০৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫
সভাপতি ও অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে

সৈয়দপুর লায়ন্স স্কুলের শিক্ষকদের আন্দোলনের সাথে শিক্ষার্থীরা একাট্টা

নীলফামারীর সৈয়দপুর লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজের সভাপতি ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগে তাদের পদত্যাগের দাবিতে চলমান শিক্ষকদের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে যোগ দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ২ টায় স্কুল ছুটির পর শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানের সামনে সৈয়দপুর শহরের প্রধান সড়ক শহীদ ক্যাপ্টেন মৃধা সামসুল হক সড়কটি অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে।

এতে ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর, সেনানিবাস ও উপজেলা পরিষদগামী  এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হয় চালকসহ যাত্রী ও সাধারণ মানুষ। এ খবর লেখা পর্যন্ত (বিকেল ৫ টা) আন্দোলন অব্যাহত আছে।তবে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর ই আলম সিদ্দিকী স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করছেন।

জানা যায়, নিয়োগ বাণিজ্য, শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির খরচের নামে অর্থ আদায়, প্রতিষ্ঠানের আয় লায়ন্স ক্লাবে ব্যবহার, প্রতিষ্ঠানের গাড়ী ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ওঠেছে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শফিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে।

এ ছাড়া সভাপতি হওয়ার পর থেকে নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা না করে প্রতিমাসে ৭০ হাজার টাকা বেতন নেওয়া, প্রতিষ্ঠানের অর্থ লোপাটের অভিযোগ তুলেছেন ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। একই সাথে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মশিউর রহমান নিয়োগ বিধি লঙ্ঘন করে ৩ বছর ধরে পদ বাগিয়ে রেখেছেন এবং শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার খর্ব করে সভাপতির দূর্নীতির সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন বলেও অভিযোগ তাদের।

লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজ শিক্ষক ফোরামের সভাপতি মজিবর রহমান চৌধুরী বলেন, অভিযোগ নিয়ে শিক্ষকরা প্রথমে মৌখিকভাবে সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে পদত্যাগ করার দাবি জানালেও গুরুত্ব না দেওয়ায় গত ৮ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বরাবর শিক্ষক ফোরামের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে লিখিতভাবে দরখাস্ত দেওয়া হয়।

কিন্তু তিনি তা আমলে না নিয়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শোকজ নোটিশ ও ২ জন সিনিয়র শিক্ষককে কর্মস্থলে না আসার মত স্বৈরাচারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এমনকি বহিরাগত লোকজন ডেকে শিক্ষকদের লাঞ্চিত করার চেষ্টা চালান। তাঁর এমন ঘটনায় সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা এর প্রতিবাদ করেন। এরপর  আমাদের সাথে আলোচনা করার কথা বলে টালবাহানা করে দিন ক্ষেপণ করতে থাকে সভাপতি।

শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রবিউল হক বলেন, মাঝে অধ্যক্ষ আমাদের সাথে বসলেও সভাপতির সাফাই গাওয়ায় আলোচনা ফলপ্রসু হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে গত রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর ই আলম সিদ্দিকীর কাছে এবং মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসক মো. নায়িরুজ্জামান কে এ সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

অভিযোগে নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রতি মাসে সভাপতি কর্তৃক ৭০ হাজার টাকা বেতন গ্রহণ, নিয়োগ বাণিজ্য, এমপিও ভুক্তির খরচের নামে প্রতি শিক্ষকের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া, প্রতিষ্ঠানের গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা ও বিভিন্ন অজুহাতে প্রতিষ্ঠানের অর্থ নয়ছয় করাসহ অনিয়মের ১১টি অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মসিউর রহমান বলেন, শিক্ষকদের দাবি অনুযায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়টি গভর্নিং বডির ইখতিয়ারে। নতুন অধ্যক্ষ আসলে আমি দায়িত্ব ছেড়ে দিতে রাজি। অথচ তারা আমার পদত্যাগ দাবি করছে। এটা গভর্নিং বডি দেখবেন। কারণ আমাকে তাঁরাই নিয়োগ দিয়েছেন। আপনার নিয়োগতো বিধি বহির্ভূত প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বিধি জানা নাই। লঙ্ঘন হয়ে থাকলে তা গভর্নিং বডি করেছে। আমি এ বিষয়ে কোন কিছু বলতে পারবোনা। তাদের জিজ্ঞাসা করেন।

এ বিষয়ে সৈয়দপুর লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শফিয়ার রহমান এর সাথে মুঠোফোন কথা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান লায়ন্স ক্লাব কর্তৃক পরিচালিত। আমাকে ও অধ্যক্ষকে ক্লাব কর্তৃপক্ষ নিয়োগ করেছেন। আমার সম্মানী বাবদ ৫৫ হাজার টাকা প্রদানের সিদ্ধান্ত তাঁদের। আর এমপিও ভুক্তির জন্য টাকা নেয়া বা অন্যান্য অভিযোগ সঠিক নয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

তৃতীয় পক্ষে আন্দোলনে লম্বা ছুটিতে সাবরেজিস্টার, ভোগান্তিতে জমি দাতা ও গ্রহীতারা

সভাপতি ও অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে

সৈয়দপুর লায়ন্স স্কুলের শিক্ষকদের আন্দোলনের সাথে শিক্ষার্থীরা একাট্টা

প্রকাশিত ০৮:২৭:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নীলফামারীর সৈয়দপুর লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজের সভাপতি ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগে তাদের পদত্যাগের দাবিতে চলমান শিক্ষকদের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে যোগ দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ২ টায় স্কুল ছুটির পর শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানের সামনে সৈয়দপুর শহরের প্রধান সড়ক শহীদ ক্যাপ্টেন মৃধা সামসুল হক সড়কটি অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে।

এতে ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর, সেনানিবাস ও উপজেলা পরিষদগামী  এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হয় চালকসহ যাত্রী ও সাধারণ মানুষ। এ খবর লেখা পর্যন্ত (বিকেল ৫ টা) আন্দোলন অব্যাহত আছে।তবে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর ই আলম সিদ্দিকী স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করছেন।

জানা যায়, নিয়োগ বাণিজ্য, শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির খরচের নামে অর্থ আদায়, প্রতিষ্ঠানের আয় লায়ন্স ক্লাবে ব্যবহার, প্রতিষ্ঠানের গাড়ী ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ওঠেছে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শফিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে।

এ ছাড়া সভাপতি হওয়ার পর থেকে নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা না করে প্রতিমাসে ৭০ হাজার টাকা বেতন নেওয়া, প্রতিষ্ঠানের অর্থ লোপাটের অভিযোগ তুলেছেন ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। একই সাথে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মশিউর রহমান নিয়োগ বিধি লঙ্ঘন করে ৩ বছর ধরে পদ বাগিয়ে রেখেছেন এবং শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার খর্ব করে সভাপতির দূর্নীতির সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন বলেও অভিযোগ তাদের।

লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজ শিক্ষক ফোরামের সভাপতি মজিবর রহমান চৌধুরী বলেন, অভিযোগ নিয়ে শিক্ষকরা প্রথমে মৌখিকভাবে সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে পদত্যাগ করার দাবি জানালেও গুরুত্ব না দেওয়ায় গত ৮ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বরাবর শিক্ষক ফোরামের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে লিখিতভাবে দরখাস্ত দেওয়া হয়।

কিন্তু তিনি তা আমলে না নিয়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শোকজ নোটিশ ও ২ জন সিনিয়র শিক্ষককে কর্মস্থলে না আসার মত স্বৈরাচারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এমনকি বহিরাগত লোকজন ডেকে শিক্ষকদের লাঞ্চিত করার চেষ্টা চালান। তাঁর এমন ঘটনায় সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা এর প্রতিবাদ করেন। এরপর  আমাদের সাথে আলোচনা করার কথা বলে টালবাহানা করে দিন ক্ষেপণ করতে থাকে সভাপতি।

শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রবিউল হক বলেন, মাঝে অধ্যক্ষ আমাদের সাথে বসলেও সভাপতির সাফাই গাওয়ায় আলোচনা ফলপ্রসু হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে গত রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর ই আলম সিদ্দিকীর কাছে এবং মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসক মো. নায়িরুজ্জামান কে এ সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

অভিযোগে নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রতি মাসে সভাপতি কর্তৃক ৭০ হাজার টাকা বেতন গ্রহণ, নিয়োগ বাণিজ্য, এমপিও ভুক্তির খরচের নামে প্রতি শিক্ষকের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া, প্রতিষ্ঠানের গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা ও বিভিন্ন অজুহাতে প্রতিষ্ঠানের অর্থ নয়ছয় করাসহ অনিয়মের ১১টি অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মসিউর রহমান বলেন, শিক্ষকদের দাবি অনুযায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়টি গভর্নিং বডির ইখতিয়ারে। নতুন অধ্যক্ষ আসলে আমি দায়িত্ব ছেড়ে দিতে রাজি। অথচ তারা আমার পদত্যাগ দাবি করছে। এটা গভর্নিং বডি দেখবেন। কারণ আমাকে তাঁরাই নিয়োগ দিয়েছেন। আপনার নিয়োগতো বিধি বহির্ভূত প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বিধি জানা নাই। লঙ্ঘন হয়ে থাকলে তা গভর্নিং বডি করেছে। আমি এ বিষয়ে কোন কিছু বলতে পারবোনা। তাদের জিজ্ঞাসা করেন।

এ বিষয়ে সৈয়দপুর লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শফিয়ার রহমান এর সাথে মুঠোফোন কথা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান লায়ন্স ক্লাব কর্তৃক পরিচালিত। আমাকে ও অধ্যক্ষকে ক্লাব কর্তৃপক্ষ নিয়োগ করেছেন। আমার সম্মানী বাবদ ৫৫ হাজার টাকা প্রদানের সিদ্ধান্ত তাঁদের। আর এমপিও ভুক্তির জন্য টাকা নেয়া বা অন্যান্য অভিযোগ সঠিক নয়।