০৫:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫

সৈয়দপুরে বিডাব্লিউভি এর কার্ড করে দিতে টাকা নিলেও এখন টাকা-কার্ড কিছুই দিচ্ছেনা মহিলা মেম্বার

দুস্থ, অসহায়, হতদরিদ্র মানুষের জন্য সরকারি সহায়তা বিডাব্লিউভি তথা ভিজিডি কার্যক্রমের একটা সুবিধা কার্ড নেয়ার জন্য সুদের উপর টাকা নিয়ে মহিলা মেম্বার ও তার স্বামীকে দিলেও এখন টাকাও নাই, কার্ডও নাই। অথচ মাসে মাসে সুদ দিতে হচ্ছে। এমনই বেকায়দায় পড়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের দুইজন অসহায় দরিদ্র নারী।

এর একজন হচ্ছেন ওই ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের সাল্টিবাড়ি এলাকার সাইদুলের স্ত্রী ময়না বেগম (২৮)। আর অন্যজন ৭ নং ওয়ার্ডের কাচার এলাকার জয়নালের স্ত্রী জরিনা বেগম (৪৩)। এছাড়াও আরও অনেকে একইভাবে ভুক্তভোগী রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। শনিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিনে গেলে উলে­খিত দুইজন কান্নাজড়িত কন্ঠে তাদের অসহায়ত্বের তুলে ধরেন। জরিনা বেগম বলেন, ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার মেরিনার স্বামী ফজলার রহমান ভিজিডি কার্ড করে দেয়ার জন্য ৮ হাজার টাকা চায়। পরে ৫ হাজার টাকায় দিতে সম্মত হয়।

সে অনুযায়ী সুদের উপর টাকা নিয়ে সাড়ে ৪ হাজার টাকা অগ্রীম দেই এবং কার্ড পাওয়ার পর বাকি টাকা দিতে চাই। আজ ৪ মাস পর দেখি আশেপাশের অনেকের তালিকায় নাম আছে কিন্তু আমার নাই। কারণ জিজ্ঞাসা করলে মহিলা মেম্বার ও তার স্বামী বলে, তোমার ভাগ্য খারাপ তাই কার্ড হয়নি। টাকা ফেরত চাইলে বলে, আরে বোকা এসব কাজে টাকা দিলে কি আর ফেরত পাওয়া যায়? অফিসে জনে জনে ভাগ করে দিয়েছি। তা কি আর চাওয়া যায়? সামনে অন্য কোন সুযোগ আসলে সেটা করে দিবো। আর যদি আরও সাড়ে ৩ হাজার টাকা দিতে পারো তাহলে আর একটু চেষ্টা করে দেখি। এভাবে সে কৌশলে আরও টাকা চাচ্ছে।

আমি গরীব মানুষ। অনেক কষ্টে দিন চালাই। সরকারের দেয়া সুবিধা নেয়ার জন্য সুদের উপর টাকা নিয়ে দিয়ে এখন সুদের ঘানি টানতে হচ্ছে। ভিজিডি পেয়ে টাকা শোধ করার পরিবর্তে উল্টা ঝণে জর্জরিত হয়ে গেলাম। টাকাটা ফেরত দিলে হয়তো রেহাই পাইতাম। কিন্তু মহিলা মেম্বার ও তার স্বামী টাকাও দিচ্ছেনা। এখন আমি কি করবো, কোথায় যাবো? এমন কাজের বিচার কে করবে?

একইভাবে ময়না বেগম বলেন, মহিলা মেম্বার মেরিনা নিজে ভিজিডি কার্ড করে দেয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকা নিয়েছে। তালিকায় নাম আসছে কিন্তু কার্ড আটকে রেখেছে। আরও ৪ হাজার টাকা চাচ্ছে। অফিস খরচ দিতে হবে বলছে। না দিলে কার্ড দিবেনা। বাতিল করে অন্যকে দিয়ে দিবে। আমি খুবই গরীব মানুষ। আমার স্বামী এক্সিডেন্ট করে অসুস্থ হয়ে দীর্ঘ প্রায় ১ বছর ধরে বিছানায় পড়ে আছে। আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করে খাই। থাকি অন্যের জায়গায় ঘর করে। এখন ভিজিডির কার্ড করতে সুদের উপর টাকা নিয়ে দেয়ার পরও যদি কার্ড না পাই তাহলে কিভাবে চলবো? কার কাছে এই অন্যায়ের প্রতিকার পাবো?

তারা দুজনেই জানান যে, আমাদের এলাকায় যারাই ভিজিডিসহ রেশন, মাতৃভাতা ও বয়স্ক-বিধবা ভাতার কার্ড করেছে সবার কাছেই মহিলা মেম্বার মেরিনা ও তার স্বামী ফজলার রহমান ন্যুনতম ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। টাকা ছাড়া কোন সুযোগ সুবিধা পাওয়ার জো নেই। একারণে প্রকৃত দরিদ্র অসহায় মানুষের বদললে সচ্ছলরাই বেশি কার্ড পেয়েছে।

তারা আরও বলেন, এছাড়াও মহিলা মেম্বার ও তার স্বামী নিজের মেয়সহ বিভিন্ন জনের নামে সরকারি সুবিধার কার্ড করে নিজেরা আত্মসাৎ করে আসছে। ভিজিডি ও কর্মসৃজন প্রকল্পের মাটিকাটা কাজের তালিকায় এই কাজ বেশি করেছে। ইতোপূর্বে নুর বানু নামে এক মহিলার নামে মাটিকাটার তুলে খাওয়ার ঘটনা সাংবাদিক কর্তৃক ধরা পড়ে। তখন বাধ্য হয়ে পরে নুরবানুর স্বামী আফসার আলীর কাছে ক্ষমা চেয়ে এবং কার্ড ফেরত দিয়ে বিষয়টা ধামাচাপা দেয়। এঘটনায় সংবাদ প্রকাশ হলেও পিআইও অফিস কোন ব্যবস্থা নেয়নি। সেকারণে তারা এখনও গরীব মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে খাচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে মেম্বারী করায় এভাবে দূর্ণীতি অনিয়ম করেই চলেছে। ভুক্তভোগীরা এর অবসান চায়।

এব্যাপারে মহিলা মেম্বার মেরিনা ও তার স্বামী ফজলার রহমানের সাথে যোগাযোগের জন্য বাড়ি ও পরিষদে গেলেও দেখা না পাওয়ায় মুঠোফোনে কল দেয়া হয়। কিন্তু তারা কল রিসিভ না করায় তাদের মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। একইভাবে খাতামধুপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ রানা পাইলটের মন্তব্যও পাওয়া যায়নি। আর সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রশিক্ষনের জন্য দেশের বাইরে থাকায় নীলফামারী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিষয়ক জেলা পরিচালক (ডিডি এল জি) সাইদুর রহমানের সাথে মুঠোফোন কথা হয়। তিনি বলেন, সরকারি সুবিধার কার্ড করে দিতে কখনই কেউ কোন টাকা নিতে পারবেনা। যদি নিয়ে থাকে এবং অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তদন্তে সত্যতা মিললে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিষয়
জনপ্রিয় সংবাদ

তৃতীয় পক্ষে আন্দোলনে লম্বা ছুটিতে সাবরেজিস্টার, ভোগান্তিতে জমি দাতা ও গ্রহীতারা

সৈয়দপুরে বিডাব্লিউভি এর কার্ড করে দিতে টাকা নিলেও এখন টাকা-কার্ড কিছুই দিচ্ছেনা মহিলা মেম্বার

প্রকাশিত ১১:৫৬:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫

দুস্থ, অসহায়, হতদরিদ্র মানুষের জন্য সরকারি সহায়তা বিডাব্লিউভি তথা ভিজিডি কার্যক্রমের একটা সুবিধা কার্ড নেয়ার জন্য সুদের উপর টাকা নিয়ে মহিলা মেম্বার ও তার স্বামীকে দিলেও এখন টাকাও নাই, কার্ডও নাই। অথচ মাসে মাসে সুদ দিতে হচ্ছে। এমনই বেকায়দায় পড়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের দুইজন অসহায় দরিদ্র নারী।

এর একজন হচ্ছেন ওই ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের সাল্টিবাড়ি এলাকার সাইদুলের স্ত্রী ময়না বেগম (২৮)। আর অন্যজন ৭ নং ওয়ার্ডের কাচার এলাকার জয়নালের স্ত্রী জরিনা বেগম (৪৩)। এছাড়াও আরও অনেকে একইভাবে ভুক্তভোগী রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। শনিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিনে গেলে উলে­খিত দুইজন কান্নাজড়িত কন্ঠে তাদের অসহায়ত্বের তুলে ধরেন। জরিনা বেগম বলেন, ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার মেরিনার স্বামী ফজলার রহমান ভিজিডি কার্ড করে দেয়ার জন্য ৮ হাজার টাকা চায়। পরে ৫ হাজার টাকায় দিতে সম্মত হয়।

সে অনুযায়ী সুদের উপর টাকা নিয়ে সাড়ে ৪ হাজার টাকা অগ্রীম দেই এবং কার্ড পাওয়ার পর বাকি টাকা দিতে চাই। আজ ৪ মাস পর দেখি আশেপাশের অনেকের তালিকায় নাম আছে কিন্তু আমার নাই। কারণ জিজ্ঞাসা করলে মহিলা মেম্বার ও তার স্বামী বলে, তোমার ভাগ্য খারাপ তাই কার্ড হয়নি। টাকা ফেরত চাইলে বলে, আরে বোকা এসব কাজে টাকা দিলে কি আর ফেরত পাওয়া যায়? অফিসে জনে জনে ভাগ করে দিয়েছি। তা কি আর চাওয়া যায়? সামনে অন্য কোন সুযোগ আসলে সেটা করে দিবো। আর যদি আরও সাড়ে ৩ হাজার টাকা দিতে পারো তাহলে আর একটু চেষ্টা করে দেখি। এভাবে সে কৌশলে আরও টাকা চাচ্ছে।

আমি গরীব মানুষ। অনেক কষ্টে দিন চালাই। সরকারের দেয়া সুবিধা নেয়ার জন্য সুদের উপর টাকা নিয়ে দিয়ে এখন সুদের ঘানি টানতে হচ্ছে। ভিজিডি পেয়ে টাকা শোধ করার পরিবর্তে উল্টা ঝণে জর্জরিত হয়ে গেলাম। টাকাটা ফেরত দিলে হয়তো রেহাই পাইতাম। কিন্তু মহিলা মেম্বার ও তার স্বামী টাকাও দিচ্ছেনা। এখন আমি কি করবো, কোথায় যাবো? এমন কাজের বিচার কে করবে?

একইভাবে ময়না বেগম বলেন, মহিলা মেম্বার মেরিনা নিজে ভিজিডি কার্ড করে দেয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকা নিয়েছে। তালিকায় নাম আসছে কিন্তু কার্ড আটকে রেখেছে। আরও ৪ হাজার টাকা চাচ্ছে। অফিস খরচ দিতে হবে বলছে। না দিলে কার্ড দিবেনা। বাতিল করে অন্যকে দিয়ে দিবে। আমি খুবই গরীব মানুষ। আমার স্বামী এক্সিডেন্ট করে অসুস্থ হয়ে দীর্ঘ প্রায় ১ বছর ধরে বিছানায় পড়ে আছে। আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করে খাই। থাকি অন্যের জায়গায় ঘর করে। এখন ভিজিডির কার্ড করতে সুদের উপর টাকা নিয়ে দেয়ার পরও যদি কার্ড না পাই তাহলে কিভাবে চলবো? কার কাছে এই অন্যায়ের প্রতিকার পাবো?

তারা দুজনেই জানান যে, আমাদের এলাকায় যারাই ভিজিডিসহ রেশন, মাতৃভাতা ও বয়স্ক-বিধবা ভাতার কার্ড করেছে সবার কাছেই মহিলা মেম্বার মেরিনা ও তার স্বামী ফজলার রহমান ন্যুনতম ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। টাকা ছাড়া কোন সুযোগ সুবিধা পাওয়ার জো নেই। একারণে প্রকৃত দরিদ্র অসহায় মানুষের বদললে সচ্ছলরাই বেশি কার্ড পেয়েছে।

তারা আরও বলেন, এছাড়াও মহিলা মেম্বার ও তার স্বামী নিজের মেয়সহ বিভিন্ন জনের নামে সরকারি সুবিধার কার্ড করে নিজেরা আত্মসাৎ করে আসছে। ভিজিডি ও কর্মসৃজন প্রকল্পের মাটিকাটা কাজের তালিকায় এই কাজ বেশি করেছে। ইতোপূর্বে নুর বানু নামে এক মহিলার নামে মাটিকাটার তুলে খাওয়ার ঘটনা সাংবাদিক কর্তৃক ধরা পড়ে। তখন বাধ্য হয়ে পরে নুরবানুর স্বামী আফসার আলীর কাছে ক্ষমা চেয়ে এবং কার্ড ফেরত দিয়ে বিষয়টা ধামাচাপা দেয়। এঘটনায় সংবাদ প্রকাশ হলেও পিআইও অফিস কোন ব্যবস্থা নেয়নি। সেকারণে তারা এখনও গরীব মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে খাচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে মেম্বারী করায় এভাবে দূর্ণীতি অনিয়ম করেই চলেছে। ভুক্তভোগীরা এর অবসান চায়।

এব্যাপারে মহিলা মেম্বার মেরিনা ও তার স্বামী ফজলার রহমানের সাথে যোগাযোগের জন্য বাড়ি ও পরিষদে গেলেও দেখা না পাওয়ায় মুঠোফোনে কল দেয়া হয়। কিন্তু তারা কল রিসিভ না করায় তাদের মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। একইভাবে খাতামধুপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ রানা পাইলটের মন্তব্যও পাওয়া যায়নি। আর সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রশিক্ষনের জন্য দেশের বাইরে থাকায় নীলফামারী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিষয়ক জেলা পরিচালক (ডিডি এল জি) সাইদুর রহমানের সাথে মুঠোফোন কথা হয়। তিনি বলেন, সরকারি সুবিধার কার্ড করে দিতে কখনই কেউ কোন টাকা নিতে পারবেনা। যদি নিয়ে থাকে এবং অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তদন্তে সত্যতা মিললে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।