০৪:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

কিশোরগঞ্জে শিক্ষক শিক্ষার্থী শুন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়! সামগ্রীক শিক্ষার ভিত প্রাথমিক শিক্ষা হুমকীর মুখে

প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের অবহেলা ও উদাসীনতার কারনে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় প্রাথমিকের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্টান বেহাল হয়ে পড়েছে। বিদ্যালয় গুলোর প্রধানশিক্ষকদের সাথে সহকারী শিক্ষকদের মনোমালিন্য। বাড়ির পাশেই শিক্ষা প্রতিষ্টান হওয়ায় সঠিকভাবে বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থাকা রুটিন মেইনটেনেন্স ও স্লিপের টাকার ভাগাভাগি নিয়ে দন্ডসহ আরো বিভিন্ন কারনে শিক্ষক শিক্ষার্থী শুন্য হয়ে পড়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। ফলে দেশের সামগ্রিক শিক্ষার ভিত বলে বিবেচিত প্রাথমিক শিক্ষা হুমকীর মুখে পড়েছে।

জানা গেছে, এ উপজেলায় ১৭৫ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ১৭৫ টি বিদ্যালয়ে ১৭৫ জন প্রধান শিক্ষকের পদ থাকলেও অবসর ও মুত্যুজনিত কারনে ১০৩ টি প্রধান শিক্ষকের পদ শুন্য। নীতিমালা না মেনে শুন্য পদগুলিতে উপজেলা ও জেলা প্রাথমিক দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের আর্শিবাদ পুষ্টরা ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্ব পাওয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে অসস্তোষের একটি কারন।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর সুত্রে জানা গেছে, গত ২০২৩ সালে ১৭৫ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিল ২৬ হাজার ৭৮৯ জন, (প্রথম শ্রেনী থেকে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত)২০২৪ সালে তা কমে দাড়াঁয় ২১ হাজার ৩৬০ জনে। ২০২৫ সালে এসে দাড়াঁয় ১৬ হাজার ৬৬১ জনে। অর্থাৎ গত তিন বছরে শিক্ষার্থী কমেছে ১০ হাজার ১২৮ জন।

গত রবিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দুরে সদর ইউনিয়নের মধ্যে অবস্থিত ছিটরাজীব পশ্চিমপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়টির ভিতরে প্রবেশ করে দেখা যায় বিদ্যালয়টির সব শ্রেনীকক্ষের দরজা খোলা রয়েছে কিন্তু শ্রেনীকক্ষের ভিতরে কোন শিক্ষার্থী উপস্থিত নেই। বিদ্যালয়টির অপর একটি কক্ষে যেতেই দেখা মিলল একজন সহকারী শিক্ষিকা শ্রেনীকক্ষে বৈদ্যুতিক ফ্যান চালিয়ে মনের আনন্দে টাচ ফোনে টিকটক দেখছেন।

ওই শিক্ষিকার কাছ থেকে অন্য শিক্ষকদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে চারজন শিক্ষক কর্মরত রয়েছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ছুটিতে আছেন এবং বাকি দুইজন সহকারী শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বাড়িতে চলে গেছেন। আপনি আছেন কেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি সরকারের বেতন খাই তাই স্কুল ছুটির সময় না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে যাইনা। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক(ভারপ্রাপ্ত) রেখা বেগম জানান, আমার মেয়ে অসুস্থ তাই চিকিৎসার জন্য ছুটি নিয়েছি। আপনার বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীও উপস্থিত নেই কোন শিক্ষকও নেই কারন কি প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমার বিদ্যালয়ে ৭০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সেটি কি কাগজে কলমে নাকি বাস্তবে এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোন সদোউত্তর দেননি।

ওই এলাকার বাসিন্দা আমিনুল, রাফিয়া, জামানসহ অনেকেই বলেন, বিদ্যালয়টির বেহাল অবস্থা এখানে উল্লেখযোগ্য কোন শিক্ষার্থী নেই। প্রতিদিন পালা করে দুএক জন করে শিক্ষক আসে আর দুপুরের পর চলে যায়। এক কথায় দুইটার পর কাউকে পাওয়া যায়না। স্কুলটির বেহাল অবস্থার কথা শিক্ষা অফিসে জানালে তারা শুধু শোকজে সীমাবদ্ধ থেকে শিক্ষকদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়।

রবিবার বেলা ১২ টার দিকে পুটিমারী ইউনিয়নের কালিকাপুর মাঝাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় , ওই বিদ্যালয়ের একটি ভবনে তিনটি শ্রেনীকক্ষ রয়েছে। কোন শ্রেনীকক্ষে একজন শিক্ষাথীর দেখা মেলেনি। এসময় দেখা যায় একটি বড় রুমে শিক্ষকরা বসে খোসগল্প করছেন। অপর একটি কক্ষে ওয়াশ বøক নির্মানের নির্মান সামগ্রী রয়েছে। আর একটি কক্ষে চেয়ার টেবিল থাকলেও কোন শিক্ষক শিক্ষার্থী নেই তবে ফাঁকা রুমে ফ্যান ঘুরছে আপন গতিতে।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) স্বপন কুমার রায় বলেন, ভাই আজকে বাচ্চাদের টিকার কাজ চলমান ছিল তাই শ্রেনীকক্ষ ফাঁকা রয়েছে।
বড়ডুমরিয়া মাইজালি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ওই বিদ্যালয়ে একটি শ্রেনীকক্ষে কিছুটা অন্ধকারের মধ্যে মাত্র দুইজন শিক্ষার্থী ক্লাসে বসে থাকলে শিক্ষক নেই। অপর একটি কক্ষে ৯ জন শিক্ষার্থীর ক্লাস নিচ্ছেন একজন সহকারী শিক্ষক। আর বাকি শিক্ষকদের মধ্যে কেউ খাচ্ছে আবার কেউ কেউ আরাম আয়েস করছেন।

এসময় প্রধান শিক্ষক পারভীন বেগমের কাছে শ্রেনীকক্ষ অন্ধকার কেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই রুমের সুইস নষ্ট হয়ে গেছে। ক্লাসে শিক্ষার্থী উপস্থিতি তুলনামুলক কম কেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ভাই দ্বিতীয় শিফটে শিক্ষার্থী কম থাকে এটা অস্বীকার করতে পারবনা। তবে আমাদের স্কুলে শিক্ষার্থী অনেক বেশি রয়েছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা একবার বাইরে খেলতে শুরু করে তাই আসতে চায়না। আমরা ডেকে এনে ক্লাস নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন প্রধান শিক্ষক জানান, কিশোরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার স্কুল গুলোতে কোন শিক্ষার্থী নেই। এমনকি শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে যায়না। এর কারন হলো বেশির ভাগ প্রতিষ্টান সদ্য সরকারী। সদ্য সরকারী প্রতিষ্টানগুলোর শিক্ষকদের বাড়ি বিদ্যালয় ঘেঁষা। তারা সকাল বেলা লুঙ্গি পরে বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে আসে। একই বিদ্যালয়ে স্বামী স্ত্রী, ভাই বোন, বাবা ছেলে সকলেই চাকুরী করে। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা প্রত্যান্ত গ্রামে মাসে একবারো ভিজিট করেনা। তাই দিন দিন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কমছে। সাংবাদিকরা বিদ্যালয়গুলোর বেহাল অবস্থার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানালে তারা শুধু শোকজ করে। শোকজের জবাব দিতে আসার পর বলে খরচা দেন না হলে অন্য পদক্ষেপ নেব। আগে প্রাথমিক দপ্তরকে ঠিক হতে হবে। তাদের সচ্যতা নিশ্চিত হওয়া দরকার। তাদের কারনে আজকে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যাবস্থা ধ্বংস হচ্ছে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুন বলেন, যে সকল বিদ্যালয়গুলোর সমস্যা রয়েছে সেগুলোর নাম লিখে দেন আমি তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেব। আপনি নিজেই পরিদর্শনের গিয়ে এরকম বিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেন, সাংবাাদিকদের অবগত করেন, সাংবাদিকরা নিউজ করুক সবাই জানুক শিক্ষকরা সাবধান হোক প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আপনাদের কেন বলব।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কুমারেশ চন্দ্র গাছি বলেন, কিশোরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষার অনেক অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। প্রাথমিকে শিক্ষার্থী কমছে বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, যেগুলো বিদ্যালয় সদ্য সরকারী সে সকল বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে বিস্তুর অভিযোগ রয়েছে। আমি এবার নিজেই পরিদর্শনে যাব।

জনপ্রিয় সংবাদ

নীলফামারীতে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ইউনিটের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন-২০২৫ অনুষ্ঠিত

কিশোরগঞ্জে শিক্ষক শিক্ষার্থী শুন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়! সামগ্রীক শিক্ষার ভিত প্রাথমিক শিক্ষা হুমকীর মুখে

প্রকাশিত ০৭:১৭:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের অবহেলা ও উদাসীনতার কারনে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় প্রাথমিকের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্টান বেহাল হয়ে পড়েছে। বিদ্যালয় গুলোর প্রধানশিক্ষকদের সাথে সহকারী শিক্ষকদের মনোমালিন্য। বাড়ির পাশেই শিক্ষা প্রতিষ্টান হওয়ায় সঠিকভাবে বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থাকা রুটিন মেইনটেনেন্স ও স্লিপের টাকার ভাগাভাগি নিয়ে দন্ডসহ আরো বিভিন্ন কারনে শিক্ষক শিক্ষার্থী শুন্য হয়ে পড়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। ফলে দেশের সামগ্রিক শিক্ষার ভিত বলে বিবেচিত প্রাথমিক শিক্ষা হুমকীর মুখে পড়েছে।

জানা গেছে, এ উপজেলায় ১৭৫ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ১৭৫ টি বিদ্যালয়ে ১৭৫ জন প্রধান শিক্ষকের পদ থাকলেও অবসর ও মুত্যুজনিত কারনে ১০৩ টি প্রধান শিক্ষকের পদ শুন্য। নীতিমালা না মেনে শুন্য পদগুলিতে উপজেলা ও জেলা প্রাথমিক দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের আর্শিবাদ পুষ্টরা ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্ব পাওয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে অসস্তোষের একটি কারন।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর সুত্রে জানা গেছে, গত ২০২৩ সালে ১৭৫ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিল ২৬ হাজার ৭৮৯ জন, (প্রথম শ্রেনী থেকে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত)২০২৪ সালে তা কমে দাড়াঁয় ২১ হাজার ৩৬০ জনে। ২০২৫ সালে এসে দাড়াঁয় ১৬ হাজার ৬৬১ জনে। অর্থাৎ গত তিন বছরে শিক্ষার্থী কমেছে ১০ হাজার ১২৮ জন।

গত রবিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দুরে সদর ইউনিয়নের মধ্যে অবস্থিত ছিটরাজীব পশ্চিমপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়টির ভিতরে প্রবেশ করে দেখা যায় বিদ্যালয়টির সব শ্রেনীকক্ষের দরজা খোলা রয়েছে কিন্তু শ্রেনীকক্ষের ভিতরে কোন শিক্ষার্থী উপস্থিত নেই। বিদ্যালয়টির অপর একটি কক্ষে যেতেই দেখা মিলল একজন সহকারী শিক্ষিকা শ্রেনীকক্ষে বৈদ্যুতিক ফ্যান চালিয়ে মনের আনন্দে টাচ ফোনে টিকটক দেখছেন।

ওই শিক্ষিকার কাছ থেকে অন্য শিক্ষকদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে চারজন শিক্ষক কর্মরত রয়েছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ছুটিতে আছেন এবং বাকি দুইজন সহকারী শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বাড়িতে চলে গেছেন। আপনি আছেন কেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি সরকারের বেতন খাই তাই স্কুল ছুটির সময় না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে যাইনা। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক(ভারপ্রাপ্ত) রেখা বেগম জানান, আমার মেয়ে অসুস্থ তাই চিকিৎসার জন্য ছুটি নিয়েছি। আপনার বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীও উপস্থিত নেই কোন শিক্ষকও নেই কারন কি প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমার বিদ্যালয়ে ৭০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সেটি কি কাগজে কলমে নাকি বাস্তবে এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোন সদোউত্তর দেননি।

ওই এলাকার বাসিন্দা আমিনুল, রাফিয়া, জামানসহ অনেকেই বলেন, বিদ্যালয়টির বেহাল অবস্থা এখানে উল্লেখযোগ্য কোন শিক্ষার্থী নেই। প্রতিদিন পালা করে দুএক জন করে শিক্ষক আসে আর দুপুরের পর চলে যায়। এক কথায় দুইটার পর কাউকে পাওয়া যায়না। স্কুলটির বেহাল অবস্থার কথা শিক্ষা অফিসে জানালে তারা শুধু শোকজে সীমাবদ্ধ থেকে শিক্ষকদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়।

রবিবার বেলা ১২ টার দিকে পুটিমারী ইউনিয়নের কালিকাপুর মাঝাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় , ওই বিদ্যালয়ের একটি ভবনে তিনটি শ্রেনীকক্ষ রয়েছে। কোন শ্রেনীকক্ষে একজন শিক্ষাথীর দেখা মেলেনি। এসময় দেখা যায় একটি বড় রুমে শিক্ষকরা বসে খোসগল্প করছেন। অপর একটি কক্ষে ওয়াশ বøক নির্মানের নির্মান সামগ্রী রয়েছে। আর একটি কক্ষে চেয়ার টেবিল থাকলেও কোন শিক্ষক শিক্ষার্থী নেই তবে ফাঁকা রুমে ফ্যান ঘুরছে আপন গতিতে।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) স্বপন কুমার রায় বলেন, ভাই আজকে বাচ্চাদের টিকার কাজ চলমান ছিল তাই শ্রেনীকক্ষ ফাঁকা রয়েছে।
বড়ডুমরিয়া মাইজালি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ওই বিদ্যালয়ে একটি শ্রেনীকক্ষে কিছুটা অন্ধকারের মধ্যে মাত্র দুইজন শিক্ষার্থী ক্লাসে বসে থাকলে শিক্ষক নেই। অপর একটি কক্ষে ৯ জন শিক্ষার্থীর ক্লাস নিচ্ছেন একজন সহকারী শিক্ষক। আর বাকি শিক্ষকদের মধ্যে কেউ খাচ্ছে আবার কেউ কেউ আরাম আয়েস করছেন।

এসময় প্রধান শিক্ষক পারভীন বেগমের কাছে শ্রেনীকক্ষ অন্ধকার কেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই রুমের সুইস নষ্ট হয়ে গেছে। ক্লাসে শিক্ষার্থী উপস্থিতি তুলনামুলক কম কেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ভাই দ্বিতীয় শিফটে শিক্ষার্থী কম থাকে এটা অস্বীকার করতে পারবনা। তবে আমাদের স্কুলে শিক্ষার্থী অনেক বেশি রয়েছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা একবার বাইরে খেলতে শুরু করে তাই আসতে চায়না। আমরা ডেকে এনে ক্লাস নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন প্রধান শিক্ষক জানান, কিশোরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার স্কুল গুলোতে কোন শিক্ষার্থী নেই। এমনকি শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে যায়না। এর কারন হলো বেশির ভাগ প্রতিষ্টান সদ্য সরকারী। সদ্য সরকারী প্রতিষ্টানগুলোর শিক্ষকদের বাড়ি বিদ্যালয় ঘেঁষা। তারা সকাল বেলা লুঙ্গি পরে বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে আসে। একই বিদ্যালয়ে স্বামী স্ত্রী, ভাই বোন, বাবা ছেলে সকলেই চাকুরী করে। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা প্রত্যান্ত গ্রামে মাসে একবারো ভিজিট করেনা। তাই দিন দিন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কমছে। সাংবাদিকরা বিদ্যালয়গুলোর বেহাল অবস্থার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানালে তারা শুধু শোকজ করে। শোকজের জবাব দিতে আসার পর বলে খরচা দেন না হলে অন্য পদক্ষেপ নেব। আগে প্রাথমিক দপ্তরকে ঠিক হতে হবে। তাদের সচ্যতা নিশ্চিত হওয়া দরকার। তাদের কারনে আজকে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যাবস্থা ধ্বংস হচ্ছে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুন বলেন, যে সকল বিদ্যালয়গুলোর সমস্যা রয়েছে সেগুলোর নাম লিখে দেন আমি তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেব। আপনি নিজেই পরিদর্শনের গিয়ে এরকম বিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেন, সাংবাাদিকদের অবগত করেন, সাংবাদিকরা নিউজ করুক সবাই জানুক শিক্ষকরা সাবধান হোক প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আপনাদের কেন বলব।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কুমারেশ চন্দ্র গাছি বলেন, কিশোরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষার অনেক অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। প্রাথমিকে শিক্ষার্থী কমছে বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, যেগুলো বিদ্যালয় সদ্য সরকারী সে সকল বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে বিস্তুর অভিযোগ রয়েছে। আমি এবার নিজেই পরিদর্শনে যাব।