০৭:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫

সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে খাবার প্রদানে অব্যবস্থাপনা, ভোগান্তিতে শত শত রোগী

সময়মত খাবার না দেয়া এবং পরিমাণে কম দেয়ার মত অব্যবস্থাপনা চলছে নীলফামারীর সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে। বৃহস্পতিবারও (২৩ অক্টোবর) রোগীদের দুপুরের খাবার বেলা ১২ টার পরিবর্তে দেয়া হয়েছে বেলা সাড়ে ৩ টায়। ফলে দীর্ঘ সময় খাবার না পেয়ে রোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। বাধ্য হয়ে অনেক রোগী বাইরে থেকে খাবার কিনে খেয়েছে। 

এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঠিকাদারের দায়িত্বে থাকায়  দীর্ঘদিন থেকে এই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কারণ তিনি পালিয়ে থেকেও আগের মতই দূর্নীতি অনিয়ম অব্যাহত রেখেছেন। যার খেসারত দিতে হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা অসহায় দরিদ্র মানুষদের। দিনের পর দিন এই দূরাবস্থা চললেও নির্বিকার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।

বেলা ৩ টাতেও রোগীদের দুপুরের খাবার দেয়া হয়নি খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সংবাদ কর্মীরা হাসপাতালে গেলে দেখা যায়, বাবুর্চি তখনও মুরগীর মাংস কাটছে। মাংসের পরিমাণ বরাদ্দের চেয়ে কম অর্থাৎ ৯ কেজি। আর চুলায় ভাত ও ডাল রান্না করা হচ্ছে। এসময় বাবুর্চি জানায়, প্রতিদিন ঠিক সময়ই খাবার রান্না হয়, কিন্তু আজ ঠিকাদার বাজার এনে দিয়েছে দেরিতে। তাই কেবল চুলা ধরানো হয়েছে।

উপস্থিত ঠিকাদারের প্রতিনিধি  বাদশা বলেন, মূলত: ঠিকাদার হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিনুল হক মহসিন ও কাজল। তাদের অনুপস্থিতিতে আমার ছেলে বাবুল মালামাল সরবরাহ করে। কিন্তু সে অসুস্থ তাই আমি বাজার নিয়ে এসেছি। এজন্য লেট হয়েছে। এরপর তিনি ঠিকাদার মহসিনকে মোবাইল করেন কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার গছাহারা আলোকডিহি এলাকার দরিদ্র রোগী তাহেরা বেগম (৬০) ডায়ারিয়া আক্রান্ত হয়ে বুধবার বিকেলে হাসপাতাল ভর্তি হয়েছেন। গতরাতে ও সকালে খাবার দিলেও দুপুরের খাবার এখনও দেয়নি। ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে বেলা আড়াইটায় হাসপাতাল থেকে বের হয়ে বাইরে গিয়ে একটু চিড়া আর কলা খেয়ে আসলাম।

সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের কাঙ্গালপাড়ার তহিদুল ইসলামের স্ত্রী শাবানা (৪০) বলেন, গতরাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। সকালে নাস্তা পাইনি। এখন প্রায় সাড়ে ৩ টা অথচ এখনো দুপুরের খাবারও দেয়া হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে স্বামী-স্ত্রী হাসপাতালের বাইরে যাচ্ছি খাবার কিনে খেতে। কিন্তু এমন কেন করা হচ্ছে বলে জানতে চান তারা।

একজন রোগীর স্বজন আফরোজা (২৫) বলেন, বেলা ১২ টার খাবার দেয়া হলো সাড়ে ৩ টায়। এতো দেরিতে দুপুরের খাবার দেয়ায় ওষুধও সঠিক সময়ে খাওয়া হয়নি। এতে রোগীদের চিকিৎসায় খুবই সমস্যা হচ্ছে। এভাবে কি সরকারি হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম চলতে পারে? সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের মত এতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে এমন অব্যবস্থাপনা মেনে নেয়ার মতো নয়।

এব্যাপারে স্থানীয়রা জানান, হাসপাতালে ব্যাপক অনিয়ম দূর্নীতি চলছে। বিশেষ করে রোগীদের খাবার দেয়ার ক্ষেত্রে। এখানে ১০০ শয্যার জন্য মূলতঃ প্রতি বেলায় রোগী প্রতি ন্যুনতম ১০০ গ্রাম মাছ বা মাংস বরাদ্দ। সেই হিসেবে রাতে ও দুপুরে মাছ মাংস রান্না করার কথা ১০ কেজি করে মোট ২০ কেজি। কিন্তু প্রতিদিন নিম্নে ৮ কেজি থেকে ১৫ কেজি কেনা হয়। একারণে রোগীদের দেয়া মাছ ও মাংসের টুকরো ৫০-৭০ গ্রাম সাইজের করা হয়।

আর ডাল ও সবজির ক্ষেত্রে কমদামিগুলো আনা হয় এবং ভাতের চালও রান্না করা হয় নিম্নমানের। এভাবে লুটপাট চলছে খাবার নিয়ে। একারণে মানসম্মত খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আমাদের এলাকার লোকজন। অথচ বেশি দাম দেখিয়ে  সরকারি বরাদ্দ যথাযথ তুলে নেয়া হচ্ছে ঠিকই। আওয়ামী আমলের পুরো সময় ধরে এমন দূর্নীতি দলীয় দাপটে করেছেন ঠিকাদার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিন। এখনও কিভাবে তার অপকর্ম বিদ্যমান? এই প্রশ্ন সকলের।

পরে ঠিকাদার মহসিনুল হক মহসিন মুঠোফোন সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় কয়েকজন চাঁদা দাবির প্রেক্ষিতে কয়েকদিন থেকে সঠিক সময়ে বাজার করতে সমস্যায় পড়েছে আমার প্রতিনিধি। তারা সবসময় হাসপাতালের রান্নাঘরে এসে বসে থাকছে এবং টাকার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে। একারণে সে সরাসরি সেখানে যেতে পারছেনা। তাই রান্নায় ব্যাঘাত ঘটছে এবং খাবার পরিবেশনে হেরফের হচ্ছে।

সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. নাজমুল হুদা বলেন, মূলত: ঠিকাদার পলাতক থাকায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। গত বছর নতুন টেন্ডারের উদ্যোগ নেয়া হলে একজন ঠিকাদার আদালতে মামলা করে। এর প্রেক্ষিতে আদালত নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় ঠিকাদার পরিবর্তন করা সম্ভব হচ্ছেনা। তার প্রতিনিধি খাবার পরিবেশন করেন। আজকে সে অসুস্থ থাকায় সময়মতো খাবার দেয়ায় এই সমস্যা হয়েছে। খাবার কম দেয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

নীলফামারীতে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ইউনিটের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন-২০২৫ অনুষ্ঠিত

সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে খাবার প্রদানে অব্যবস্থাপনা, ভোগান্তিতে শত শত রোগী

প্রকাশিত ১২:৫৭:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

সময়মত খাবার না দেয়া এবং পরিমাণে কম দেয়ার মত অব্যবস্থাপনা চলছে নীলফামারীর সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে। বৃহস্পতিবারও (২৩ অক্টোবর) রোগীদের দুপুরের খাবার বেলা ১২ টার পরিবর্তে দেয়া হয়েছে বেলা সাড়ে ৩ টায়। ফলে দীর্ঘ সময় খাবার না পেয়ে রোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। বাধ্য হয়ে অনেক রোগী বাইরে থেকে খাবার কিনে খেয়েছে। 

এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঠিকাদারের দায়িত্বে থাকায়  দীর্ঘদিন থেকে এই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কারণ তিনি পালিয়ে থেকেও আগের মতই দূর্নীতি অনিয়ম অব্যাহত রেখেছেন। যার খেসারত দিতে হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা অসহায় দরিদ্র মানুষদের। দিনের পর দিন এই দূরাবস্থা চললেও নির্বিকার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।

বেলা ৩ টাতেও রোগীদের দুপুরের খাবার দেয়া হয়নি খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সংবাদ কর্মীরা হাসপাতালে গেলে দেখা যায়, বাবুর্চি তখনও মুরগীর মাংস কাটছে। মাংসের পরিমাণ বরাদ্দের চেয়ে কম অর্থাৎ ৯ কেজি। আর চুলায় ভাত ও ডাল রান্না করা হচ্ছে। এসময় বাবুর্চি জানায়, প্রতিদিন ঠিক সময়ই খাবার রান্না হয়, কিন্তু আজ ঠিকাদার বাজার এনে দিয়েছে দেরিতে। তাই কেবল চুলা ধরানো হয়েছে।

উপস্থিত ঠিকাদারের প্রতিনিধি  বাদশা বলেন, মূলত: ঠিকাদার হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিনুল হক মহসিন ও কাজল। তাদের অনুপস্থিতিতে আমার ছেলে বাবুল মালামাল সরবরাহ করে। কিন্তু সে অসুস্থ তাই আমি বাজার নিয়ে এসেছি। এজন্য লেট হয়েছে। এরপর তিনি ঠিকাদার মহসিনকে মোবাইল করেন কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার গছাহারা আলোকডিহি এলাকার দরিদ্র রোগী তাহেরা বেগম (৬০) ডায়ারিয়া আক্রান্ত হয়ে বুধবার বিকেলে হাসপাতাল ভর্তি হয়েছেন। গতরাতে ও সকালে খাবার দিলেও দুপুরের খাবার এখনও দেয়নি। ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে বেলা আড়াইটায় হাসপাতাল থেকে বের হয়ে বাইরে গিয়ে একটু চিড়া আর কলা খেয়ে আসলাম।

সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের কাঙ্গালপাড়ার তহিদুল ইসলামের স্ত্রী শাবানা (৪০) বলেন, গতরাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। সকালে নাস্তা পাইনি। এখন প্রায় সাড়ে ৩ টা অথচ এখনো দুপুরের খাবারও দেয়া হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে স্বামী-স্ত্রী হাসপাতালের বাইরে যাচ্ছি খাবার কিনে খেতে। কিন্তু এমন কেন করা হচ্ছে বলে জানতে চান তারা।

একজন রোগীর স্বজন আফরোজা (২৫) বলেন, বেলা ১২ টার খাবার দেয়া হলো সাড়ে ৩ টায়। এতো দেরিতে দুপুরের খাবার দেয়ায় ওষুধও সঠিক সময়ে খাওয়া হয়নি। এতে রোগীদের চিকিৎসায় খুবই সমস্যা হচ্ছে। এভাবে কি সরকারি হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম চলতে পারে? সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের মত এতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে এমন অব্যবস্থাপনা মেনে নেয়ার মতো নয়।

এব্যাপারে স্থানীয়রা জানান, হাসপাতালে ব্যাপক অনিয়ম দূর্নীতি চলছে। বিশেষ করে রোগীদের খাবার দেয়ার ক্ষেত্রে। এখানে ১০০ শয্যার জন্য মূলতঃ প্রতি বেলায় রোগী প্রতি ন্যুনতম ১০০ গ্রাম মাছ বা মাংস বরাদ্দ। সেই হিসেবে রাতে ও দুপুরে মাছ মাংস রান্না করার কথা ১০ কেজি করে মোট ২০ কেজি। কিন্তু প্রতিদিন নিম্নে ৮ কেজি থেকে ১৫ কেজি কেনা হয়। একারণে রোগীদের দেয়া মাছ ও মাংসের টুকরো ৫০-৭০ গ্রাম সাইজের করা হয়।

আর ডাল ও সবজির ক্ষেত্রে কমদামিগুলো আনা হয় এবং ভাতের চালও রান্না করা হয় নিম্নমানের। এভাবে লুটপাট চলছে খাবার নিয়ে। একারণে মানসম্মত খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আমাদের এলাকার লোকজন। অথচ বেশি দাম দেখিয়ে  সরকারি বরাদ্দ যথাযথ তুলে নেয়া হচ্ছে ঠিকই। আওয়ামী আমলের পুরো সময় ধরে এমন দূর্নীতি দলীয় দাপটে করেছেন ঠিকাদার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিন। এখনও কিভাবে তার অপকর্ম বিদ্যমান? এই প্রশ্ন সকলের।

পরে ঠিকাদার মহসিনুল হক মহসিন মুঠোফোন সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় কয়েকজন চাঁদা দাবির প্রেক্ষিতে কয়েকদিন থেকে সঠিক সময়ে বাজার করতে সমস্যায় পড়েছে আমার প্রতিনিধি। তারা সবসময় হাসপাতালের রান্নাঘরে এসে বসে থাকছে এবং টাকার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে। একারণে সে সরাসরি সেখানে যেতে পারছেনা। তাই রান্নায় ব্যাঘাত ঘটছে এবং খাবার পরিবেশনে হেরফের হচ্ছে।

সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. নাজমুল হুদা বলেন, মূলত: ঠিকাদার পলাতক থাকায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। গত বছর নতুন টেন্ডারের উদ্যোগ নেয়া হলে একজন ঠিকাদার আদালতে মামলা করে। এর প্রেক্ষিতে আদালত নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় ঠিকাদার পরিবর্তন করা সম্ভব হচ্ছেনা। তার প্রতিনিধি খাবার পরিবেশন করেন। আজকে সে অসুস্থ থাকায় সময়মতো খাবার দেয়ায় এই সমস্যা হয়েছে। খাবার কম দেয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।