আর ফোনও ধরেন না।”

একই ব্যাংকের গ্রাহক শামিম জানান, “লাভের আশায় আমরা তিন ভাই মিলে প্রায় ৮ লাখ টাকা ব্যাংকে আমানত রাখি। কিন্ত হঠাৎ ব্যাংকটির সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে গা ঢাকা দেয় ম্যানেজার জাহিদ। ফলে গ্রাহকদের সন্দেহ হলে, সরেজমিনে এসে দেখি ঘটনা সত্য ও ব্যাংক তালাবন্ধ। বর্তমানে আইনের আশ্রয় নিয়েও কোন ফলাফল পাচ্ছি না।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংকের একজন কর্মচারি জানান, “বেশী মুনাফার লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়ে ম্যানেজার নিজের নামে রাখতেন। গ্রাহকরা এবিষয়ে কিছুই জানতো না। এরপর ব্যাংকের কয়েকজন গ্রাহক তাদের হিসাব থেকে টাকা তুলতে এসে দেখে তাদের নামে টাকা নেই, তখনই প্রতারণার বিষয়টি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর গ্রাহকরা টাকা ফেরত নিতে এসে দেখে ব্যাংকটি তালাবন্ধ।”

অভিযুক্ত ব্যাংকের ম্যানেজার জাহিদুজ্জামান শাহ এর মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। জানতে চাইলে জেলা সমবায় কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, “আমার যতটুকু জানি সারাদেশে এধরণের ব্যাংকের কোনও নিবন্ধন বা রেজিষ্ট্রেশন নেই। পুরোটাই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গালী দেখিয়ে ঋণদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল কথিত ব্যাংকের ম্যানেজার জাহিদুজ্জান। যা সমবায় আইনে দন্ডীয় অপরাধ।” এ ব্যাপারে, জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান, “জাহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন।”