১১:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

আগাম আলু চাষে ব্যস্ত কৃষক

আশ্বিন কার্তিক মাসের মঙ্গা তাড়ানো এবং আগাম আউশ ধান ঘরে তুলে এবার সেই জমিতে আগাম জাতের আলু আবাদে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের জেলা নীলফামারীর কৃষক। আগাম ধান ও আগাম আলুচাষ নীলফামারী জেলা বেশ পরিচিতি।

কে আগে আলু লাগাতে ও বাজারে আনতে পারে তার জন্য রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়। তবে কৃষি বিভাগ বলছে আলু রোপণের ৫৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে আগাম আলু উঠতে শুরু করবে। আর নতুন আলুর স্বাদ পেতে ভোক্তারা ঝুঁকে পড়েন। ফলে আগাম নতুন আলুর দাম পেয়ে থাকে চাষিরা।

নীলফামারীর জেলার কিশোরীগঞ্জ  উপজেলার ৯ ইউনিয়ন ও জেলা সদরের ১৫ ইউনিয়নের মধ্যে কচুকাটা, সংগলশী, সোনারায়, চাপড়াসরমজানী, চড়াইখোলা, কচুকাটা ও পঞ্চপুকুর ইউনিয়নে। রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগ জানায়,  মঙ্গা তাড়ানোর জমির আগাম ধান কাটা মাড়াই শেষে ওই জমিতে সেভেন জাতের আলু রোপণ করছে কৃষক। এ জন্য বীজ সংগ্রহ, জমি প্রস্তত, সার প্রয়োগসহ আলু চাষে ব্যস্ত সবাই।

সরেজমিনে দেখা যায়, দ্বিগুণ লাভের আশায় মাঠে মাঠে চলছে এখন আলু রোপণ ও জমি প্রস্তুতের কাজ। কেউ জমি তৈরি করছেন, আগাছা পরিষ্কার, বীজ সংগ্রহ ও কেউ আবার সার প্রয়োগ নিয়ে ব্যস্ত। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। জেলা সদরের কচুকাটা বন্দর পাড়া গ্রামের আলু চাষি বজলুর রশিদ বলেন, এবার দুই বিঘা জমিতে আগাম আলু রোপণ করেছি।

সার, বীজ, পরিবহন, লেবার ও ছত্রাক নাশকসহ আলু ঘরে তোলা পর্যন্ত মোট খরচ হবে প্রায় এক লাখ টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ওই দুই বিঘায় আলু উৎপাদন হবে প্রায় চার হাজার কেজি। আগাম আলুর বাজার দর ৬০-৭০ টাকা কেজি বিক্রি হলে লাভ হবে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা। আশা করি, খরচ বাদে আমার লাভ হবে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। এই আলুর প্রধার খরিদ্দার ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের আড়তদার।

চেয়ারম্যান পাড়ার আলু চাষি আবু কালাম চার বিঘা ও আব্দুস সালাম পাঁচ বিঘা জমিতে আগাম আলু রোপণ করছেন। তারা জানান, যদি আবহাওয়া ভালো থাকে ধান বা পাটের চেয়ে সেভেন আলু বিক্রি করে দ্বিগুণ লাভ করা যাবে। তাই আলু রোপণের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে কচুকাটা গ্রামে।

কিশোরীগঞ্জ উপজেলার আলু চাষি লুৎফর রহমান লুতু বলেন, আমি গতবছরের উৎপাদিত আলু হিমাগারে প্রায় ২ হাজার ৫০০ বস্তা আলু রেখেছিলাম। আলুর দাম না থাকলেও আগাম বিনা সেভেন জাত আলু জমিতে রোপণ করেছি। ৭শ’ বস্তা আলু হিমাগার থেকে এনে ১৩ বিঘা জমিতে আগাম আলু রোপণ করেছি। বাকি আলু ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বীজ বিক্রি করছি। উৎপাদন খরচ অনুযায়ী আলুর দাম পড়েছে ৩০ টাকা।

আগাম  আলু চাষে কৃষকদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। আলু শীত সহিষ্ণু সবজি। শরতে শীতের আমেজ এসেছে। কিন্তু দিনে প্রচ- গরম। অতিরিক্ত গরমে আলু পচে যায়। এ ছাড়াও রয়েছে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা। এই বৃষ্টিতে কৃষকদের ভাগ্য পুড়ে। নতুন করে একই জমিতে আলু রোপণ করতে হয়। এতে আগাম না হয়ে ম্যাডিয়্যাম ভ্যারাইটি ফসল হিসাবে দাম আসে। ফলে অনেক সময় লোকসান গুনতে হয়।

তবুও আবহাওয়ার ওপর ভাগ্য জানিয়ে আলু চাষি মোক্তার হোসেন বলেন, আমি ৮ বিঘা জমিতে আলু চাষ করছি। কারণ বিশেষ করে নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ উপজেলার আলু চাষিরা প্রতিবছর দেশের মধ্যে প্রথম আগাম আলু চাষ করেন। এবারে আলুর নাজুক মূল্য থাকলেও ঝুঁকি নিয়েই আগাম আলু চাষাবাদে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নবাগত উপ পরিচালক মঞ্জুর রহমান বলেন, চলতি বছর নীলফামারী জেলায় ২২ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরমধ্যে আগাম জাতের আলু চাষ করা হচ্ছে  প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে। এ জেলার আগাম জাতের আলুর সূতিকাগার বলা হয় কিশোরীগঞ্জ উপজেলাকে। গত বছর কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় ৭ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

নীলফামারীতে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ইউনিটের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন-২০২৫ অনুষ্ঠিত

আগাম আলু চাষে ব্যস্ত কৃষক

প্রকাশিত ০৫:৫৫:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫

আশ্বিন কার্তিক মাসের মঙ্গা তাড়ানো এবং আগাম আউশ ধান ঘরে তুলে এবার সেই জমিতে আগাম জাতের আলু আবাদে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের জেলা নীলফামারীর কৃষক। আগাম ধান ও আগাম আলুচাষ নীলফামারী জেলা বেশ পরিচিতি।

কে আগে আলু লাগাতে ও বাজারে আনতে পারে তার জন্য রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়। তবে কৃষি বিভাগ বলছে আলু রোপণের ৫৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে আগাম আলু উঠতে শুরু করবে। আর নতুন আলুর স্বাদ পেতে ভোক্তারা ঝুঁকে পড়েন। ফলে আগাম নতুন আলুর দাম পেয়ে থাকে চাষিরা।

নীলফামারীর জেলার কিশোরীগঞ্জ  উপজেলার ৯ ইউনিয়ন ও জেলা সদরের ১৫ ইউনিয়নের মধ্যে কচুকাটা, সংগলশী, সোনারায়, চাপড়াসরমজানী, চড়াইখোলা, কচুকাটা ও পঞ্চপুকুর ইউনিয়নে। রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগ জানায়,  মঙ্গা তাড়ানোর জমির আগাম ধান কাটা মাড়াই শেষে ওই জমিতে সেভেন জাতের আলু রোপণ করছে কৃষক। এ জন্য বীজ সংগ্রহ, জমি প্রস্তত, সার প্রয়োগসহ আলু চাষে ব্যস্ত সবাই।

সরেজমিনে দেখা যায়, দ্বিগুণ লাভের আশায় মাঠে মাঠে চলছে এখন আলু রোপণ ও জমি প্রস্তুতের কাজ। কেউ জমি তৈরি করছেন, আগাছা পরিষ্কার, বীজ সংগ্রহ ও কেউ আবার সার প্রয়োগ নিয়ে ব্যস্ত। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। জেলা সদরের কচুকাটা বন্দর পাড়া গ্রামের আলু চাষি বজলুর রশিদ বলেন, এবার দুই বিঘা জমিতে আগাম আলু রোপণ করেছি।

সার, বীজ, পরিবহন, লেবার ও ছত্রাক নাশকসহ আলু ঘরে তোলা পর্যন্ত মোট খরচ হবে প্রায় এক লাখ টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ওই দুই বিঘায় আলু উৎপাদন হবে প্রায় চার হাজার কেজি। আগাম আলুর বাজার দর ৬০-৭০ টাকা কেজি বিক্রি হলে লাভ হবে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা। আশা করি, খরচ বাদে আমার লাভ হবে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। এই আলুর প্রধার খরিদ্দার ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের আড়তদার।

চেয়ারম্যান পাড়ার আলু চাষি আবু কালাম চার বিঘা ও আব্দুস সালাম পাঁচ বিঘা জমিতে আগাম আলু রোপণ করছেন। তারা জানান, যদি আবহাওয়া ভালো থাকে ধান বা পাটের চেয়ে সেভেন আলু বিক্রি করে দ্বিগুণ লাভ করা যাবে। তাই আলু রোপণের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে কচুকাটা গ্রামে।

কিশোরীগঞ্জ উপজেলার আলু চাষি লুৎফর রহমান লুতু বলেন, আমি গতবছরের উৎপাদিত আলু হিমাগারে প্রায় ২ হাজার ৫০০ বস্তা আলু রেখেছিলাম। আলুর দাম না থাকলেও আগাম বিনা সেভেন জাত আলু জমিতে রোপণ করেছি। ৭শ’ বস্তা আলু হিমাগার থেকে এনে ১৩ বিঘা জমিতে আগাম আলু রোপণ করেছি। বাকি আলু ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বীজ বিক্রি করছি। উৎপাদন খরচ অনুযায়ী আলুর দাম পড়েছে ৩০ টাকা।

আগাম  আলু চাষে কৃষকদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। আলু শীত সহিষ্ণু সবজি। শরতে শীতের আমেজ এসেছে। কিন্তু দিনে প্রচ- গরম। অতিরিক্ত গরমে আলু পচে যায়। এ ছাড়াও রয়েছে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা। এই বৃষ্টিতে কৃষকদের ভাগ্য পুড়ে। নতুন করে একই জমিতে আলু রোপণ করতে হয়। এতে আগাম না হয়ে ম্যাডিয়্যাম ভ্যারাইটি ফসল হিসাবে দাম আসে। ফলে অনেক সময় লোকসান গুনতে হয়।

তবুও আবহাওয়ার ওপর ভাগ্য জানিয়ে আলু চাষি মোক্তার হোসেন বলেন, আমি ৮ বিঘা জমিতে আলু চাষ করছি। কারণ বিশেষ করে নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ উপজেলার আলু চাষিরা প্রতিবছর দেশের মধ্যে প্রথম আগাম আলু চাষ করেন। এবারে আলুর নাজুক মূল্য থাকলেও ঝুঁকি নিয়েই আগাম আলু চাষাবাদে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নবাগত উপ পরিচালক মঞ্জুর রহমান বলেন, চলতি বছর নীলফামারী জেলায় ২২ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরমধ্যে আগাম জাতের আলু চাষ করা হচ্ছে  প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে। এ জেলার আগাম জাতের আলুর সূতিকাগার বলা হয় কিশোরীগঞ্জ উপজেলাকে। গত বছর কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় ৭ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে।