০২:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নীলফামারীতে আঙুর চাষে মামুনের চোখে সোনালি স্বপ্ন

উত্তরবঙ্গের জেলা নীলফামারীতে একসময় আঙুর চাষের ভাবনা ছিল অচেনা এক ধারণা। কিন্তু এ.আর মামুন নার্সারি উদ্যোক্তা মামুনের উদ্যোগে জেলায় এখন পরীক্ষামূলকভাবে মিষ্টি আঙুর চাষ হচ্ছে তার নিজস্ব নার্সারিতে।

থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল, সবুজ আর বেগুনি আঙুর। খেতেও সুমিষ্ট ও রসাল। নীলফামারীর কচুঁকাটার এ.আর.মামুন নার্সারিতে এসব আঙুর দেখতে ভিড় করছেন বিভিন্ন দর্শনার্থীরা।

দেশীয় আঙুর মানেই টক, এমন ধারণা পাল্টে দিয়েছেন নীলফামারীর কৃষি উদ্যোক্তা এ.আর. মামুন। দীর্ঘ তিন বছরের সাধনায় সফল হয়েছেন মিস্টি আঙুর চাষে। ছয় থেকে সাতটি জাতের সুমিষ্ট, রঙিন আর রসাল আঙুর থোকা ঝুলছে মামুনের আঙুরের মাচায়। এসব জাত ছড়িয়ে দিয়ে দেশকে আঙুরের আমদানি নির্ভরতা থেকে বাঁচাতে চান এই যুবক। নতুন নতুন উদ্যোক্তার হাত ধরে নীলফামারীর এই আঙুর সারাদেশে ছড়িয়ে যাবে, এমন আশা তার।

এসব আঙুর চাষি পর্যায়ে ছড়িয়ে গেলে নীলফামারীসহ সারাদেশের কৃষিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। কৃষকদের আয়ের পাশাপাশি স্থানীয় বাজারেও আঙুরের চাহিদা পূরণ করবে।

মামুনের আঙুর বাগান কৌতূহলী করেছে আশপাশের মানুষকে। আশপাশের মানুষ ছাড়াও বাগান দেখতে আসছেন দূর-দূরান্তের মানুষ। বাগান দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন কেউ কেউ এ বিষয়ে দর্শনার্থী মিঠুন চন্দ্র ঢাকা মেইলকে বলেন, অনেকের কাছে গল্প শুনেছি কচুকাটায় যে নার্সারি আছে এখানে পরীক্ষামূলক আঙুর চাষ করেছে। এর আগে অনলাইনে বিভিন্ন স্থানের কথা শুনেছি, নিজ জেলায় আঙুর চাষ হচ্ছে কথা শুনে দেখতে আসলাম দেখে খুব ভালো লাগল। আমি চাই এখান থেকে চারা সংগ্রহ করে বাড়িতে লাগালে হবে কী না এটি পরামর্শ করার জন্য আসলাম।

নার্সারিতে আঙুরের পরিচর্যা করেন জয় সরকার তিনি ঢাকা মেইলকে জানান, আঙুর হচ্ছে বিদেশি ফল এটি আমরা পরীক্ষামূলক ভাবে চাষাবাদ করছি। সেক্ষেত্রে এই গাছ থেকে শুরু করে সব কিছু খুব যত্ন সহকারে পরিচর্যা করতে হয়। বিভিন্ন ধরনের নতুন রোগে আক্রান্ত হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হয়, সঠিক সময় সঠিক কীটনাশক সারসহ পানি ব্যবস্থাপনার দিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। সঠিক পরিচর্যা হাওয়ার ফলে খুব ভালো একটি ফলাফল পেয়েছি আমরা। বাইরের যদি কেউ চারা রোপণ করে এবং আমাদের মতোই নিয়ম অনুযায়ী পরিচর্যা করে তাহলে তারাও ভালো একটি ফলাফল পাবে।

এ বিষয়ে নার্সারি স্বত্বাধিকারী এ আর মামুন ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি প্রায় তিন থেকে চার বছর ধরে মিষ্টি আঙুর চাষের চেষ্টা করে আসছি। বারবার বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি এর পরে সেসব সমস্যার সমাধান খুঁজে  বের করে পুনরায় চারা রোপণ করি। সবশেষ গত সেপ্টেম্বরে ২২টি জাতের আঙুরের চারা রোপণ করেছি। এর মধ্যে ছয়-সাতটি জাতের ভালো ফলন হয়েছে এবং সেই জাতগুলোতে কোনো টক নাই।

মামুন আরও বলেন, প্রতিটি গাছে প্রায় ২০ থেকে ৩০টি করে থোকা ধরেছে। প্রতিটি থোকায় তিনশ থেকে পাঁচশ গ্রাম করে আঙুর ধরেছে। অনেক পরিশ্রম আর সাধনায় নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে সফল হয়েছে। মামুনের আশা বিদেশি ফল আঙুরের আমদানি নির্ভরতা কমাতে এসব আঙুর সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে চায়।

বাজারে যে বিদেশি ফল সমূহ পাওয়া যায় সেসব ফল নিজ দেশে সরবরাহ করার নেশা থেকে মামুনের নেশা নতুন নতুন গাছ বিভিন্ন ধরনের ফল নিয়ে গবেষণা করা। সেই নেশা থেকে আঙুরের পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করে সফলতা পেয়েছে এই উদ্যোক্তা।

মামুনের হাত ধরে আঙুরে সমৃদ্ধ হবে নীলফামারী জেলা। ছড়িয়ে যাবে সারাদেশে, এমন প্রত্যাশা কৃষি বিভাগের। সে বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ডা. এস.এম. আবু বকর সাইফুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, এ জেরায় যেসব এলাকায় ফল চাষ সমূহ হচ্ছে সেসব এলাকার মাটি বেলে দো-আশ মাটি। এসব মাটিতে ফল চাষ হাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে ফল গাছ কিন্তু জমানো পানি সহ্য করতে পারে না। এই মাটিতে বৃষ্টির পানি বা সেচ দেওয়া পানি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চলে যায় এ জন্য ফল গাছগুলোর কোনো ধরনের সমস্য হচ্ছে না। নীলফামারীতে কমলা, মাল্টার পাশাপাশি এখন আঙুর চাষাবাদ হচ্ছে এবং শিগগিরই এই আঙুর বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হবে এবং সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে।

২০০১ সালে এক বিঘা জমিতে দিয়ে নার্সারির যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে এর ব্যাপ্তি ছাড়িয়ে উনপঞ্চাশ বিঘায়। এখানে পরীক্ষিত উন্নত জাতের কমলা, মাল্টা ছাড়াও রাম্বুটান, পার্সিমন কিংবা এভাকাডোর মতো দেশি-বিদেশি জাতের অন্তত ১২শত রকমের ফলজ, বনজ ও ওষধি গাছের চারা রয়েছে এ.আর. মামুন নার্সারিতে। বৃক্ষরোপণে বিশেষ অবদান রাখায় ২০২৩ সালে জাতীয় পুরস্কার পান তিনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

নীলফামারীতে রব্বানী হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন

নীলফামারীতে আঙুর চাষে মামুনের চোখে সোনালি স্বপ্ন

প্রকাশিত ০৮:১৪:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

উত্তরবঙ্গের জেলা নীলফামারীতে একসময় আঙুর চাষের ভাবনা ছিল অচেনা এক ধারণা। কিন্তু এ.আর মামুন নার্সারি উদ্যোক্তা মামুনের উদ্যোগে জেলায় এখন পরীক্ষামূলকভাবে মিষ্টি আঙুর চাষ হচ্ছে তার নিজস্ব নার্সারিতে।

থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল, সবুজ আর বেগুনি আঙুর। খেতেও সুমিষ্ট ও রসাল। নীলফামারীর কচুঁকাটার এ.আর.মামুন নার্সারিতে এসব আঙুর দেখতে ভিড় করছেন বিভিন্ন দর্শনার্থীরা।

দেশীয় আঙুর মানেই টক, এমন ধারণা পাল্টে দিয়েছেন নীলফামারীর কৃষি উদ্যোক্তা এ.আর. মামুন। দীর্ঘ তিন বছরের সাধনায় সফল হয়েছেন মিস্টি আঙুর চাষে। ছয় থেকে সাতটি জাতের সুমিষ্ট, রঙিন আর রসাল আঙুর থোকা ঝুলছে মামুনের আঙুরের মাচায়। এসব জাত ছড়িয়ে দিয়ে দেশকে আঙুরের আমদানি নির্ভরতা থেকে বাঁচাতে চান এই যুবক। নতুন নতুন উদ্যোক্তার হাত ধরে নীলফামারীর এই আঙুর সারাদেশে ছড়িয়ে যাবে, এমন আশা তার।

এসব আঙুর চাষি পর্যায়ে ছড়িয়ে গেলে নীলফামারীসহ সারাদেশের কৃষিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। কৃষকদের আয়ের পাশাপাশি স্থানীয় বাজারেও আঙুরের চাহিদা পূরণ করবে।

মামুনের আঙুর বাগান কৌতূহলী করেছে আশপাশের মানুষকে। আশপাশের মানুষ ছাড়াও বাগান দেখতে আসছেন দূর-দূরান্তের মানুষ। বাগান দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন কেউ কেউ এ বিষয়ে দর্শনার্থী মিঠুন চন্দ্র ঢাকা মেইলকে বলেন, অনেকের কাছে গল্প শুনেছি কচুকাটায় যে নার্সারি আছে এখানে পরীক্ষামূলক আঙুর চাষ করেছে। এর আগে অনলাইনে বিভিন্ন স্থানের কথা শুনেছি, নিজ জেলায় আঙুর চাষ হচ্ছে কথা শুনে দেখতে আসলাম দেখে খুব ভালো লাগল। আমি চাই এখান থেকে চারা সংগ্রহ করে বাড়িতে লাগালে হবে কী না এটি পরামর্শ করার জন্য আসলাম।

নার্সারিতে আঙুরের পরিচর্যা করেন জয় সরকার তিনি ঢাকা মেইলকে জানান, আঙুর হচ্ছে বিদেশি ফল এটি আমরা পরীক্ষামূলক ভাবে চাষাবাদ করছি। সেক্ষেত্রে এই গাছ থেকে শুরু করে সব কিছু খুব যত্ন সহকারে পরিচর্যা করতে হয়। বিভিন্ন ধরনের নতুন রোগে আক্রান্ত হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হয়, সঠিক সময় সঠিক কীটনাশক সারসহ পানি ব্যবস্থাপনার দিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। সঠিক পরিচর্যা হাওয়ার ফলে খুব ভালো একটি ফলাফল পেয়েছি আমরা। বাইরের যদি কেউ চারা রোপণ করে এবং আমাদের মতোই নিয়ম অনুযায়ী পরিচর্যা করে তাহলে তারাও ভালো একটি ফলাফল পাবে।

এ বিষয়ে নার্সারি স্বত্বাধিকারী এ আর মামুন ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি প্রায় তিন থেকে চার বছর ধরে মিষ্টি আঙুর চাষের চেষ্টা করে আসছি। বারবার বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি এর পরে সেসব সমস্যার সমাধান খুঁজে  বের করে পুনরায় চারা রোপণ করি। সবশেষ গত সেপ্টেম্বরে ২২টি জাতের আঙুরের চারা রোপণ করেছি। এর মধ্যে ছয়-সাতটি জাতের ভালো ফলন হয়েছে এবং সেই জাতগুলোতে কোনো টক নাই।

মামুন আরও বলেন, প্রতিটি গাছে প্রায় ২০ থেকে ৩০টি করে থোকা ধরেছে। প্রতিটি থোকায় তিনশ থেকে পাঁচশ গ্রাম করে আঙুর ধরেছে। অনেক পরিশ্রম আর সাধনায় নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে সফল হয়েছে। মামুনের আশা বিদেশি ফল আঙুরের আমদানি নির্ভরতা কমাতে এসব আঙুর সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে চায়।

বাজারে যে বিদেশি ফল সমূহ পাওয়া যায় সেসব ফল নিজ দেশে সরবরাহ করার নেশা থেকে মামুনের নেশা নতুন নতুন গাছ বিভিন্ন ধরনের ফল নিয়ে গবেষণা করা। সেই নেশা থেকে আঙুরের পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করে সফলতা পেয়েছে এই উদ্যোক্তা।

মামুনের হাত ধরে আঙুরে সমৃদ্ধ হবে নীলফামারী জেলা। ছড়িয়ে যাবে সারাদেশে, এমন প্রত্যাশা কৃষি বিভাগের। সে বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ডা. এস.এম. আবু বকর সাইফুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, এ জেরায় যেসব এলাকায় ফল চাষ সমূহ হচ্ছে সেসব এলাকার মাটি বেলে দো-আশ মাটি। এসব মাটিতে ফল চাষ হাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে ফল গাছ কিন্তু জমানো পানি সহ্য করতে পারে না। এই মাটিতে বৃষ্টির পানি বা সেচ দেওয়া পানি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চলে যায় এ জন্য ফল গাছগুলোর কোনো ধরনের সমস্য হচ্ছে না। নীলফামারীতে কমলা, মাল্টার পাশাপাশি এখন আঙুর চাষাবাদ হচ্ছে এবং শিগগিরই এই আঙুর বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হবে এবং সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে।

২০০১ সালে এক বিঘা জমিতে দিয়ে নার্সারির যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে এর ব্যাপ্তি ছাড়িয়ে উনপঞ্চাশ বিঘায়। এখানে পরীক্ষিত উন্নত জাতের কমলা, মাল্টা ছাড়াও রাম্বুটান, পার্সিমন কিংবা এভাকাডোর মতো দেশি-বিদেশি জাতের অন্তত ১২শত রকমের ফলজ, বনজ ও ওষধি গাছের চারা রয়েছে এ.আর. মামুন নার্সারিতে। বৃক্ষরোপণে বিশেষ অবদান রাখায় ২০২৩ সালে জাতীয় পুরস্কার পান তিনি।