১২:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫

নীলফামারীতে এক কলেজে তিন অধ্যক্ষ!

নীলফামারীর জলঢাকার শিমুলবাড়ি সরকারি ডিগ্রি কলেজে একইসঙ্গে তিনজন অধ্যক্ষ দায়িত্বে থাকার ঘটনায় চরম প্রশাসনিক জটিলতা দেখা দিয়েছে। একজনের নিয়োগ হয়েছে মন্ত্রণালয়ের আদেশে, অপর দুইজন দায়িত্ব পালন করছেন ভারপ্রাপ্ত হিসেবে—ফলে কলেজজুড়ে চলছে দায়িত্ব পালনের দ্বন্দ্ব।

জানা গেছে, কলেজটি ২০২১ সালের ৮ আগস্ট জাতীয়করণ হওয়ার পর উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুল হান্নান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। চলতি বছরের ৮ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত অধ্যাপক এ কে এম সিদ্দিকুর রহমানকে কলেজটির অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

তবে সেই পদায়নের বিরুদ্ধে আব্দুল হান্নান উচ্চ আদালতে রিট করলে, আদালত ১ জুন পর্যন্ত তার (সিদ্দিকুরের) নিয়োগ স্থগিত করে এবং হান্নানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন।

আরও একজন ভারপ্রাপ্ত!
তবে এরই মধ্যে পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে, যখন অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান নিজেই কলেজের সহকারী অধ্যাপক অশোক কুমার রায়কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন, হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও উপাধ্যক্ষ আব্দুল হান্নানকে দায়িত্ব না দিয়ে।

ফলে বর্তমানে কলেজটিতে একজন সরকার নির্ধারিত অধ্যক্ষ ও দুইজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ—এই তিনজনই কার্যত দায়িত্ব পালনের অবস্থানে আছেন। প্রশাসনিক কার্যক্রম ও শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে বিরাজ করছে বিভ্রান্তি ও বিভাজন।

সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল হান্নানের অভিযোগ
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল হান্নান অভিযোগ করেন, “আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও আমাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে সহকারী অধ্যাপককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আমার জুন মাসের বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে, আমি পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি।”

তিনি আরও বলেন, “২০১৮ সালের আত্তীকরণ বিধিমালা অনুযায়ী বিসিএস ক্যাডার ব্যতীত নন-ক্যাডারকে পদায়নের সুযোগ নেই। তবুও রাজনৈতিক প্রভাবে ক্যাডারভুক্ত একজনকে নিয়োগ দিয়ে আমাকে হেয় করা হচ্ছে।”

অধ্যক্ষ সিদ্দিকুরের ব্যাখ্যা
অন্যদিকে অধ্যাপক এ কে এম সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “সরকারি আদেশে আমি কলেজে যোগদান করেছি। আদালতের আদেশে তিন মাসের জন্য তা স্থগিত থাকায় প্রশাসনিক প্রয়োজনে অশোক কুমার রায়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”

আব্দুল হান্নানকে দায়িত্ব না দেওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, “তিনি কলেজে অনুপস্থিত থাকেন এবং আমাকে ‘ভুয়া অধ্যক্ষ’ বলে সম্বোধন করেছেন। ফলে প্রশাসনিক স্বার্থেই তাকে দায়িত্ব না দিয়ে অন্যকে দায়িত্ব দিতে হয়েছে।”

কলেজের কার্যক্রম প্রায় অচল
এই অধ্যক্ষ-কাণ্ডে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। একাধিক শিক্ষক জানান, তিনজন ব্যক্তি নিজেকে অধ্যক্ষ দাবি করায় নীতিনির্ধারণী ও প্রশাসনিক কাজগুলো নিয়মিতভাবে হচ্ছে না।

জনপ্রিয় সংবাদ

তৃতীয় পক্ষে আন্দোলনে লম্বা ছুটিতে সাবরেজিস্টার, ভোগান্তিতে জমি দাতা ও গ্রহীতারা

নীলফামারীতে এক কলেজে তিন অধ্যক্ষ!

প্রকাশিত ০৮:০৭:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫

নীলফামারীর জলঢাকার শিমুলবাড়ি সরকারি ডিগ্রি কলেজে একইসঙ্গে তিনজন অধ্যক্ষ দায়িত্বে থাকার ঘটনায় চরম প্রশাসনিক জটিলতা দেখা দিয়েছে। একজনের নিয়োগ হয়েছে মন্ত্রণালয়ের আদেশে, অপর দুইজন দায়িত্ব পালন করছেন ভারপ্রাপ্ত হিসেবে—ফলে কলেজজুড়ে চলছে দায়িত্ব পালনের দ্বন্দ্ব।

জানা গেছে, কলেজটি ২০২১ সালের ৮ আগস্ট জাতীয়করণ হওয়ার পর উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুল হান্নান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। চলতি বছরের ৮ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত অধ্যাপক এ কে এম সিদ্দিকুর রহমানকে কলেজটির অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

তবে সেই পদায়নের বিরুদ্ধে আব্দুল হান্নান উচ্চ আদালতে রিট করলে, আদালত ১ জুন পর্যন্ত তার (সিদ্দিকুরের) নিয়োগ স্থগিত করে এবং হান্নানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন।

আরও একজন ভারপ্রাপ্ত!
তবে এরই মধ্যে পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে, যখন অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান নিজেই কলেজের সহকারী অধ্যাপক অশোক কুমার রায়কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন, হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও উপাধ্যক্ষ আব্দুল হান্নানকে দায়িত্ব না দিয়ে।

ফলে বর্তমানে কলেজটিতে একজন সরকার নির্ধারিত অধ্যক্ষ ও দুইজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ—এই তিনজনই কার্যত দায়িত্ব পালনের অবস্থানে আছেন। প্রশাসনিক কার্যক্রম ও শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে বিরাজ করছে বিভ্রান্তি ও বিভাজন।

সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল হান্নানের অভিযোগ
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল হান্নান অভিযোগ করেন, “আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও আমাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে সহকারী অধ্যাপককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আমার জুন মাসের বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে, আমি পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি।”

তিনি আরও বলেন, “২০১৮ সালের আত্তীকরণ বিধিমালা অনুযায়ী বিসিএস ক্যাডার ব্যতীত নন-ক্যাডারকে পদায়নের সুযোগ নেই। তবুও রাজনৈতিক প্রভাবে ক্যাডারভুক্ত একজনকে নিয়োগ দিয়ে আমাকে হেয় করা হচ্ছে।”

অধ্যক্ষ সিদ্দিকুরের ব্যাখ্যা
অন্যদিকে অধ্যাপক এ কে এম সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “সরকারি আদেশে আমি কলেজে যোগদান করেছি। আদালতের আদেশে তিন মাসের জন্য তা স্থগিত থাকায় প্রশাসনিক প্রয়োজনে অশোক কুমার রায়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”

আব্দুল হান্নানকে দায়িত্ব না দেওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, “তিনি কলেজে অনুপস্থিত থাকেন এবং আমাকে ‘ভুয়া অধ্যক্ষ’ বলে সম্বোধন করেছেন। ফলে প্রশাসনিক স্বার্থেই তাকে দায়িত্ব না দিয়ে অন্যকে দায়িত্ব দিতে হয়েছে।”

কলেজের কার্যক্রম প্রায় অচল
এই অধ্যক্ষ-কাণ্ডে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। একাধিক শিক্ষক জানান, তিনজন ব্যক্তি নিজেকে অধ্যক্ষ দাবি করায় নীতিনির্ধারণী ও প্রশাসনিক কাজগুলো নিয়মিতভাবে হচ্ছে না।