নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় গবাদিপশুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের প্রার্দুভাব বেড়েই চলেছে। রোগটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার কারনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে গরুর মালিক ও খামারিরা।
এ রোগে আক্লান্ত গরুর চিকিৎসা ব্যায়বহুল হওয়ার কারনে অনেক গুরুর মালিক অসুস্থ গরুগুলো কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছে। আক্লান্ত গরুগুলো স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই জবাই করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মাংশ বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এসব মাংশ খেয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন ক্রেতারা। তাই আক্লান্ত ও অসুস্থ গরু জবাই রোধকল্পে শক্তিশালী বাজার পর্যবেক্ষন ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন ও প্রশাসনিক তদারকির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর সুত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় গবাদীপশুর সংখ্যা এক লাখ ৩০ হাজারের বেশি। সরেজমিনে গিয়ে ও গরুর মালিকদের কাছ থেকে জানা গেছে, উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নে ২০ থেকে ৩০ হাজার গরু লাম্পিস্কিন ডিজিজ(এলএসডি) রোগে আক্লান্ত হয়েছে। তবে উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরের ভেটেরেনারী সার্জন নাহিদ সুলতান বলেন, গোটা উপজেলায় ১০ থেকে ১৫ হাজার গরু এ রোগে আক্লান্ত। তিনি বলেন, মুলত পক্য্র ভাইরাস বা এলএসডি ভাইরাসের সংক্রমনের কারনে গবাদিপশুর মাঝে এ রোগ দেখা দেয় এবং এক গরু থেকে আরেক গরুতে ছড়িয়ে পরে।
গবাদীপশুর জ্বর, লালাক্ষরন,পেটফাঁপা, ও খাওয়া কম হলে গরুর মালিকরা আতঙ্কিত হয়ে পরে। অনেক গরুর মালিক আতঙ্কিত হয়ে গ্রাম্য কবিরাজ, বিভিন্ন প্রশিক্ষন প্রাপ্ত লোকজনের মাধ্যমে ভুল চিকিৎসা নিয়ে থাকে। এতে করে অনেক গরু ভুল চিকিৎসার অভাবে মারা যায়। আবার কিছুর কিছু গরুর মালিক ভুল চিকিৎসার কারনে গরু বেশি অসুস্থ হলে গরু বিক্রি করে দেয়। তিনি গরু মালিকদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, যাদের গবাদীপশু এ রোগে আক্লান্ত তাঁদেরকে অবশ্যই আক্লান্ত গরু ভাল গরু থেকে আলাদা করতে হবে। আক্লান্ত গরু যে জায়গায় থাকবে সেই জায় পরিস্কার পরিছন্ন রাখতে হবে। আক্লান্ত গরু নিয়ে প্রাণীসম্পদ অফিসে এসে সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে। সঠিক চিকিৎসা পেলে আক্লান্ত গরু ভাল হওয়া সম্ভব।
নিতাই ইউনিয়নের মৌলভীর হাট গ্রামের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মৌলভীর হাট, নিতাই, কচুঁকাঁটা,সহ আশেপাশের বিভিন্ন বাজারগুলোতে শেষ রাতের বেলা অসুস্থ গরু জবাই করা হয়। ওদের সিন্ডিকেট অনেক বড়। প্রশাসনের উচিত তাঁদের বিরুদ্ধে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যাবস্থা গ্রহন করা।
কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হোসেন শহীদ সোহরাওয়ারর্দী গ্রেনেট বাবু বলেন, হাট বাজারে গরু জবাই করার আগে অব্যশই গরুর স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা করাতে হবে। কিন্তু আমি এ উপজেলায় জীবনেও গরু জবাইয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে দেখিনি। ব্যবসায়ীরা সুস্থ হোক কিংবা অসুস্থ নিজের মর্জিমত যেটা জবাই করে আমরা ক্রেতারা সেই মাংশই কিনে খাই। আমি এ বিষয়ে প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে গরু জবাইয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিধান আছে কিনা জানতে চাইব।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা , নীল রতন দেবের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে আক্লান্ত গরুর মাংশ খেলে পেটের সমস্যা, লিভারের সমস্যা, মাংশ পেশির সমস্যা, ভাইরাসজনিত সমস্যাসহ নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। তবে তিনি বলেন, আক্লান্ত গরুর মাংশ বেশি সিদ্ধ করে ভালভাবে রান্না করে খেলে সমস্যা কম হতে পারে। তবে আক্লান্ত গরুর মাংশ না খাওয়াই উত্তম।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা নুরুল আজিজ বলেন, অতিরিক্ত গরমের কারনে লাম্পি ডিজিজ দ্রæত বিস্তার লাভ করে। কিন্তু বর্তমানে আবহাওয়া ভাল থাকার কারনে রোগটি নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। লাম্পি আক্লান্ত গরু কম দামে কিনে জবাই করে মাংশ বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। এই মাংশ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, লাম্পি আক্লান্ত গরু নয় যে কোন অসুস্থ গরু জবাই করা আইন বর্হিভুত। অসুস্থ গরু জবাই করার খবর পেলে আইন অনুযায়ী ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
























