নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের রেলওয়ে স্টেশন এলাকা বর্তমানে অপরাধীদের নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে। চুরি, যাত্রীদের ব্যাগ টানা-হেঁচড়া, মাদক কেনা-বেঁচা, সেবন ও পতিতাবৃত্তিসহ এমন কোনো অপরাধ নেই, যা’ এখানে ঘটছে না। সন্ধ্যার পর রেলস্টেশন ছাড়াও আশপাশের এলাকা আরও ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করছে।
প্রায় প্রকাশ্যে চলছে মাদক কেনা-বেঁচাসহ মাদক সেবনের আখরা। রেলওয়ে থানার ১০০ গজ পুর্বপাশে চলছে জমজমাট জুয়ার আসর। এছাড়া লোহা ও রেললাইনের স্লিপার সুকৌশলে চুরির ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের চোখের সামনে এসব অপরাধ ঘটলেও তারা কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না।
স্থানীয়রা জানান, রেলওয়ে স্টেশনের উত্তর পশ্চিম দিকে রেলওয়ে শ্রমিক কার্যালয়ে সন্ধ্যার পর প্রায় প্রতিদিনই মাদক বিক্রিসহ মাদকের আখরা বসছে। স্টেশন সংলগ্ন রেলওয়ে থানার ৫০ গজ পুর্ব পাশে চামুয়া ও বাদশা নামে দুই ব্যক্তি প্রায় প্রতি রাতেই বসাচ্ছেন জমজমাট জুয়ার আসর।
ট্রেনে চলাচলকারী সাধারণ যাত্রীসহ স্থানীয়দের অভিযোগ, রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফর্মগুলোর আশপাশের বেশিরভাগ জায়গা ঘিরে সক্রিয় রয়েছে একাধিক ভাসমান অপরাধী চক্র। বিভিন্ন সময়ে যাত্রী ও পথচারীদের মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যায় তারা। মাদক বিক্রি, সেবনের আখরা ও জুয়ার আখরার বিষয়ে রেলওয়ে পুলিশকে অভিযোগ দিয়েও যথাযথ কোন ব্যবস্থাই নেওয়া হয়না।
ভুক্তভোগীরা জানান, আগে দেখা যেতো বাস টার্মিনাল গুলোতে অপরাধীদের আনাগোনা বেশি ছিল কিন্তু বর্তমানে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন যেন সবধরনের অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য।
শনিবার (৪ অক্টোবর) রাত দশটায় সরেজমিন সংবাদকর্মীরা গেলে দেখা যায়, রেল স্টেশনের উত্তর পাশে প্লাটফর্মে উঠার সময় মসজিদের পাশে টয়লেট সংলগ্ন ভাসমান মানুষের জটলা। সেখানে রয়েছে একটি দোকান। তারই ফাঁকে দেহ ব্যবসায়ি নারীদের সঙ্গে দর কষাকষি করছে দালালরা। টয়লেট সংলগ্ন যারা জটলা করছে তাদের শ্রমিকলীগ কার্যালয় এলাকায় প্রায় সময় দেখা যায়। আর তারাই রেলওয়ে স্টেশনের উত্তর পাশে প্রকাশ্যে ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি করছে।
চিহ্নিত মাদকসেবীদের পাশাপাশি রিকশা-চালক ও নিম্ন আয়ের মানুষকেও গাঁজা ও ইয়াবা কিনতে দেখা যায়। এক সময়ের চিহ্নিত ফেনসিডিল ব্যবসায়ি বেবিয়ার স্বামী বাবুয়ার ছত্র-ছায়ায় সেখান থেকে খুব সহজেই ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাঁজাসহ প্রায় সব ধরনের মাদক বিক্রি হচ্ছে। এ কারনে প্লাটফর্ম ও আশপাশ এলাকায় দেখা যায় ভাসমান অপরাধীদের আনা-গোনা। এসব অপরাধীর টার্গেট থাকে ট্রেনের যাত্রীরা। মাদক সেবিরা ট্রেন ছাড়ার সময়ে জানালার পাশে থাকা যাত্রীদের মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান জিনিস ছোঁ মেরে নিয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেলস্টেশন সংলগ্ন জিআরপি থানার ৫০ গজ পূর্ব পাশে জটলা করে প্রতিদিন বহু মানুষ তিন কার্ডের জুয়া খেলায় ব্যস্ত থাকেন। বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে গোল করে মাটিতে বসে চলে জমজমাট জুয়ার আসর। শ্রমিকদের পাশাপাশি বিত্ত্ববান পরিবারের বখাটে সন্তানরাও অংশ নেয় ওই জুয়ার আসরে।
জুয়ার পাশাপাশি গভীর রাত পর্যন্ত চলে মদ ও বিভিন্ন নেশার আসর। এ সকল বিষয়ে জিআরপি থানা পুলিশ অবগত থাকলেও কোন পদক্ষেপই নেওয়া হচ্ছেনা বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
এসব বিষয়ে জানতে জিআরপি থানার অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুন্নবীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাকে না পাওয়ায় তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।





















