নীলফামারীর সৈয়দপুরে একজন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও একজন বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মার্কেটের দুইটি দোকান দখল ও ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে।
এমনকি ভাড়াটিয়া হয়েও দোকান নিজের দাবী করে মিথ্যে মামলা দিয়ে মার্কেট মালিক নব্বই বছর বয়সী বিধবাকে হয়রানি করাসহ শারীরিক নির্যাতন ও প্রাণ নাশের হুমকিও দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত বুধবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে মার্কেট চত্বরে প্রকাশ্যে সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালিয়ে হেনস্থা ও আহত করা হয়েছে।
নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ না করায় চুক্তির মেয়াদ শেষে দোকান ছেড়ে দিতে বলায় এই অন্যায়ের শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী মোছা. সাফতারা বেগম। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮ টায় শহরের মুন্সিপাড়ায় নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে লিখিতভাবে তিনি এই অভিযোগগুলো তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, সৈয়দপুর শহরের শেরেবাংলা সড়কের মুন্সিপাড়া এলাকায় রাস্তার সাথেই ‘মঈন ম্যানশন’ মার্কেটটি আমাদের। আমার স্বামী মঈন সিদ্দিকী ১৯৭৫ সালে রেলওয়ের কাছ থেকে বাণিজ্যিক ভূমি লিজ লাইসেন্স এবং ১৯৮৮ সালে পৌরসভার কাছ থেকে প্লট বরাদ্দ নিয়ে প্রথমে ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ ও পরে এই মার্কেটটি করেছেন।
এই মার্কেটের দুইটি দোকান শহরের মুন্সিপাড়া মহল্লার মৃত ভোলা মিয়ার ছেলে পৌর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি ও ৫ নং ওয়ার্ডের সভাপতি মো. আশরাফ হোসেন ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসা করে আসছে। গত ২০০৯ সালে আমার স্বামী মারা যান। এতে ওয়ারিশ হিসেবে আমি দোকান ভাড়ার চুক্তি নবায়ন করি এবং শেষ বার গত ০১-০৫-২০২০ ইং হতে ৩০-০৪-২০২৩ ইং সাল পর্যন্ত ৩ বছরের জন্য চুক্তি করে আশরাফ হোসেনকে দোকান দুইটি ভাড়া দেই।
এই চুক্তির মাত্র দুই মাস পর থেকে সে ভাড়া দেয়া বন্ধ করে। বার বার বলার পরও সে কর্ণপাত করেনি। উল্টো ভাড়া চাইলেই অশোভন আচরণ করে এবং দোকান দখল করে নেয়ার হুমকি দেয়। চুক্তি অনুযায়ী মেয়াদ থাকাকালে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া না যাওয়ায় অপেক্ষায় থাকি। মেয়াদ শেষে দোকান ছাড়ার নোটিশ দেই। কিন্তু সে নানা ওজর আপত্তি দেখিয়ে প্রায় ১১ মাস পার করে। আর ইতোমধ্যে ভূয়া তথ্য দিয়ে রেলওয়ের কাছ থেকে দুই দোকানের আয়তন ৩৮০ বর্গফুট জায়গা কৃষি জমি দেখিয়ে নিজ নামে লিজ করিয়ে নেয়।
আর এই লিজের বলে দোকানের মালিকানা দাবি করে উল্টো আমার নামেই আদালতে দুইটি মামলা করেছে। এভাবে আওয়ামী আমলে দলীয় দাপটে হয়রানি করাসহ পুরো মার্কেট দখলের হুমকি দিয়ে আসছে আশরাফ হোসেন ও তার ভাই ভেজাল হলুদ ব্যবসায়ী আখতার হোসেন ফেকু। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন তথা ৫ আগস্টের পর এই ফেকু নিজেকে বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক আবু নাসের মিঠুর প্রশ্রয়ে ও সেই দাপটে দখল ধরে রেখেছে।
সর্বশেষ লিজ নিতে জালিয়াতির সত্যতা পাওয়ায় গত ১০-০৭-২০২৫ ইং তারিখে আশরাফ হোসেনের লিজ বাতিল করে লিখিত জানিয়ে দিয়েছেন রেলওয়ে বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা। এবং গত ১৭-০৭-২০২৫ ইং তারিখে আমার নামে ওই লিজ নবায়ন করে দিয়েছেন। তারপরও দখল বজায় রেখে বিএনপি নেতা আবু নাসের মিঠুর মাধ্যমে দোকান ছাড়ার জন্য ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আশরাফ। এই টাকা না দিলে কেউ দোকান উদ্ধার করে দিতে পারবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেয় দখলবাজরা।
এর ফলে আমি বাধ্য হয়ে অবৈধভাবে দোকান দখল ও চাঁদা দাবির অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করেছি। এমতাবস্থায় গত বুধবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে মার্কেটে গেলে আশরাফ হোসেন ও আখতার হোসেন ফেকু আমাকে আটকে হেনস্থা করে। পরে আবু নাসের মিঠুও তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে উপস্থিত হয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় ঘিরে ফেলে অকথ্য গালিগালাজ ও ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। এক পর্যায়ে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। এতে আমি দুই হাতে রক্তাক্ত জখম হই। পরে প্রতিবেশী দোকানদার হামিদুল এসে আমাকে রক্ষা করে। তারা হামিদুলের উপরও চড়াও হয়।
এমন পরিস্থিতিতে আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কারণ তারা যে কোন সময় সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে আমাকে মেরে ফেলতে পারে। কেননা মার্কেটে গেলে তারা মেরে লাশ ড্রেনে ফেলে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। আমি বয়স্ক বিধবা মানুষ বাড়িতে একা থাকি। প্রশাসনের কাছে জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি উল্লেখিত ৩ জন রাজনৈতিক দলের নেতার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানানোর সাথে সাথে বিএনপির স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
একইভাবে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতার সাথে মিলে বিএনপির নেতার এমন বেআইনী কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখতে সরকারের উচ্চ মহলসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। যাতে দখলবাজ চক্রের হাত থেকে রক্ষা এবং নিজের বৈধ সম্পত্তি উদ্ধার করে শেষ বয়সে হয়রানিমুক্ত নিরাপদ জীবন যাপন করতে পারেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সাফতারা বেগমের ছেলে রাশেদ সিদ্দিকী, নাতি কাওসেন সিদ্দিকী, মেয়ে মিলা সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী নিশাত আহমেদ, ঠিকাদার লিটনসহ এলাকার শতাধিক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদ কর্মীরা।
আখতার হোসেন ফেকু বলেন,আমরা কাউকে মারডাং করি নাই।কারো কাছে চাঁদাদাবী করি নাই। কোটে মালমা চলছে কোট যে রায় দিবে আমরা মেনে নিবো। মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন বিপক্ষ পাটি।
বিএনপি ছাএ বিষয়ক সম্পাদক আবু নাসের মিঠু বলেন,আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আমার সম্মানহানি করেছেন। আমি রাজনীতি করি মিটিংয়ে ন্যায় কথা বলতে গেলে কারো বিপক্ষে গেলে আমাকে খারাপ বলবে।দোকান কে কেন্দ্র করে কোটে মামলা চলছে। কোটের ইনজেকশন ভেঙে দোকানে ঢুকে পড়ে।




















