১১:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

কোন কাজেই আসছেনা সৈয়দপুর পৌরসভার প্রতিরোধক বার দিনের বেলাতেই শহরে ঢুকছে ভারি যানবাহন, যানজট চরমে

শহরের যানজট নিরসন ও যাতায়াত নিরবচ্ছিন্ন করার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্মিত প্রতিরোধক বার (গেট) কোন কাজেই আসছেনা। প্রতিনিয়তই দিনের বেলাতেই শহরে ঢুকছে ভারি যানবাহন। ফলে চরম যানজট সৃষ্টিসহ যত্রতত্র এসব যানবাহন থেকে মালামাল লোড-আনলোড করার কারণে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতাও দেখা দিচ্ছে। এতে ভোগান্তি কমছেনা শহরবাসীর।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, শহরে সকাল ৯ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত ভারি যানবাহন প্রবেশ ঠেকাতে গত প্রায় ৩ মাস আগে ৫টি পয়েন্টে প্রতিরোধক বার তৈরী করা হয়। প্রায় ৩ লাখ টাকা ব্যায়ে এসব বার নির্মাণ করে আলিফ ইঞ্জিনিয়ারিং। কিন্তু এই বারগুলো তাদরকির জন্য লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। একারণে কার্যকর হচ্ছেনা এই বার। যে কারণে প্রতিদিনই উক্ত সময়সহ সারাদিনরাতই প্রবেশ করছে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ড্রাম ট্রাক, ট্যাংকলড়ি, ট্রলিসহ মালামাল বোঝাই ভারি যানবাহনগুলো।

শুধু তাই নয় এসব মালামাল যেখানে সেখানে লোড-আনলোডও করা হচ্ছে দেদারছে। এমনকি পৌরসভার সামনেই একজন ব্যবসায়ী সবসময়ই রাস্তার উপর তার মালামাল লোড-আনলোড করে চললেও কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। অথচ এপথেই পৌরসভাসহ ফায়ার সার্ভিস, পৌর আধুনিক কমিউনিটি সেন্টার, হিন্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ রোটারী চক্ষু হাসপাতাল বিদ্যমান। এই সড়কে যানবাহন দাড় করিয়ে রেখে মালামাল উঠানামা করানোর ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে সমস্যায় পড়ছেন চলাচলকারীরা। তাদের অভিযোগ একজন রাজনৈতিক নেতার ভাগিনা হওয়ায় এখানে যানবাহন রেখে লোড-আনলোডের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপই নিচ্ছেনা পৌর কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে সোমবার (২৪ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১ টায় গেলে দেখা যায়, ওই সড়কটিসহ শহীদ ক্যাপ্টেন মৃধা সামসুল হক রোডে (বিমানবন্দর সড়ক) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক, রেল স্টেশনগামী সড়কের পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সামনে আহমেদ পার্সেল সার্ভিসের কাভার্ড ভ্যান, শহীদ তুলশীরাম সড়কে (দিনাজপুর রোড) কয়েকটি কুরিয়ার ও পার্সেল সার্ভিসের কাভার্ড ভ্যান সারা দিনই অবস্থান করে মালামাল উঠানামা করছে।

একইভাবে শহরে প্রধানতম ব্যস্ত সড়ক শহীদ ডা. জিকরুল হক রোড, জহুরুল হক রোড, সামসুল হক রোড, রংপুর রোড, শেরে বাংলা রোড ও দিনাজপুর রোডে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে মাঝে মাঝে বড় ধরণের যানজটের ফলে ঘন্টার পর ঘন্টা সড়কগুলোতে যানবাহনসহ সাধারণ জনগণের চলাচল থমকে যায়। সবচেয়ে দূর্ভোগে পড়ে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী-অভিভাবকরাসহ অফিসগামী লোকজন।

এসময় যানবাহনহীন মানুষও আটকা পড়ে যানজটে। কারণ উল্লেখিত সড়কগুলোর ফুটপাত পাশের দোকানদারদের দখলে থাকায় তা ব্যবহার করাও দুরুহ। মাঝে মাঝে ফুটপাত থেকে অবৈধ পসড়া উচ্ছেদে অভিযান চালানো হলেও পরক্ষনই তা আগের মতই দখল হয়ে যায়। নিয়মিত তদারকি না থাকায় এই অবস্থা বলে দাবি সাধারণ মানুষের। অভিযানগুলো লোক দেখানো বলেও অভিযোগ তাদের।

একদিকে ফুটপাত দখল আর অন্যদিকে রাস্তাজুড়ে যানবাহনের আধিক্য। তার উপর নির্দিষ্ট সময়েও ভারি যানবাহন শহরে ঢোকার ফলে পুরো রাস্তা হয়ে পড়ে চলাচল অযোগ্য। যার খেসারত দিতে হচ্ছে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার সর্বস্তরের নাগরিকদের। অথচ এনিয়ে যেন কারো মাথা ব্যাথা নেই। প্রতিরোধক বার নির্মাণ করা হলেও কিভাবে দিনের বেলায় ভারি যানবাহন শহরে প্রবেশ করছে তা জানতে চায় জনগন। অভিযোগ রয়েছে ট্রাফিক পুলিশ ও পৌরসভার লোকজনকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করেই গাড়িগুলো দিনের বেলায় ঢুকছে। যে ব্যবসায়ীদের গাড়ি ঢুকছে তাদের সাথে সখ্যতার কারনেই এমনটা সম্ভব হচ্ছে।

সৈয়দপুর শহর উত্তরাঞ্চলের বাণিজ্যিক কেন্দ্র হওয়ায় এখানে পৌরসভার লোকজনসহ ৫টি ইউনিয়ন ও আশেপাশের উপজেলাগুলোর মানুষ তথা ব্যবসায়ী ও ক্রেতা সাধারনের সমাগম ঘটে এই শহরে। যানজটের ভোগান্তিতে পড়ে তারাও নাজেহাল। শুধুমাত্র প্রতিরোধক বার কার্যকর করে দিনের বেলা ভারি যানবাহন প্রবেশ বন্ধ করা গেলে এই ভোগান্তি থেকে অনেকটা রেহাই মিলবে সকলের। তাই এব্যাপারে পৌর কর্তৃপক্ষের দ্রæত কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করছেন তারা।

সৈয়দপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ও ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিরোধক বারগুলো মূলত: দিনের বেলা ভারি যানবাহন প্রবেশ প্রতিরোধে নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো তদারকির জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। একারণে পৌরসভার লোকজনসহ ট্রাফিক পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছু ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ঢুকে পড়ছে। একারণেই সমস্যা হচ্ছে। তবে আমরা দেখামাত্রই ব্যবস্থা নিচ্ছি।

সৈয়দপুর ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর মাহফুজ আলম বলেন, পৌরসভার প্রতিরোধক বারগুলো কার্যকর করা হলে এক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হবে। তারপরও কোন গাড়ি শহরে ঢুকলে আমরা জরিমানা ও মামলার আওতায় আনছি। অর্থের বিনিময়ে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান প্রবেশের সুযোগ দেয়ার বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, পৌর ভবনের সামনে যে ট্রাক রেখে লোড-আনলোড করা হয় সে বিষয়ে আমি দেখছি। আর শহরের যানজট নিরসনে আগামীকাল থেকে জনসচেতনতামূলক মাইকিং করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

নীলফামারীতে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ইউনিটের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন-২০২৫ অনুষ্ঠিত

কোন কাজেই আসছেনা সৈয়দপুর পৌরসভার প্রতিরোধক বার দিনের বেলাতেই শহরে ঢুকছে ভারি যানবাহন, যানজট চরমে

প্রকাশিত ০৭:০৬:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫

শহরের যানজট নিরসন ও যাতায়াত নিরবচ্ছিন্ন করার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্মিত প্রতিরোধক বার (গেট) কোন কাজেই আসছেনা। প্রতিনিয়তই দিনের বেলাতেই শহরে ঢুকছে ভারি যানবাহন। ফলে চরম যানজট সৃষ্টিসহ যত্রতত্র এসব যানবাহন থেকে মালামাল লোড-আনলোড করার কারণে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতাও দেখা দিচ্ছে। এতে ভোগান্তি কমছেনা শহরবাসীর।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, শহরে সকাল ৯ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত ভারি যানবাহন প্রবেশ ঠেকাতে গত প্রায় ৩ মাস আগে ৫টি পয়েন্টে প্রতিরোধক বার তৈরী করা হয়। প্রায় ৩ লাখ টাকা ব্যায়ে এসব বার নির্মাণ করে আলিফ ইঞ্জিনিয়ারিং। কিন্তু এই বারগুলো তাদরকির জন্য লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। একারণে কার্যকর হচ্ছেনা এই বার। যে কারণে প্রতিদিনই উক্ত সময়সহ সারাদিনরাতই প্রবেশ করছে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ড্রাম ট্রাক, ট্যাংকলড়ি, ট্রলিসহ মালামাল বোঝাই ভারি যানবাহনগুলো।

শুধু তাই নয় এসব মালামাল যেখানে সেখানে লোড-আনলোডও করা হচ্ছে দেদারছে। এমনকি পৌরসভার সামনেই একজন ব্যবসায়ী সবসময়ই রাস্তার উপর তার মালামাল লোড-আনলোড করে চললেও কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। অথচ এপথেই পৌরসভাসহ ফায়ার সার্ভিস, পৌর আধুনিক কমিউনিটি সেন্টার, হিন্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ রোটারী চক্ষু হাসপাতাল বিদ্যমান। এই সড়কে যানবাহন দাড় করিয়ে রেখে মালামাল উঠানামা করানোর ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে সমস্যায় পড়ছেন চলাচলকারীরা। তাদের অভিযোগ একজন রাজনৈতিক নেতার ভাগিনা হওয়ায় এখানে যানবাহন রেখে লোড-আনলোডের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপই নিচ্ছেনা পৌর কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে সোমবার (২৪ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১ টায় গেলে দেখা যায়, ওই সড়কটিসহ শহীদ ক্যাপ্টেন মৃধা সামসুল হক রোডে (বিমানবন্দর সড়ক) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক, রেল স্টেশনগামী সড়কের পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সামনে আহমেদ পার্সেল সার্ভিসের কাভার্ড ভ্যান, শহীদ তুলশীরাম সড়কে (দিনাজপুর রোড) কয়েকটি কুরিয়ার ও পার্সেল সার্ভিসের কাভার্ড ভ্যান সারা দিনই অবস্থান করে মালামাল উঠানামা করছে।

একইভাবে শহরে প্রধানতম ব্যস্ত সড়ক শহীদ ডা. জিকরুল হক রোড, জহুরুল হক রোড, সামসুল হক রোড, রংপুর রোড, শেরে বাংলা রোড ও দিনাজপুর রোডে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে মাঝে মাঝে বড় ধরণের যানজটের ফলে ঘন্টার পর ঘন্টা সড়কগুলোতে যানবাহনসহ সাধারণ জনগণের চলাচল থমকে যায়। সবচেয়ে দূর্ভোগে পড়ে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী-অভিভাবকরাসহ অফিসগামী লোকজন।

এসময় যানবাহনহীন মানুষও আটকা পড়ে যানজটে। কারণ উল্লেখিত সড়কগুলোর ফুটপাত পাশের দোকানদারদের দখলে থাকায় তা ব্যবহার করাও দুরুহ। মাঝে মাঝে ফুটপাত থেকে অবৈধ পসড়া উচ্ছেদে অভিযান চালানো হলেও পরক্ষনই তা আগের মতই দখল হয়ে যায়। নিয়মিত তদারকি না থাকায় এই অবস্থা বলে দাবি সাধারণ মানুষের। অভিযানগুলো লোক দেখানো বলেও অভিযোগ তাদের।

একদিকে ফুটপাত দখল আর অন্যদিকে রাস্তাজুড়ে যানবাহনের আধিক্য। তার উপর নির্দিষ্ট সময়েও ভারি যানবাহন শহরে ঢোকার ফলে পুরো রাস্তা হয়ে পড়ে চলাচল অযোগ্য। যার খেসারত দিতে হচ্ছে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার সর্বস্তরের নাগরিকদের। অথচ এনিয়ে যেন কারো মাথা ব্যাথা নেই। প্রতিরোধক বার নির্মাণ করা হলেও কিভাবে দিনের বেলায় ভারি যানবাহন শহরে প্রবেশ করছে তা জানতে চায় জনগন। অভিযোগ রয়েছে ট্রাফিক পুলিশ ও পৌরসভার লোকজনকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করেই গাড়িগুলো দিনের বেলায় ঢুকছে। যে ব্যবসায়ীদের গাড়ি ঢুকছে তাদের সাথে সখ্যতার কারনেই এমনটা সম্ভব হচ্ছে।

সৈয়দপুর শহর উত্তরাঞ্চলের বাণিজ্যিক কেন্দ্র হওয়ায় এখানে পৌরসভার লোকজনসহ ৫টি ইউনিয়ন ও আশেপাশের উপজেলাগুলোর মানুষ তথা ব্যবসায়ী ও ক্রেতা সাধারনের সমাগম ঘটে এই শহরে। যানজটের ভোগান্তিতে পড়ে তারাও নাজেহাল। শুধুমাত্র প্রতিরোধক বার কার্যকর করে দিনের বেলা ভারি যানবাহন প্রবেশ বন্ধ করা গেলে এই ভোগান্তি থেকে অনেকটা রেহাই মিলবে সকলের। তাই এব্যাপারে পৌর কর্তৃপক্ষের দ্রæত কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করছেন তারা।

সৈয়দপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ও ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিরোধক বারগুলো মূলত: দিনের বেলা ভারি যানবাহন প্রবেশ প্রতিরোধে নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো তদারকির জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। একারণে পৌরসভার লোকজনসহ ট্রাফিক পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছু ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ঢুকে পড়ছে। একারণেই সমস্যা হচ্ছে। তবে আমরা দেখামাত্রই ব্যবস্থা নিচ্ছি।

সৈয়দপুর ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর মাহফুজ আলম বলেন, পৌরসভার প্রতিরোধক বারগুলো কার্যকর করা হলে এক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হবে। তারপরও কোন গাড়ি শহরে ঢুকলে আমরা জরিমানা ও মামলার আওতায় আনছি। অর্থের বিনিময়ে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান প্রবেশের সুযোগ দেয়ার বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, পৌর ভবনের সামনে যে ট্রাক রেখে লোড-আনলোড করা হয় সে বিষয়ে আমি দেখছি। আর শহরের যানজট নিরসনে আগামীকাল থেকে জনসচেতনতামূলক মাইকিং করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।