০৯:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
নীলফামারীতে শীতের আগাম বার্তা

শীত আসছে, শুরু হয়েছে ঝুট কাপড়ের জ্যাকেট তৈরি

ঋতু পরিক্রমায় শীত আসে শীত যায়। চলতি মৌসুমে ধীরে ধীরে শীতের আগমনি বার্তা শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের নীলফামারীসহ অন্যান্য এলাকায় ভোরে ও গভীর রাতে ঘনকুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে। এমনকি ভোরের দিকে হাল্কা পাতলা চাদর গায়ে জড়িয়ে ঘুমোতে হচ্ছে।

এ অবস্থায় শীতের প্রস্তুতিতে নীলফামারীর সৈয়দপুরে ঝুট কাপড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে শীতের জ্যাকেট। পণ্যের মান ভালো ও দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় এর চাহিদা স্থানীয় বাজারসহ সারাদেশে রয়েছে। পাশাপাশি সীমানা পেরিয়ে এসব শীতবস্ত্র এখন ভুটান, নেপাল ও ভারতের কলকাতা ও আসামে রপ্তানি হচ্ছে। শীতের তীব্রতা বাড়লে বিক্রি আরও বাড়বে।

শুক্রবার দেখা গেছে, সৈয়দপুর শহরের মুন্সীপাড়া, কয়ানিজপাড়া, নয়াটোলা, হাতিখানা, মিস্ত্রিপাড়া, নতুন বাবুপাড়া, পুরানো বাবুপাড়া, গোলাহাট, রাবেয়া মোড়, ঘোড়াঘাট, বাঁশবাড়ী ও নিয়ামতপুরসহ পাকিস্তানিদের (অবাঙালি) একটি বড় অংশের ঘরে ঘরে এসব ক্ষুদ্র পোশাক কারখানা গড়ে উঠেছে। সৈয়দপুরের রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস মালিক সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান আমল থেকেই সৈয়দপুরে ঝুট কাপড় থেকে নানা ধরনের পোশাক তৈরি হতো।

রংপুর বিভাগের মধ্যে নীলফামারীর সৈয়দপুরে সবচেয়ে বেশি কারিগররা নিজেদের মেধায় বিভিন্ন ধরনের শীতবস্ত্র তৈরি করেন। এই অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেশি হওয়ায় শীতবস্ত্রের চাহিদাও থাকে বেশি। ঝুট দিয়ে তৈরি শীতবস্ত্রের দাম কম হওয়ায় নিম্নআয়ের মানুষ সহজেই তা কিনতে পারেন। তবে আগে শতাধিক কারখানা থাকলেও এবার কারখানার সংখ্যা কমে প্রায় ৬০টি কারখানায় এসব জ্যাকেট তৈরি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের অর্ডার অনুযায়ী এসব জ্যাকেট তৈরি করা হয়ে থাকে।

চলতি মৌসুমে প্রায় ১২ লাখ পিস ঝুট কাপড়ের জ্যাকেট তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে কারখানাগুলো। জ্যাকেট তৈরি এবং প্যাকেজিং কাজ শুরু হয়েছে বলে জানালেন কারখানাগুলোর কারিগরগণ।  এ বিষয়ে কথা বলে জানা যায়, শুধু দেশের জন্য নয়। এই জ্যাকেটের অর্ডার এসেছে ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকেও। বিগত সময়ের ন্যায় অর্ডার ও সরবরাহ ঠিক থাকলে এই ঝুট কাপড়ের শীতের পোশাক জ্যাকেটের ব্যবসা শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

বিভিন্ন কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই কারখানায় কাজ চলে। পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রির পাশাপাশি  ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট থেকে পাইকাররা এসে পণ্য  নিয়ে যান। অনেকে আসছে। পাইকারি ব্যবসায়ী মামুন বলেন, শীতের সময় কেনাবেচা বেশি হয়। ডোমার, ডিমলা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়সহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতারা এখানে আসেন।

কারিগর রহমত আলী বলেন, জানান আগে সৈয়দপুরে শতাধিক কারখানা ছিল। এখন ৬০টি কারখানায় ঝুট কাপড়ের জ্যাকেট তৈরি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শীতের কাপড়ের ব্যবসায়ীরা এসে তাদের চাহিদা মোতাবেক অর্ডার দিয়ে যাচ্ছেন।

অপর কারিগর রহমত মিয়া বলেন, চলতি অক্টোবর মাস থেকে হাল্কা শীতের আগমন ঘটেছে। নভেম্বর মাসেই শীত নেমে যাবে। তাই চাহিদা অনুযায়ী গত জুলাই মাস থেকেই জ্যাকেট তৈরির কাজ শুরু করা হয়।  শীতকে সামনে রেখে চাপ সামাল দিতে আমরা আগেভাগেই জ্যাকেট তৈরি করা হচ্ছে। অনেকে অর্ডার অনুযায়ী ডেলিভারিও নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি জানান, জ্যাকেট তৈরি হয় বিভিন্ন ডিজাইনে, যা খুব যত্ন সহকারে তৈরি করা হয়। তিনি বলেন. শীতপ্রধান এলাকায় ঝুটকাপড়ের জ্যাকেটে চাহিদা বেশে। কারণ এই জ্যাকেট শরীরে গরম ধরিয়ে দেয়।

আগে সৈয়দপুরে শতাধিক কারখানা ছিল, এখন প্রায় ৬০টি কারখানায় ঝুট কাপড়ের জ্যাকেট তৈরি হচ্ছে জানিয়ে সৈয়দপুরের বিসমিল্লাহ নামের গার্মেন্টসের মালিক আব্দুর রহমান বলেন, এবার জ্যাকেটের দাম বেশি হবে। জ্যাকে তৈরীর জন্য যা সামগ্রী কিনতে হয় সেগুলোর দাম বেড়েছে।
দেশে ও বিদেশে বিশেষ করে ভারত, নেপাল ও ভুটানে এই ঝুটকাপড়ের জ্যাকেটের চাহিদা প্রচুর। শীতের প্রকট অনুযায়ী চাহিদাও বেড়ে যায় বলে জানান রিহান গার্মেন্টসের মালিক রুবেল ইসলাম বলেন, জ্যাকেটের গুনগত মান খুব ভালো হওয়ায় ক্রেতা বিক্রেতার  চাহিদা অনেক।

সৈয়দপুর ভাই ভাই গার্মেন্টসের কর্ণধার হানিফ বলেন,’ বিভিন্ন দেশের চাহিদা অনুযায়ী কাপড় দিয়ে থাকি। আবার আমাদের দেশেও বাজারজাত করি। এতে আমাদের দেশের টাকাও আসছে আবার বিদেশ থেকে ডলারও আসছে।’ ব্যবসায়ীরা জানান, রপ্তানির ক্ষেত্রে সোনা মসজিদ, সোনাহাট ও বুড়িমারী এই তিন স্থলবন্দর ব্যবহার করতে হয়। তবে চিলাহাটি স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালু করা গেলে খরচ অনেক কমে আসবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

নীলফামারীতে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ইউনিটের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন-২০২৫ অনুষ্ঠিত

নীলফামারীতে শীতের আগাম বার্তা

শীত আসছে, শুরু হয়েছে ঝুট কাপড়ের জ্যাকেট তৈরি

প্রকাশিত ০৮:৩৩:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫

ঋতু পরিক্রমায় শীত আসে শীত যায়। চলতি মৌসুমে ধীরে ধীরে শীতের আগমনি বার্তা শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের নীলফামারীসহ অন্যান্য এলাকায় ভোরে ও গভীর রাতে ঘনকুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে। এমনকি ভোরের দিকে হাল্কা পাতলা চাদর গায়ে জড়িয়ে ঘুমোতে হচ্ছে।

এ অবস্থায় শীতের প্রস্তুতিতে নীলফামারীর সৈয়দপুরে ঝুট কাপড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে শীতের জ্যাকেট। পণ্যের মান ভালো ও দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় এর চাহিদা স্থানীয় বাজারসহ সারাদেশে রয়েছে। পাশাপাশি সীমানা পেরিয়ে এসব শীতবস্ত্র এখন ভুটান, নেপাল ও ভারতের কলকাতা ও আসামে রপ্তানি হচ্ছে। শীতের তীব্রতা বাড়লে বিক্রি আরও বাড়বে।

শুক্রবার দেখা গেছে, সৈয়দপুর শহরের মুন্সীপাড়া, কয়ানিজপাড়া, নয়াটোলা, হাতিখানা, মিস্ত্রিপাড়া, নতুন বাবুপাড়া, পুরানো বাবুপাড়া, গোলাহাট, রাবেয়া মোড়, ঘোড়াঘাট, বাঁশবাড়ী ও নিয়ামতপুরসহ পাকিস্তানিদের (অবাঙালি) একটি বড় অংশের ঘরে ঘরে এসব ক্ষুদ্র পোশাক কারখানা গড়ে উঠেছে। সৈয়দপুরের রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস মালিক সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান আমল থেকেই সৈয়দপুরে ঝুট কাপড় থেকে নানা ধরনের পোশাক তৈরি হতো।

রংপুর বিভাগের মধ্যে নীলফামারীর সৈয়দপুরে সবচেয়ে বেশি কারিগররা নিজেদের মেধায় বিভিন্ন ধরনের শীতবস্ত্র তৈরি করেন। এই অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেশি হওয়ায় শীতবস্ত্রের চাহিদাও থাকে বেশি। ঝুট দিয়ে তৈরি শীতবস্ত্রের দাম কম হওয়ায় নিম্নআয়ের মানুষ সহজেই তা কিনতে পারেন। তবে আগে শতাধিক কারখানা থাকলেও এবার কারখানার সংখ্যা কমে প্রায় ৬০টি কারখানায় এসব জ্যাকেট তৈরি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের অর্ডার অনুযায়ী এসব জ্যাকেট তৈরি করা হয়ে থাকে।

চলতি মৌসুমে প্রায় ১২ লাখ পিস ঝুট কাপড়ের জ্যাকেট তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে কারখানাগুলো। জ্যাকেট তৈরি এবং প্যাকেজিং কাজ শুরু হয়েছে বলে জানালেন কারখানাগুলোর কারিগরগণ।  এ বিষয়ে কথা বলে জানা যায়, শুধু দেশের জন্য নয়। এই জ্যাকেটের অর্ডার এসেছে ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকেও। বিগত সময়ের ন্যায় অর্ডার ও সরবরাহ ঠিক থাকলে এই ঝুট কাপড়ের শীতের পোশাক জ্যাকেটের ব্যবসা শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

বিভিন্ন কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই কারখানায় কাজ চলে। পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রির পাশাপাশি  ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট থেকে পাইকাররা এসে পণ্য  নিয়ে যান। অনেকে আসছে। পাইকারি ব্যবসায়ী মামুন বলেন, শীতের সময় কেনাবেচা বেশি হয়। ডোমার, ডিমলা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়সহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতারা এখানে আসেন।

কারিগর রহমত আলী বলেন, জানান আগে সৈয়দপুরে শতাধিক কারখানা ছিল। এখন ৬০টি কারখানায় ঝুট কাপড়ের জ্যাকেট তৈরি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শীতের কাপড়ের ব্যবসায়ীরা এসে তাদের চাহিদা মোতাবেক অর্ডার দিয়ে যাচ্ছেন।

অপর কারিগর রহমত মিয়া বলেন, চলতি অক্টোবর মাস থেকে হাল্কা শীতের আগমন ঘটেছে। নভেম্বর মাসেই শীত নেমে যাবে। তাই চাহিদা অনুযায়ী গত জুলাই মাস থেকেই জ্যাকেট তৈরির কাজ শুরু করা হয়।  শীতকে সামনে রেখে চাপ সামাল দিতে আমরা আগেভাগেই জ্যাকেট তৈরি করা হচ্ছে। অনেকে অর্ডার অনুযায়ী ডেলিভারিও নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি জানান, জ্যাকেট তৈরি হয় বিভিন্ন ডিজাইনে, যা খুব যত্ন সহকারে তৈরি করা হয়। তিনি বলেন. শীতপ্রধান এলাকায় ঝুটকাপড়ের জ্যাকেটে চাহিদা বেশে। কারণ এই জ্যাকেট শরীরে গরম ধরিয়ে দেয়।

আগে সৈয়দপুরে শতাধিক কারখানা ছিল, এখন প্রায় ৬০টি কারখানায় ঝুট কাপড়ের জ্যাকেট তৈরি হচ্ছে জানিয়ে সৈয়দপুরের বিসমিল্লাহ নামের গার্মেন্টসের মালিক আব্দুর রহমান বলেন, এবার জ্যাকেটের দাম বেশি হবে। জ্যাকে তৈরীর জন্য যা সামগ্রী কিনতে হয় সেগুলোর দাম বেড়েছে।
দেশে ও বিদেশে বিশেষ করে ভারত, নেপাল ও ভুটানে এই ঝুটকাপড়ের জ্যাকেটের চাহিদা প্রচুর। শীতের প্রকট অনুযায়ী চাহিদাও বেড়ে যায় বলে জানান রিহান গার্মেন্টসের মালিক রুবেল ইসলাম বলেন, জ্যাকেটের গুনগত মান খুব ভালো হওয়ায় ক্রেতা বিক্রেতার  চাহিদা অনেক।

সৈয়দপুর ভাই ভাই গার্মেন্টসের কর্ণধার হানিফ বলেন,’ বিভিন্ন দেশের চাহিদা অনুযায়ী কাপড় দিয়ে থাকি। আবার আমাদের দেশেও বাজারজাত করি। এতে আমাদের দেশের টাকাও আসছে আবার বিদেশ থেকে ডলারও আসছে।’ ব্যবসায়ীরা জানান, রপ্তানির ক্ষেত্রে সোনা মসজিদ, সোনাহাট ও বুড়িমারী এই তিন স্থলবন্দর ব্যবহার করতে হয়। তবে চিলাহাটি স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালু করা গেলে খরচ অনেক কমে আসবে।