নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫০টি পরিবার সামান্য পানি বাড়লেই পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। বারবার বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েও কোনো ফল না মেলায় চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন এই প্রকল্পের বাসিন্দারা। এই অভিযোগের সত্যতা মিলেছে ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানীর ছাতুনামা কেল্লাপাড়া গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে।
জানা গেছে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে দ্বিতীয় পর্যায়ে এক কোটি দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা ব্যয়ে এক একর জমিতে ৫০টি পরিবারের জন্য ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ঘরগুলো হস্তান্তর করা হলেও বসবাসের জন্য ঘর, ঘরের উঠান ও চলাচলের রাস্তা ঠিকমতো উপযোগী করে তোলা হয়নি। ঘর পাওয়ার অল্পদিনের মধ্যেই দেওয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রবেশের প্রধান রাস্তাটি কয়েকদিন আগের বন্যায় কয়েক স্থানে ভেঙে গেছে। প্রকল্পের ভেতরে চলাচলের রাস্তায় কোথাও একহাঁটু আবার কোথাও তার চেয়েও বেশি পানি জমে আছে। ঘরগুলোর উঠান পানিবন্দি। প্রধান গেট দিয়ে পানি প্রবেশ করে বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গলিপথগুলোতেও প্রায় একহাঁটু পরিমাণ পানি।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী আরজিনা বেগম ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, দেওয়াল ফেটে যায়, এই যে আবার আইসা ঠিক কইরা দিয়া যায়। দুই-তিনবার কইরা দিয়া গেছে। এবার তো ওয়ালের মাঝখানে ফাটছে, আবার ঠিক কইরা দিছে। এভাবে তো বাচ্চা-কাচ্চা নিয়া ভয়ে থাকি।
৪৯ নম্বর ঘরের মালিক জয়গুন জানান, বড় বন্যা হলে আমাদের খুব সমস্যা হয়, এটা তো সমাধান করা দরকার। বন্যায় আমার ঘরের পূর্ব পাশের মাটি ভেঙে গেছে। চেয়ারম্যান, মেম্বররা কয়েকদিন আগে এসে দেখে গেছেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। সবখানে গেছি, কোনো কাজ হয় না।
৬ নম্বর ঘরের বাসিন্দা বাহার আলী বলেন, বারান্দা পর্যন্ত পানি ওঠে। পাশের স্কুলঘরেও একহাঁটু পানি হয়। সবাইকে বলি কিন্তু কোনো কাজ হয় না। শরমে আর কাউকে কিছু বলি না। ৫ নম্বর ঘরের বাসিন্দা ফুলোরা বেগম জানান, পানি যখন ওঠে, তখন খাটের ওপরে উঠি। একটা সিমেন্টের চুলা আছে, সেটাও খাটের ওপরে তুলে রান্না করি। এইবার চারবার বন্যা এলো, কিন্তু চেয়ারম্যান একবারও দেখতে এলো না। ১ নম্বর ঘরের বাসিন্দা বলেন, হাঁটু পর্যন্ত পানি ওঠে, কিন্তু কিছু করার নাই। কর্মকর্তারা এসে দেখে যায়, কিন্তু কিছু তো করে না। চুলা ওপরে তুলে রান্না করি।
৪৮ নম্বর ঘরের বাসিন্দা মশিয়ার রহমান জানান, বর্তমানে নদীর পানি বাড়লে রাতে হাঁটু পর্যন্ত ওঠে। শুধু উঠানে নয়, বারান্দা ও ঘরেও পানি প্রবেশ করে। তিনি বলেন, একদিন রাত তিনটায় ঘুম থেকে উঠে দেখি জুতা ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। সরকারের লোকজন যখন বাড়িগুলো তৈরি করেছে, তখন আরেকটু উঁচু করলে পানি উঠত না। তিনি আরও জানান, কয়েকটি বাড়িতে ফাটল ধরলে অলিয়ার রহমান নামে একজন এসে কিছু দিন পর পর ঠিক করে দিয়ে যান। তিনি অভিযোগ করেন, আমরা সিমেন্টের চুলা বিছানায় তুলে রান্না-বান্না করি, খাওয়া-দাওয়াও বিছানায় করি। সবাই আসে আর দেখে যায়, কিন্তু কেউ কাজ করে না। ঘরগুলো তৈরি করে দিয়েছে, তার পর আর কেউ কোনো কাজ করে না।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানার জন্য ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হককে পাওয়া যায়নি। একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ না করায় তার কোনো মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে, ঘটনাস্থল থেকে ডিমলা উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আশরাফুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি, ফলে তাঁরও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, ডিমলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরানুজ্জামান বলেন, আমি তো এখানে নতুন এসেছি। তবে সেখানকার বাসিন্দারা যেন ভালোভাবে থাকতে পারে, খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
























