নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম দীর্ঘ দুই যুগ অর্থাৎ ২৪ বছর ধরে একই কর্মস্থলে চাকুরী করছেন। বদলীযোগ্য চাকুরী হলেও সংশ্ল্ষ্টি কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে লাগাতার অবস্থান করছেন তিনি। যার কারণে ঠিকাদার ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে সখ্যতার সুযোগে ব্যাপকভাবে দূর্নীতি করেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
৭ নভেম্বর (শুক্রবার) বিগত দিনে নানা অনিয়মের সাথে জড়িত থাকলেও কিছুই হয়নি তার। সরকার বা মেয়র পরিবর্তন হলেও তার টিকিটিও নড়েনি। এমনকি চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়েও দেদারছে নিম্নমানের কাজ করে চলেছেন দাপটের সাথে।
জানা যায়, ২০০১ সালের ১ সেপ্টেম্বর সৈয়দপুর পৌরসভায় যোগদান করেন। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত এখানে কর্মরত। দীর্ঘদিনে তার কোন বদলী হয়নি। এই সুযোগে তিনি পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগে নিজস্ব সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। এই সিন্ডিকেটের বাইরে কোন প্রকৌশলী বা কর্মকর্তা-কর্মচারী গেলেই তাকে বদলী হতে হয়। পুরাতন হওয়ায় নতুন কেউ আসলেও তার কথামতই কাজ করতে বাধ্য হন। এই সিন্ডিকেটের দাপটেই চলছে তার অনিয়ম দূর্নীতির রমরমা কারবার। যেসব উন্নয়ন কাজ তার অধীনে হয় সেগুলোতে নিম্নমানের কাজের সুযোগ দিয়ে ঠিকাদারদের নিজের পক্ষে রেখেছেন। বিনিময়ে মোটা অংকের কমিশন হাতিয়ে নিয়ে পকেটস্থ করছেন।
সহকারী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম মূলতঃ পৌল পহিকল শাখার তদারকির দায়িত্বে আছেন। একারণে এই শাখার অধীন সবধরণের গাড়ির তেলের বিলসহ মেরামতের যাবতীয় কাজ তার হাতেই। আর এই সুযোগে তিনি গাড়িগুলোর তেল ও মেরামত বাবদ অতিরিক্ত বিল দেখিয়ে যেমন সরকারী অর্থ তসরূপ করছেন। তেমনি তার দায়িত্বে হওয়া রাস্তা-ড্রেনসহ অন্যান্য অবকাঠামো সংস্কার ও তৈরীর কাজগুলোর এসও হিসেবেও আর্থিক সুবিধা নিয়ে নিম্নমানের কাজ করাচ্ছেন বরাবর। একারণে তার দায়িত্বে যে সকল উন্নয়ন কাজ হয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগই মেয়াদের আগেই আবারও নষ্ট হয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি তার মাধ্যমেই পৌরসভার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ও বড় বাজেটের রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। এসব কাজে তিনি অত্যন্ত নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে নিজে উপস্থিত থেকে ঠিকাদারদের সহযোগিতা করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়ক থেকে শুরু করে মাছ বাজার ও কাপড় মার্কেট হয়ে পোস্ট অফিস মোড় পর্যন্ত চলে যাওয়া শহীদ ডা. সামসুল হক রোড। এই সড়কটির দক্ষিনের মাথার অংশ কংক্রিট ঢালাই দেয়া হয়েছে এবং বাকিটুকু কার্পেটিং করার কথা। কিন্তু কংক্রিটের ক্ষেত্রে নিম্নমানের রড ব্যবহার এবং রডের মাঝের গ্যাপ বেশি দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে পাথর-সিমেন্ট ও বালুর রেসিওর ক্ষেত্রে কম বেশি করা হয়েছে।
আর কার্পেটিং অংশে অত্যন্ত নিন্মমানের ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি থ্যাংক ক্লথ স্টোর এলাকায় পুরাতন ইটের খোয়া সিমেন্টের পলেস্তেরাসহ দেয়া হয়েছে। এতে এলাকার ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ জানালেও কোন ভ্রুক্ষেপ করেননি প্রকৌলশলী কামরুল ইসলাম। বরং তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে নিম্নমানের ওই ইটের খোয়া বিছানোর সময় ঠিকাদারকে সহায়তা করেছেন। পরে খবর পেয়ে সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলে তিনি নাটকীয়ভাবে হঠাৎ ঠিকাদারের লোকজনের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বকাঝকা করেন এবং একট্রলি ওই খোয়া ফিরিয়ে দেন। কিন্তু সংবাদকর্মীরা আসার পরই আবারও সেই আগের খোয়াই বিছানো হয়েছে।
এভাবে ফল আড়ৎ দিয়ে হাতিখানাগামী সড়কের ঢালাইয়ের ক্ষেত্রে এবং তার আগে চালহাটি মোল্লা রোডের কাজেও ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। তাছাড়া সৈয়দপুর প্লাজার পিছনে তুলশীরাম স্কুল সংলগ্ন রোডের ক্ষেত্রেও একই অভিযোগে রয়েছে। এসব বিষয়ে বার বার জানানোর পরও কর্র্তৃপক্ষ নির্বিকার। ফলে নিন্মমানের উপকরণে হওয়া এসব সড়কের স্থায়িত্ব নিয়ে আশংকা রয়েছে। অন্যদিকে তার নামে ইউএনডিপি কর্তৃক বরাদ্দকৃত সুজুকি হায়াতি মোটর সাইকেল তিনি নিজে না চালিয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার সামিউলকে দিয়েছেন। সামিউল ব্যক্তিগত কাজে সেই মোটর সাইকেল ব্যবহার করছেন। অথচ এই মোটর সাইকেল চালানো বাবদ তেল খরচ নিয়মিত নিচ্ছেন সহকারী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম। তাও আবার বরাদ্দকৃত ৮ লিটার তেলের জায়গায় ১৫ লিটারের দাম।
তার এসব অনিয়ম দূর্নীতির বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি দীর্ঘদিন থেকে সৈয়দপুর পৌরসভায় কর্মরত থাকার বিষয় স্বীকার করে বলেন, অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ সঠিক নয়। প্রকৃতই যদি দূর্নীতি করতাম তাহলে অবশ্যই আমাকে বদলী করা সহ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হতো। আর ইউএনডিপির মোটর সাইকেলটি পৌরসভায় রাখা আছে। যখন যার প্রয়োজন হয় তখন সে এটি ব্যবহার করে। এজন্য মাঝে মাঝে পৌরসভা থেকে তেলের খরচ নেয়া হয়। অন্যথায় আমরা নিজেরাই তেল কিনে ব্যবহার করি। এ সংক্রান্ত অভিযোগও সঠিক নয়।
সৈয়দপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলীর বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। তাই সহকারী প্রকৌশলী কামরুল ইসলামের দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকার বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই। তবে সম্প্রতি এই বদলীর ইখতিয়ার দেয়া হয়েছে বিভাগীয় প্রকৌশলীকে। আর ইউএনডিপির মোটর সাইকেলটি আগে কামরুল ইসলাম নিজের বাসায় নিয়ে যেতেন। পরে আমি নিষেধ করায় তা এখন পৌরসভাতেই রাখা হয়। পৌরসভার কাজেই এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই এটির তেল খরচ পৌরসভা থেকেই দেয়া হয়। কেউ এটা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছে কি না তা আমার জানা নেই।
এব্যাপারে পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর-ই-আলম সিদ্দিকীর মন্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। একারণে তার মতামত জানা সম্ভব হয়নি।























