নীলফামারীর কাঁচাবাজারে অস্বাভাবিকভাবে সবজির মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে বলছেন, সাধারণ ভোক্তরা। এতে দাম বেড়েছে, লাউশাক, মুলাশাক, পুঁইশাক, পাটশাক ও কঁচি ডাটা শাকেরও। ভোক্তারা জানান, সাধ থাকলেও সাধ্য নেই, ভাল কিছু খাওয়ার।
এদিকে, মোটেই ঝাঁল কমেনি কাঁচা মরিচের। খুচরা বাজারের ৪০টাকা পোয়া হিসেবে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন খুচরা দোকানিরা। দাম জানতে চাইলে বলেন, ৪০ টাকা পোয়া। আবার অনেকেই ৪৫ টাকা পোয়াও চায়।
জেলার শহরের হাড়োয়া গ্রামের দিন মজুর আব্বাজ আলী জানান,‘বাজারে গিয়ে হাতে গোনা কিছু সবজি কেনা ছাড়া উপায় থাকছে না। এছাড়াও, বেগুন, পাতাকপি, ফুলকপি, বরবটি, মুলা, চিচিঙ্গা, লাউ, কাচকলাসহ প্রত্যেক সবজির বাজার আকাশ চুম্বি।
রবিবার (২৬ অক্টোবর) সকালে জেলা শহরের কিচেন মার্কেট, উকিলের মোড়, কালিতলা বাজার, মাধার মোড়, ষ্টেশন বাজার, আনন্দবাবুর পুল, টুপির মোড় ঘুরে দেখা গেছে, প্রকার ভেদে বেগুন পাইকারীতে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০টাকা ও খুচরায় ১০০ টাকা, কাঁচা মরিচ পাইকারী ১৫০ টাকা ও খুচরায় ১৬০ টাকা, পটল প্রতিকেজি পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা ও খুচরা ৪৫ টাকা।
অপরদিকে, প্রতিকেজি বরবটি পাইকারী ২০ টাকা ও খুচরা ৩০, কচুর লতির ১৫ টাকার আঁটি ৩০ টাকা, করল্যা প্রতি কেজি পাইকারী ২০ টাকায় কিনে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৩০টাকা, পাইকারীতে ২০ টাকার মুলা ৩০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৬০ টাকায় কিনে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা ও ঢেঁড়শ পাইকারী ৬০ টাকা কিনে খুচরা বিক্রি ৭০, সিম প্রতিকেজি পাইকারী ৯০ টাকা এবং খুচরায় বিক্রি করছেন ১২০ টাকা, চিচিঙ্গা পাইকারী ৩৫ টাকা কিনে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, পাতা কপি কেজি ৮০ টাকা ও ফুলকপি ৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, বাবুপাড়ার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে পাইকারী বাজারে কিছুটা কম মূল্যে সবজি পাওয়া গেলেও ১০ টার পর থেকে এসব সবজি খুচরা বাজারে আগুন লেগে যায়। খুচরা ব্যবসায়িরা প্রতিকেজিতে ১২-১৫ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ভোক্তাদের কাছে। তিনি বলেন, বাজার মনিটারিং না থাকায় ইচ্ছেমত লাভ করছেন তারা। মানুষের সাধ্যের মধ্যে তুলনামূলকভাবে কিছুটা স্বস্তির জায়গা হচ্ছে মুলা শাক, কাঁচ কলা, পেঁপে, লালশাক ও আলু।’
জেলা শহরের বড় বাজার ট্রাফিক মোড়ের ভ্যান চালক রশিদুল, জুতার কারিগর রবি দাস ও ডিম বিক্রেতা রহিদুল অভিযোগ করে বলেন, আমাদের মতো মানুষ সবজি কিনতে এসে দিশেহারা। প্রতিদিন সবজির দাম বেড়েই চলছে। সাধ্যের মধ্যে কিছুই কেনা সম্ভব হচ্ছে না। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশী।
নিউ বাবুপাড়ার আব্দুল খালেক জানান, ‘পানের আড়তে কাজ করে সারাদিনে মজুরি পাই ৩০০ টাকা, এই আয় দিয়ে ছয় সদসের পরিবারে বর্তমান বাজারে ডাল ভাতও জোটেনা। বাজারে এখন শীতের সবজি উঠতে শুরু করলেও বেগুন, ফুলকপি, পাতাকপি, মুলা, বরবটি, ঢেঁড়শ, ধুনে পাতা, মরিচ ও সিমের বাজারে আগুন লেগেছে। তিনি বলেন, সাধ থাকলেও সাধ্য নেই কেনার।’
ওই মার্কেটের খুচরা ব্যবসায়ি ইলিয়াজ হোসেন বলেন, ‘সকালে পাইকারী বাজারে গ্রাম থেকে আগের মত সবজি আসেনা। কারণ জানতে চাইলে জানান, কিছুদিন আগে টানা বৃষ্টি হয়ে গেল এজন্য সবজিসহ মরিচের গাছ মরে গেছে। তাই বাজারে আমদানি না থাকায় অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে শীতের সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে। আমদানি বাড়লে দামও কমে আসবে।’
কাঁচা বাজারের আড়তদার আলমগীর হোসেন বলেন, ‘পার্শবর্তী জেলা বগুড়া, দিনাজপুরসহ স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদন ও আমদানি খুবেই কম। ফলে পাইকারি বাজারে আমদানি সংকটের কারণে সবজির দাম বেড়েছে। আগামি ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে সরবারহ স্বাভাবিক হবে। তখন এই বাজার আর থাকবেনা।’
এ বিষয়ে জেলা বিক্রয় ও বিপণন কর্মকর্তা এরশাদ আলম খান জানান, কিছু নতুন সবজি বাজারে উঠলেও তা পর্যাপ্ত নয়। সরবারহ সংকটের কারণ দেখিয়ে কিছু অসাদু ব্যবসায়ি অধিক লাভের আশায় সংকট তৈরী করছে। আমরা কিচেন মার্কেটসহ পাইকারী ও খুচরা বাজারে মনিটারিং করে, দ্রæত ওইসব অসাধু ব্যবসায়িদের আইনের আওয়তায় আনা হবে।


















