প্রকাশ্যে দিনের বেলা জনসম্মুখে কৃষক দল নেত্রীকে সন্ত্রাসী কায়দায় বেধড়ক মারপিট করাসহ ৩ ঘন্টা আটকে রেখে শ্লীলতাহানি ও হত্যার চেষ্টা করেছে এক আওয়ামী লীগ নেতা। এই দুষ্কৃতকারী নেতা পুলিশের এক এসআই এর ভাই হওয়ায় তিন দিনেও কোন সহযোগিতা করেনি থানা পুলিশ। এমনকি নেতার চিকিৎসক বোনের অপচেষ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পায়নি গুরুত্বর আহত বিধবা নারী। বরং এখনও প্রাণনাশের হুমকিতে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে অসহায় পুরো পরিবার।
এমন অভিযোগ তুলে ধরে শনিবার (১ নভেম্বর) দুপুর ৩ টায় সৈয়দপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা কৃষক দলের সহ সাধারণ সম্পাদক মোছা. লিপি আক্তার (৩৫)। তিনি বলেন, গত ২৯ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের সোনাখুলী এলাকার মৃত. শাহাজাহান আলী বাদলের ছেলে, পুলিশের এসপি রোকনুজ্জামান ও ডা. শামীমা আক্তার সোহাগীর ভাই আওয়ামী লীগ নেতা মো. রাশেদুজ্জামান বাবুর বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পরিবারের লোকজনসহ হামলা চালিয়ে মারপিট করে তার বাড়িতে আমাকে ৩ ঘন্টা আটকে রেখে শ্লীলতাহানি করা সহ হত্যার চেষ্টা চালায়।
তিনি বলেন, উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের সোনাখুলী জামবাড়ি ও আশপাশের এলাকায় আমাদের “ক্যাবল ওয়ান ও মাইম নেট” নামে ডিসের ব্যবসা আছে। দীর্ঘদিন থেকে এই ব্যবসা আমার স্বামী চালিয়ে আসছে। একই এলাকায় মো. রাশেদুজ্জামান বাবুরও “সেন্ট্রাল লিংক ও সৈয়দপুর ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক’ নামের ডিসের লাইনের ব্যবসা আছে। তার ডিসের ব্যবসা মন্দা চলায় আমার স্বামীর ব্যবসা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন ধরে আমার স্বামীর স্থাপনকৃত ডিস লাইনের তার কেটে দিয়ে গ্রাহকদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন সহ বিভিন্ন ভাবে ক্ষতিসাধণ করে আসছে।
ইতোপূর্বে এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে বাবু আমার স্বামী ও কর্মচারী বেলালকে মারধর করে। এনিয়ে থানায় অভিযোগ করলেও কোন সমাধান হয় নাই। এমতাবস্থায় গত ৭ আগস্ট আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে বাবু আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং কৌশলে গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করে আমাদের ২৪৭ টি সেটাপ বক্স তুলে নিয়ে গেছে। যার দাম ৪,৮১,৬৫০/- (চার লক্ষ একাশি হাজার ছয়শত পঞ্চাশ) টাকা। ওই সেটাপবক্সগুলো ফেরত নিতে গত ২৪ অক্টোবর দুপুর অনুমান ২.৩০ টার সময় আমি ও আমার বড় মেয়ে মোছা. রিতাসহ সোনাখুলি আদানীপাড়ায় বাবুর বাড়ীতে গেলে তিনি আমাদের অশোভন আচরণ করে এবং প্রাণ নাশের হুমকি দেয়।
লিপি আক্তার আরও বলেন, বেশ কিছু দিন ধরেই বাবু আমাকে পুরো ডিস ব্যবসা তাঁকে ছেড়ে দিতে এবং আমাকে বিয়ে করার কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছে। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তার জমির উপর দিয়ে যাওয়া একটা ক্যাবল তার কেটে দেয় বাবু। এর প্রতিবাদে আমার ননদের স্বামী মো. সিরাজুল ইসলাম ওরফে মেরাজুল (৩৭) তার জমির উপর দিয়ে যাওয়া বাবুর ক্যাবল তারও কেটে দেয়। এই জেরে গত ২৭ অক্টোবর বিকাল অনুমান সাড়ে ৫ টার সময় রাশেদুজ্জামান বাবু তার সাথে মৃত. গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মো. সামসুল (৫৫), মো. এমদাদুলের ছেলে মো. মোমিন (২৫), মৃত. কামাল উদ্দিনের ছেলে আ. কাদের (৫৫) ও মো. সারোয়ার (২৫), মো. কেতাব উদ্দিন (৬১) সহ আরও প্রায় ১০-১২ জন ভাড়াটে অজ্ঞাতনামা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ এর ছেলে হাতে লাঠি-সোটা, ধারালো ছোরা, লোহার রড প্রভৃতি দেশীয় অস্ত্রে সন্ত্রসহ সোনাখুলি মুন্সিপাড়ায় আমার ননদ মোছা. সোনালী বেগম এর বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায়।
মেরাজুলকে কিল-ঘুসি সহ বাঁশের লাঠি দিয়ে মার-ডাং করে। ধারালো ক্ষুর দিয়ে আঘাত করায় মাথায়, দুই হাতের বিভিন্ন স্থানে ও বুকে গুরুতরভাবে কাঁটা রক্তাক্ত জখম হয়। এরপর গলা চিপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। আমি ও আমার ননদ রক্ষায় এগিয়ে গেলে আমাদেরও চুলের মুঠি ধরে কিল-খুসি সহ মার-ডাং ছিলা-ফুলা জখম করে। মেরাজুল সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে থানায় অভিযোগ করলে থানার এসআই সোহরাব হোসেন গত ২৯ অক্টোবর সকালে তদন্তে গিয়ে জামবাড়ি এলাকায় আমাকে ডেকে নেন।
আমার কর্মচারী মারুফকে সাথে নিয়ে এসআই সোহরাব হোসেনসহ বাবু কর্তৃক আমাদের ক্যাবল তার কাটার চিহ্ন দেখতে যাওয়ার পথে বাবুর বাড়ির সামনে হঠাৎ আমাদের মোটর সাইকেলের সামনে একযোগে ৮-১০ জন ঝাপিয়ে পড়ে চলন্ত মোটর সাইকেলের পিছন থেকে আমাকে চুলের মুঠি ধরে টেনেহিঁচড়ে নামায় এবং এলোপাতাড়ি লাঠি ও লোহার রড দিয়ে মারডাং করে। এসময় আমার পড়নের কাপড় খুলে নেয়ার জন্য টেনে হেঁচড়ে ছিড়ে ফেলে। গলার ওড়না দিয়ে শ্বাস রোধ করে। এতে বাধা দেয়ায় আমার কর্মচারী মারুফকেও বেধড়ক পেটায়।
এক পর্যায়ে বাবু, তার স্ত্রী নমিজা, মেয়ে রাইসা ও ভগ্নিপতি মাসুদ এবং ভাগিনা মনোয়ার আমাকে চ্যাংদোলা করে তার বাড়ির ভিতরে নিয়ে যায় এবং দীর্ঘ ৩ ঘন্টা একটা ঘরে আটকে রাখে। এসময় মাসুদ জোরপূর্বক ফাঁকা নন জুডিশিয়াল স্টাম্পে স্বাক্ষর করানোর চেষ্টা করে। স্বাক্ষর না করায় পরে বাবু একাই ঘরে ঢুকে আমার উপর অত্যাচার চালায়। ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে কামড় দিয়ে জখম করে। আমি আগে থেকেই আহত থাকায় তাকে প্রতিরোধে ব্যর্থ হই। তবে প্রাণপণে চিৎকার করি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সে আবারও বেপরোয়াভাবে মারপিট করে।
লিপি আক্তারের মেয়ে রিতা আক্তার বলেন, এই দীর্ঘ সময়ে আমি থানায় গিয়ে এসআই সোহরাবসহ ডিউটি অফিসারকে বার বার বলার পরও কেউ কোন ভ্রূক্ষেপ করেননি। বরং উল্টো বাবুকে কল করে জানায়। এতে বাবু আমার মায়ের উপর আরও বেশি নির্যাতন করে। দীর্ঘ ৩ ঘন্টা পর এলাকার পশু চিকিৎসক সাজু ও আ. হাই মেম্বার আমাকে উদ্ধার করে। তবুও পুলিশ কোন পদক্ষেপ নেননি। বাবুর ভাই রোকনুজ্জামান পুলিশের এসপি হওয়ায় সৈয়দপুর থানা এমন নির্বিকার। আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় বিগত দিনে দলীয় প্রভাবে দেদারসে মাদক বিক্রিসহ নানা অপকর্ম চালিয়েছে বাবু। এখন ওই ভাইয়ের দাপটেই এলাকায় অপকর্ম করে চলেছে সে।
সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি হলেও গত ৩ দিন ধরে কোন চিকিৎসাই দেয়া হয়নি। বরং দায়িত্বে থাকা লোকজন খুবই অসহযোগীতামূলক আচরণ করেছে। এমনকি হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যেতেও বলেছে। বাবুর বোন ডা. সোহাগী ওই হাসপাতালে কর্মরত থাকায় এই পরিস্থিতি। ডা. সোহাগীর স্বামী মাসুদ ও বাবু শালা-দুলাভাই মোটর সাইকেল চোরাই চক্রের হোতাও। বাবু এর আগে একজন রিকশা চালকের স্ত্রীর সাথেও নোংরামি করেছে। তাছাড়া কয়েকমাস আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ক্যানেলের সংষ্কার চলাকালে কাজ আটকিয়ে চাঁদাবাজি করেছে। যা এলাকার সবাই জানে। তার অত্যাচারে এলাকার অনেকেই ভুক্তভোগী।
কিন্তু বাবুর পরিবার দলীয় ও প্রশাসনিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনা। আমরা তাদের এমন অন্যায়ের বিচার চাই। এজন্য প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা আশা করছি।
এব্যাপারে অভিযুক্ত রাশেদুজ্জামান বাবুর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে, তিনি সাংবাদিকদের বলেন, লিপি আক্তারের অভিযোগ সঠিক নয়। বরং তারাই আমাকে নানাভাবে হয়রানি করছে। মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে পুলিশ পাঠিয়ে আমাদের পরিবারের সুনাম ক্ষুন্ন করছে। আমার ভাই এসপি ও বোন চিকিৎসক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আমাদের জিম্মি করে ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমার বাবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। আমি আওয়ামী লীগ করিনা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত এসপি রোকনুজ্জামান সরকার মুঠোফোনে বলেন, আমি বাড়িতেও যাইনা, পরিবারের কারো সাথে কোন যোগাযোগ নেই। সেখানে আমার নির্দেশ বা দাপটে কোন অন্যায় করার কোন সুযোগ নেই। আমার ভাই বা পরিবারের কোন সদস্য অপরাধ করে থাকলে তার দায় দায়িত্ব তাদের। কারো সাথে অন্যায় করে থাকলে তারা আইনের আশ্রয় নিবে। আমি কোন প্রভাব বিস্তার করবোনা, কখনো করিওনি। আমি কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেইনি, দিবোওনা।























