নীলফামারীর সৈয়দপুরে শিশু মঙ্গল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষা অফিসার (এটিও) এর অনিয়ম ও দূর্নীতির প্রতিবাদের এবং বিচার ও অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী, অভিভাবক, এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধি।
রোববার (৯ নভেম্বর) সকাল ১১ টা থেকে ১২ পর্যন্ত স্কুলের সামনের সড়কে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে আরও বৃহত্তর কর্মসূচী নেয়া হবে বলে আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, স্কুলটির জমিদাতা ও প্রতিষ্ঠাতা এবং সাবেক সভাপতি মো. রেজাউল করিম পাটোয়ারী, সাবেক সভাপতি ও ইউপি মেম্বার নুরনবী সরকার, অভিভাবক নুর মোহাম্মদ ও সেলিনা বেগম এবং শিক্ষার্থী শারমীন আক্তার ও তাওহীদ হাসান নুর। এসময় প্রায় ২ শতাধিক এলাকাবাসী অংশগ্রহণ করেন।
প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষা অফিসারের অনিয়ম দূর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে মো. রেজাউল করিম পাটোয়ারী বলেন, নিজের জমি দিয়ে ১৯৯২ সালে এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করি। এরপর দীর্ঘদিন কষ্ট করে সুনামের সাথে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। আমার প্রচেষ্টাতেই এখন এটি সরকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। অথচ আমাকেই এখন কোন গুরুত্ব দেয়া হয়না প্রতিষ্ঠানের ভালোমন্দের বিষয়ে। শাহানাজ বেগম প্রধান শিক্ষক হয়ে আসার পর থেকেই এমন আচরণ শুরু করেছেন। আর এর কারণই হলো আমাকে এভয়েড করে দেদারছে অনিয়ম ও দূর্নীতি করা।
তিনি বলেন, গত দুই বছর যাবত প্রতিষ্ঠানের কোন অভিভাবক সমাবেশ হয়না। এছাড়া দুই অর্থবছরের স্লিপের টাকার কোন কাছ করা হয়নি। এমনকি নতুন ভবন করার সময় শহীদ মিনার ভাঙ্গা হয়েছে। এবাবদ ঠিকাদারের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নেয়া হলেও আজও শহীদ মিনার তৈরী করা হয়নি। নতুন ভবন হস্তান্তরের সময় ঠিকাদার ১২টি ফ্যান দিলেও তা নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রেখেছিলেন প্রধান শিক্ষক। পরে এব্যাপারে চাপ দিলে মাত্র ৬টি ফ্যান শ্রেণিকক্ষে লাগানো হয়।
এছাড়া পাম্পের মোটরটিও নিয়ে গেছেন তিনি। একারণে শিক্ষার্থীদের পানির প্রয়োজনে কষ্ট করতে হচ্ছে আগের মতই। সেই সাথে ওয়াইফাই সংযোগের রাউটার এবং স্পিকারও নিজের বাসায় নিয়ে গেছেন প্রধান শিক্ষক। এসব বিষয়ে শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ করলেও কোন ভ্রæক্ষেপ নেই কর্তৃপ্েক্ষর। এনিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর গত ২৩ অক্টোবর বাধ্য হয়ে বাকি ৬টি ফ্যান ও পাম্পের মোটর এনে প্রতিষ্ঠানে লাগিয়েছেন। অথচ এই দূর্নীতির কোন বিচার করা হয়নি। প্রধান শিক্ষক শাহানাজ বেগম ১১ টায় আসেন আর দেড়টার মধ্যে চলে যান। তার মুভমেন্ট সংক্রান্ত কোন রেজিষ্টার মেইনটেনেন্স করা হয়না। এজন্য সহকারী শিক্ষকদের সাথে কথা কাটাকাটিসহ মারামারির ঘটনাও ঘটেছে।
সাবেক সভাপতি ও কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড মেম্বার নুর নবী সরকার বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার দায়িত্ব থেকেই প্রতিষ্ঠানটির খোঁজখবর রাখি। এতে দেখা গেছে নতুন ভবনের ৬টি ফ্যানসহ পুরাতন ১১ টি ফ্যানের মধ্যে ৭টি এবং পাম্পের মোটর প্রধান শিক্ষক শাহানাজ বেগম ও এটিও মরিয়ম নেছা নিয়ে গিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন। পুরাতন বেঞ্চ বিক্রি করে দিয়েছেন এবং স্লিপের টাকা মেরে দিয়েছেন। অথচ এ সংক্রান্ত কোন রেজুলেশন নেই। জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক অসৌজন্যমূলক আচরণ করে বলেন, রেজুলেশন খাতা বাড়িতে আছে, আপনাকে দেখাতে হবে কেন। পরে সহকারী শিক্ষা অফিসার মরিয়ম নেছাকে বিষয়টি জানালে তিনিও একই সুরে কথা বলেন। তারা দুইজনে মিলে স্কুলের পরিবেশ নষ্ট করে ফেলেছে। তাদের অনিয়ম ও দূর্নীতির বিচার চাই। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাদেরকে অপসারণ করতে হবে। নয়তো তাদের এলাকায় অবাঞ্চিত করাসহ আরও বৃহত্তর আন্দোলন করা হবে।
অভিভাবক নুর মোহাম্মদ ও সেলিনা বেগম বলেন, প্রধান শিক্ষক ও এটিও মিলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেছে। একারণে আমরা শিশুদের বিদ্যালয়ে পড়ালেখার জন্য পাঠালেও তাদের যথাযথ শিক্ষা দেয়া হচ্ছেনা। বরং তাদেরকে দিয়ে টয়লেট পরিষ্কার, ঝাড়– দেয়া ও পানি আনার কাজ করা হয়। প্রতিষ্ঠানের পানির পাম্প থাকলেও মোটর প্রধান শিক্ষক নিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ায় পানি নিয়ে সংকট। ভিতরে টিউবওয়েল থাকলেও সেখানে শিক্ষার্থীরা গেলে বকাঝকা করা হয়। ফ্যানগুলো এটিও ও প্রধান শিক্ষক নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের গরমে কষ্ট করতে হয়েছে। অথচ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর এখন শীতকালে এসে ফ্যান লাগানো হয়েছে। এছাড়া স্কুলের পুরাতন বেঞ্চ এলাকার স্বপ্ন সিড়ি নামের একটি প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। এধরণের অনিয়মের বিচার হওয়া দরকার। নয়তো শিশুরা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে। এজন্য দূর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষককের অপসারণ ও বিচার দাবি করছি।
শিক্ষার্থী শারমীন আক্তার (৪র্থ) ও তাওহীদ হাসান নুর (৫ম) বলেন, আমাদেরকে দিয়ে প্রধান শিক্ষক শাহানাজ বেগম টয়লেট পরিষ্কার করান, স্কুল ঝাড়– দেয়া ও পানি আনার কাজ করান। করতে না চাইলে নোংরা ভাষায় গালিগালাজ করেন। ঠিকভাবে পড়ালেখা করান না। তিনি ১১ টায় এসে দেড়টার মধ্যেই চলে যান। আমাদের পুরাতন শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। গরমের সময় ফ্যান না লাগিয়ে এখন শীতের সময় এসে ফ্যান লাগালেন। এতদিন ফ্যান ও পাম্পের মোটর প্রধান শিক্ষক ও এটিও ম্যাডাম নিজেদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রেখেছিলেন। এসব কারণে আমরা খুবই কষ্টে আছি। আমরা তাদের অনিয়ম ও দূর্নীতির বিচার চাই এবং অবশ্যই তাদেরকে এই প্রতিষ্ঠান থেকে অপসারণ করতে হবে।























