০২:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫

সৈয়দপুরে ঠিকাদার লাপাত্তা, মেয়াদ শেষেও রাস্তা সংস্কার কাজ বন্ধ, ভোগান্তিতে পৌরবাসী

টেন্ডার সিডিউল অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হলেও শেষ হয়নি রাস্তার সংস্কার কাজ। ঠিকাদার লাপাত্তা হওয়ায় মাঝপথে থমকে আছে দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস ধরে। আদৌ সংস্কার সম্পন্ন করা হবে কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকাবাসী। অসম্পূর্ণ এবড়ো থেবড়ো রাস্তায় চলাচল হয়ে পড়েছে কষ্টকর ও দূর্বিসহ। এই পরিস্থিতি নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার ৪টি ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, সৈয়দপুর শহরের বেশ কয়েকটি সড়ক সংস্কারের কাজ পায় সাইকি বিল্ডার্স নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে কয়েকটি রাস্তার কাজ সম্পন্ন করলেও গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম ৪টি সড়কের কাজ শুরু করা হলেও মাঝপথে থামিয়ে রাখা হয়েছে। এগুলো হলো- পৌর এলাকার ১৫ নং ওয়ার্ডের মিস্ত্রিপাড়া মন্দির রোড, ১৪ নং ওয়ার্ডের বাঁশবাড়ী মসজিদ বায়তুস সালাম (টালি মসজিদ) রোড, ১০ নং ওয়ার্ডের নয়াবাজার বাণিচাঁদ রোড ও ৮ নং ওয়ার্ডের অফিসার্স কলোনীর ফুলবাগান রোড।

এই রাস্তাগুলোর কাজ শুরু করে ড্রেনের জন্য খোড়াখুড়ি করাসহ রাস্তার আগের কার্পেটিং তুলে ফেলা হলেও তা সমান না করে ভাঙ্গাচুড়া অবস্থাতেই প্রায় ৬ মাস ধরে ফেলে রাখা হয়েছে। বাকি কাজ কবে নাগাদ শুরু করা হবে সে বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। কারণ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন এক প্রকার লাপাত্তা। তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও কাজ শেষ করার বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট সময় জানাতে অপারগতা প্রকাশ করছেন বলে জানান পৌর প্রকৌশল বিভাগ।

দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় এবং ইতোমধ্যে বৃষ্টিপাত হওয়ায় একপ্রকার চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে। যা আগের চেয়েও বেশি ঝুকিপূূর্ণ এবং অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছে। ফলে এলাকাবাসীসহ সড়কগুলোর মাধ্যমে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের চলাচলে ব্যাপক দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর লোকজন জরুরী প্রয়োজনে দ্রæত যাতায়াতের ক্ষেত্রে চরম দূর্দশায় পতিত হচ্ছেন। বিশেষ করে গুরুত্বর অসুস্থ রোগী পরিবহণে অসহনীয় ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। বিকল্প রাস্তায় অনেক দূর ঘুরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সময় ও কষ্ট বেড়েছে।

বাশবাড়ী এলাকার দুলাল হোসেন নামে একজন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে রাস্তার কাজ অর্ধেক করে ফেলে রাখা হয়েছে। এতে আমাদের চলাচল করা দূরহ হয়ে পড়েছে। এর চেয়ে আগেই ভালো ছিল। ভাঙ্গা হলেও কষ্ট করে যাতায়াত করা যেতো। এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে, রাস্তা ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এই পরিস্থিতি আরও কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে। আমরা দ্রæত একাজ শেষ করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

সাবেক মহিলা কাউন্সিলর রুবিনা সাকিল বলেন, মিস্ত্রিপাড়া ও বাঁশবাড়ী এলাকার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি রাস্তার কাজ সম্পন্ন না করে দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রাখায় ১৪ ও ১৫ নং ওয়ার্ডের লোকজনের চলাচল সমস্যা বেড়েছে। তারা জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন। অথচ পৌর প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ কোন ভ্রæক্ষেপ করছেন না। লোকজের ভোগান্তি লাঘবে দ্রæত কাজ শেষ করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ দাবি করেন তিনি।

করোনা পরবর্তী কোভিড-১৯ প্রকল্পের আওতায় সৈয়দপুর পৌরসভার অধিকাংশ রাস্তা সংস্কার ও ড্রেণ নির্মাণ কাজের ঠিকাদারী পায় সাইকি বিল্ডার্স। একটি প্রতিষ্ঠান এতগুলো কাজ কিভাবে পেয়েছে তা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তার উপর তারা সঠিক সময়ে কাজ না করায় পৌরবাসী ভোগান্তি পোহাচ্ছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে পৌর প্রশাসন বা উধ্বতন কর্র্তপক্ষ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এতে জনগণের মাঝে ক্ষোভ বাড়ছে।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সাইকি বিল্ডার্স কর্তৃপক্ষের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কল রিসিভ না করায় তাদের মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

এব্যাপারে সৈয়দপুর পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নুর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, ঠিকাদারকে বার বার বলার পরও গুরুত্ব দিচ্ছেন না। বরং নিজের মত করে সময়ে সময়ে কাজ করছেন। এতে আমরা চরম বিপত্তিতে পড়েছি। মাঝপথে কাজ বন্ধ রাখায় টেন্ডার বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করাও সম্ভব হচ্ছেনা। আবার কাজও সম্পূর্ণ করা যাচ্ছেনা।

বিষয়
জনপ্রিয় সংবাদ

তৃতীয় পক্ষে আন্দোলনে লম্বা ছুটিতে সাবরেজিস্টার, ভোগান্তিতে জমি দাতা ও গ্রহীতারা

সৈয়দপুরে ঠিকাদার লাপাত্তা, মেয়াদ শেষেও রাস্তা সংস্কার কাজ বন্ধ, ভোগান্তিতে পৌরবাসী

প্রকাশিত ০৬:৩৮:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

টেন্ডার সিডিউল অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হলেও শেষ হয়নি রাস্তার সংস্কার কাজ। ঠিকাদার লাপাত্তা হওয়ায় মাঝপথে থমকে আছে দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস ধরে। আদৌ সংস্কার সম্পন্ন করা হবে কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকাবাসী। অসম্পূর্ণ এবড়ো থেবড়ো রাস্তায় চলাচল হয়ে পড়েছে কষ্টকর ও দূর্বিসহ। এই পরিস্থিতি নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার ৪টি ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, সৈয়দপুর শহরের বেশ কয়েকটি সড়ক সংস্কারের কাজ পায় সাইকি বিল্ডার্স নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে কয়েকটি রাস্তার কাজ সম্পন্ন করলেও গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম ৪টি সড়কের কাজ শুরু করা হলেও মাঝপথে থামিয়ে রাখা হয়েছে। এগুলো হলো- পৌর এলাকার ১৫ নং ওয়ার্ডের মিস্ত্রিপাড়া মন্দির রোড, ১৪ নং ওয়ার্ডের বাঁশবাড়ী মসজিদ বায়তুস সালাম (টালি মসজিদ) রোড, ১০ নং ওয়ার্ডের নয়াবাজার বাণিচাঁদ রোড ও ৮ নং ওয়ার্ডের অফিসার্স কলোনীর ফুলবাগান রোড।

এই রাস্তাগুলোর কাজ শুরু করে ড্রেনের জন্য খোড়াখুড়ি করাসহ রাস্তার আগের কার্পেটিং তুলে ফেলা হলেও তা সমান না করে ভাঙ্গাচুড়া অবস্থাতেই প্রায় ৬ মাস ধরে ফেলে রাখা হয়েছে। বাকি কাজ কবে নাগাদ শুরু করা হবে সে বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। কারণ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন এক প্রকার লাপাত্তা। তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও কাজ শেষ করার বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট সময় জানাতে অপারগতা প্রকাশ করছেন বলে জানান পৌর প্রকৌশল বিভাগ।

দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় এবং ইতোমধ্যে বৃষ্টিপাত হওয়ায় একপ্রকার চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে। যা আগের চেয়েও বেশি ঝুকিপূূর্ণ এবং অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছে। ফলে এলাকাবাসীসহ সড়কগুলোর মাধ্যমে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের চলাচলে ব্যাপক দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর লোকজন জরুরী প্রয়োজনে দ্রæত যাতায়াতের ক্ষেত্রে চরম দূর্দশায় পতিত হচ্ছেন। বিশেষ করে গুরুত্বর অসুস্থ রোগী পরিবহণে অসহনীয় ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। বিকল্প রাস্তায় অনেক দূর ঘুরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সময় ও কষ্ট বেড়েছে।

বাশবাড়ী এলাকার দুলাল হোসেন নামে একজন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে রাস্তার কাজ অর্ধেক করে ফেলে রাখা হয়েছে। এতে আমাদের চলাচল করা দূরহ হয়ে পড়েছে। এর চেয়ে আগেই ভালো ছিল। ভাঙ্গা হলেও কষ্ট করে যাতায়াত করা যেতো। এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে, রাস্তা ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এই পরিস্থিতি আরও কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে। আমরা দ্রæত একাজ শেষ করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

সাবেক মহিলা কাউন্সিলর রুবিনা সাকিল বলেন, মিস্ত্রিপাড়া ও বাঁশবাড়ী এলাকার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি রাস্তার কাজ সম্পন্ন না করে দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রাখায় ১৪ ও ১৫ নং ওয়ার্ডের লোকজনের চলাচল সমস্যা বেড়েছে। তারা জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন। অথচ পৌর প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ কোন ভ্রæক্ষেপ করছেন না। লোকজের ভোগান্তি লাঘবে দ্রæত কাজ শেষ করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ দাবি করেন তিনি।

করোনা পরবর্তী কোভিড-১৯ প্রকল্পের আওতায় সৈয়দপুর পৌরসভার অধিকাংশ রাস্তা সংস্কার ও ড্রেণ নির্মাণ কাজের ঠিকাদারী পায় সাইকি বিল্ডার্স। একটি প্রতিষ্ঠান এতগুলো কাজ কিভাবে পেয়েছে তা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তার উপর তারা সঠিক সময়ে কাজ না করায় পৌরবাসী ভোগান্তি পোহাচ্ছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে পৌর প্রশাসন বা উধ্বতন কর্র্তপক্ষ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এতে জনগণের মাঝে ক্ষোভ বাড়ছে।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সাইকি বিল্ডার্স কর্তৃপক্ষের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কল রিসিভ না করায় তাদের মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

এব্যাপারে সৈয়দপুর পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নুর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, ঠিকাদারকে বার বার বলার পরও গুরুত্ব দিচ্ছেন না। বরং নিজের মত করে সময়ে সময়ে কাজ করছেন। এতে আমরা চরম বিপত্তিতে পড়েছি। মাঝপথে কাজ বন্ধ রাখায় টেন্ডার বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করাও সম্ভব হচ্ছেনা। আবার কাজও সম্পূর্ণ করা যাচ্ছেনা।