নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা সাবরেজিস্টার লুৎফর রহমান মোল্লা ও তাঁর অফিস স্টাফদের বিরুদ্ধে অনিয়ম দূর্নীতি অভিযোগ এনে আইনি সমাধান চেয়ে তৃতীয় পক্ষের কিছু ব্যক্তি আন্দোলন করেছেন বলে জানিয়েছেন দলিল লেখক এবং নকল নবীশরা।
নাম না বলা শর্তে দলিল লেখক ও নকল নবীশ সদস্যরা জানান, যেখানে জমি বিক্রেতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দলিল রেজিষ্ট্রি করতে জমি দাতার এনআইডি কার্ড, সংশ্লিষ্ট দলিলে ছবির মিল আছে কি-না, জমি বিক্রেতার সর্বশেষ খতিয়ান আছে কি-না, হালসনের বিক্রিত জমির খাজনা খারিজ আছে কি-না, দলিল দেয়ার আগে দলিলদাতা টাকা পেয়েছেন কি-না এবং দলিল দাতা/গ্রহীতা দলিলটি ভালো করে পড়িয়া স্বাক্ষর করেছেন কি-না, এইসব তথ্য গুলো ঠিকঠাক থাকলে ও উভয়পক্ষকে জিজ্ঞাসা করার পর সাবরেজিস্টার দলিলে স্বাক্ষর করেন।
জলঢাকা সাব-রেজিস্টার অফিস সূত্রে জানা যায়, দাতা/গ্রহীতা তাদের করার প্রয়োজনে পরিচিত দলিল লেখক এর কাছে যায়, এবং দলিল লেখার ক্ষেত্রে সরকারি “ফি”সহ তাদের পারিশ্রমিক দেয়। দলিলের পাতা অনুযায়ী, দলিল লেখকদের পারিশ্রমিক অনেক কম হওয়ায়, তাই তাঁরা সরকারি ফিস”/পে-অর্ডারের বাইরে দাতা ও গ্রহীতাদের সাথে সমঝোতা করে দলিল সম্পাদনের কাজ করা হয়।
অফিস সূত্রে আরো জানিয়েছে, দাতা/গ্রহীতা সরকারি ফিস”/পে-অর্ডার অফিসে টাঙ্গানো সিটিজেন চার্টারে লেখা দেখে দলিল লেখকের সাথে মিল করতে পারে। দাতা/গ্রহীতা তাদের পছন্দমত দুয়েকজন লেখকের কাছে জেনেশুনে সরকারি ফিস”/পে-অর্ডার কত, দলিল লেখকের পারিশ্রমিক কত, এরপরে তাঁরা দলিল রেজিস্ট্রেশনের সিদ্ধান্ত নেয়।
অফিস সূত্রে জানা যায়, দাতা/গ্রহীতার যদি দলিল সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো প্রকার অভিযোগ থাকলে উপজেলা সাব রেজিস্টার অথবা জেলা সাব- রেজিস্টারকে অভিযোগ করতে পারে। দলিল রেজিস্ট্রেশনের সময় কোন প্রকার আর্থিক লেনদেন হয় না, দাতা/গ্রহীতা অফিসের পে-অর্ডারের মাধ্যমে টাকা জমাদান করিয়া থাকে। দাতা/গ্রহীতা অফিসের বাইরে দলিল লেখক বা কোন দালালের সাথে অতিরিক্ত অর্থ লেনদেন করলে অফিস দায়ী থাকবেনা। এছাড়াও অফিস সূত্রে আরো জানা যায় নকল উত্তোলনের জন্য সরকারি ফি ১০০০ টাকা, ২৫০০ টাকা নেয়ার দায় নকল নবীশের।
এদিকে ঢাল নেই তরোয়াল নেই, নিধিরাম সর্দার সেজে কিছু সুবিধাভোগী আন্দোলন করে ভোগান্তি সৃষ্টি করেছে তাদের তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত দাবি করেছেন দলিল দাতা ও গ্রহীতারা। নতুন দলিল দাতার পক্ষে টেংগনমারী বাজারের বিশিষ্ট কাপড় ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক দুলাল আহসান বলেন, আমার এক আত্মীয় তাঁর মেয়ের বিয়ের দিনতারিখ ঠিকঠাক হয়েছে দলিল রেজিষ্টি না হওয়ায় বিয়ে আটকে আছে। তিনি বলেন, কেউ ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করাতে ভর্তি হওয়াসহ যাবতীয় খরচাদি থাকে তা বঞ্চিত হচ্ছে, এসবকিছু নিয়ে আমরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। তিনি বলেন, যাঁরা অহেতুক আন্দোলন করছেন তাঁরা দলিল দাতা ও গ্রহীতা হয় কি-না আগে তাদের বিষয়ে তদন্ত করা দরকার। পশ্চিম বালাগ্রামের বাসিন্দা রিপন সরকার বলেন, আমি দলিল গ্রহীতা, দলিলের যাবতীয় কাজ ঠিকঠাক হয়েছে সাবরেজিস্টার না থাকায় দলিল রেজিষ্ট্রেশন করতে পারছি না। তিনি বলেন, আমি বসতবাড়ি নির্মাণ করার জন্য এই জমি নেয়া।
পশ্চিম খুটামারা দিঘলটারীর বাসিন্দা জমি বিক্রেতা আজিজুল ইসলাম বলেন, দলিল পার না হওয়ায় আমি বড় বিপদে আছি, সমস্যার কথা কাউকে কিছু বলতে পারছি না। টেংগনমারী এলাকার দলিল গ্রহীতা ওবায়দুল ইসলাম বলেন, জমির বায়নাপত্র সহ দলিলের যাবতীয় কাজ ঠিকঠাক হয়েছে, বিক্রেতার স্বাক্ষর হলেই হয়, সাবরেজিস্টার না থাকায় ঝামেলায় আছি।
মিথ্যা অভিযোগ এনে আন্দোলন সংগ্রাম করায় কয়েকদিনের জন্য ছুটিতে গেছেন সাবরেজিস্টার লুৎফর রহমান মোল্লা। তিনি বলেন, আমার ছোট ভাই একজন বিএনপির নেতা, তাছাড়া সে একজন শিল্পপতি। আমার বিরুদ্ধে অনিয়ম দূর্নীতি অভিযোগ এনে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছে তা ভিত্তিহীন এবং মনগড়া অভিযোগ। যাঁরা এসব অভিযোগ করেছে তাঁরা দলিল দাতা ও গ্রহীতা কি-না তা-ও জানিনা। অফিস করার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামী ৯ ডিসেম্বর তদন্ত হবে, তদন্ত শেষ হলে দেখবো অফিস করা যাবে কি-না।

























