কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই জমে উঠেছে নীলফামারীর কামার পল্লীগুলো। সেসব পাড়ায় ঢুকলেই কানে আসে টুংটাং শব্দ—হাতুড়ি ও লোহা-পেটানো যন্ত্রপাতির শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা। বছরের বেশিরভাগ সময় অলস সময় কাটালেও, ঈদুল আজহা সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়েছে কয়েকগুণ।
কামারপাড়ার একাধিক দোকানে গিয়ে দেখা যায়, কামাররা ঘাম ঝরিয়ে তৈরি করছেন দা, বটি, চাপাতিসহ বিভিন্ন কাটার যন্ত্রপাতি। কোরবানির মাংস প্রক্রিয়াজাত করার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা।
মাংস কাটার সরঞ্জাম কিনতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা জামিয়ার ইসলাম বলেন, বাজারে বিভিন্ন ধরনের ছুরি পাওয়া যায়, কিন্তু সেগুলো টেকসই না। কামারদের তৈরি লোহার দা-বঁটি অনেক মজবুত এবং কাজেও ভালো হয়। তবে এবার দাম কিছুটা বেশি চাওয়া হচ্ছে।
আরেক ক্রেতা আব্দুর রহিম জানান, কোরবানির আর বেশি দিন নেই। তাই আগে থেকেই দা, চাপাতিসহ দরকারি জিনিস কিনে নিচ্ছি। ঈদের সময় প্রচণ্ড ভিড় হয়, সময় বাঁচাতেই আগেভাগে এসেছি।
বিক্রেতা আইনুল ইসলাম জানান, একটা দা-বঁটি বানাতে অনেক খরচ হয়, কিন্তু সেই তুলনায় দাম ঠিকমতো পাওয়া যায় না। তাছাড়া এখন বিদেশি দা-বটিও বাজারে ঢুকেছে, যার প্রভাব পড়েছে আমাদের বিক্রিতে। তারপরও ঈদের জন্য কিছুটা বিক্রি বেড়েছে।
কাচ্চাউ মিয়া নামের এক কামার বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ও কৃষি যন্ত্রপাতি আধুনিক হওয়ায় আমাদের পণ্যের চাহিদা কমেছে। এবার কোরবানির ঈদকে ঘিরে লোহা ও কয়লার দাম বেড়েছে। খরচ বাড়লেও আমাদের আয় বাড়েনি।
এভাবেই ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে জমে উঠেছে কামারপাড়া। আধুনিকতার ছোঁয়ায় পেছনে পড়ে গেলেও কোরবানির ঈদই এখনও এই প্রাচীন পেশায় খানিকটা প্রাণ ফেরায়।
লাভ ক্ষতি মিলেই চলে ব্যবসা, কিন্তু অন্যান্য সময়ের তুলনায় কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে দা বটি চাপাতি সহ বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা থাকে একটু বেশি।
সেই চাহিদাকে কেন্দ্র করে কামারেরা তৈরি করেন এস পণ্য। উদ্দেশ্য একটাই ঈদের এই আমেজ যেন ছড়িয়ে পড়ে সকল পেশার মানুষের মনে এমনটাই প্রত্যাশা ক্রেতা বিক্রেতা সকলের।