নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সমুহের বিদ্যুৎ বিলের একলক্ষ দুই হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাহমুদা খাতুনের বিরুদে।
উপজেলা হিসাবরক্ষন কর্মকর্তার যোগসাজসে এমনটি হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা। বিদ্যুৎ বিল আতœসাতের ঘটনায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
বিদ্যূত বিল আতœসাতের বিষয়টি জানাজানি হলে তড়িঘড়ি করে শিক্ষা কর্মকর্তা প্রধান শিক্ষকদের তাঁর অফিসে ডেকে এনে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে বিদ্যুৎ বিলের টাকা হস্তান্তর করেন।
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে জানা গেছে, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ বিল সরকারীভাবে বরাদ্দ আসে। শিক্ষকরা নিজের পকেট থেকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে থাকেন। যখন সরকারীভাবে বরাদ্দ আসে তখন স্ব স্ব বিদ্যালয়ের প্রধানরা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের কপিসহ বিল ভাউচার তৈরী করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট বিলগুলো দাখিল করেন। প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার যাচাই বাছাই শেষে বিলের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে সেগুলো উপজেলা হিসাবরক্ষন অফিসে প্রেরন করেন।
হিসাবরক্ষন অফিস থেকে বিল পাস হলে স্ব স্ব বিদ্যালয়ের প্রধানের একাউন্টে কিংবা বিদ্যালয়ের একাউন্টে বিল প্রেরন করা হয়ে থাকে। কিন্তু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুন সরকারী নীতিমালা লঙ্ঘন করে প্রাথমিক বিদ্যালয় সমুহের বিদ্যুৎ বিলের টাকা প্রধান শিক্ষক কিংবা বিদ্যালয়ের একাউন্টে না দিয়ে নিজের নামে নিয়ে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাতের চেষ্টা করেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, গত ২০২৪/২৫ অর্থবছরে জুন ক্লোজিংয়ের আগে ৫৯ নং ভাউচারের মাধ্যমে উপজেলার ৬৩ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ বিল বাবদ উপজেলা হিসাব রক্ষন কার্যালয়ে এক লাখ ৮২ হাজার ২৭৭ টাকার বকেয়া বিল দাখিল করা হয়। বিল দাখিলের পর হিসাবরক্ষন কার্যালয় থেকে ১৯/৬/২৫ তারিখে ৩৫ টি বিদ্যালয়ের বিল বাবদ এক লক্ষ দুই হাজার টাকা বিল ছাড় দেয়া হয়। বিল উত্তোলনের পর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সমুদ্বয় টাকা উত্তোলন করে উক্ত টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষা কর্মকর্তা তড়িঘড়ি করে বিলের টাকা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহায়ক তহমিনা বেগমের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকদের অফিসে ডেকে এনে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে বিলের প্রাপ্প টাকা বুঝিয়ে দেন।
উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সুত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ১৭৫ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ১৪৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পল্লী বিদ্যূতের আওতায় আর বাকিগুলো পিডিবির আওতাধিন। কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যূৎ জোনাল অফিসের জেনারেল ম্যানেজার মোঃ নুরুজ্জামান মিয়া জানান, শিক্ষকরা নিয়মিত নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে বিল পরিশোধ করে। তা না করলে পল্লী বিদ্যুতের আইন অনুযায়ী তিন মাসের বেশি বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার নিয়ম রয়েছে। তাই তারা পকেট থেকে বিল নেয়। পরে সরকারী বরাদ্দ আসলে শিক্ষকরা সমন্বয় করে নেয়। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে দুটি বিদ্যালয়ের ৭ হাজার ৬০ টাকা বকেয়া রয়েছে।
কালিকাপুর আদর্শ বালিকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি বিদ্যালয়ের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল অফিসে দাখিল করেছিলাম। কিন্তু প্রতিনিয়ত বিদ্যালয়ের একাউন্ট চেক করে দেখতে পাই কোন টাকা একাউন্টে আসেনি। পরে আমি শিক্ষক নেতাদের কাছ থেকে জানতে পারি বিদ্যুৎ বিলের টাকা উপজেলা শিক্ষা অফিসার উত্তোলন করে নিয়েছে।
বাহাগিলি ইউনিয়নের দরাকুটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আয়েশা আক্তার বলেন, আমার বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ বিলের টাকা না পাওয়ায় কারনে বিষয়টি নিয়ে অফিসে গেলে জানতে পারি টাকা আমাদের অফিসের অফিস সহায়ক তহমিনা বেগম বিতরন করছেন। তখন একটি কাগজে স্বাক্ষর করে আমি টাকা নিয়ে আসি।
পুটিমারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি আমার বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ বিল অফিসে দাখিল করি। কিন্তু প্রতিবছর বিদ্যুৎ বিলের টাকা একাউন্টে আসে। কিন্তু হঠাৎ করে টাকা না আসায় অফিসে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি বিদ্যুত বিলের টাকা স্যার উত্তোলন করে নিয়েছেন। কোন স্যার প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, টিও স্যার। এটি নিয়ে মাসিক মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে। পরে তিনি টাকা ফেরৎ দিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির শিক্ষক নেতারা বলেন, বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ বিল,টিএডিএ,জিপিএফ ফান্ডসহ যত ধরনের বিল সব প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের একাউন্টে আসে কিন্তু বর্তমান শিক্ষা কর্মকর্তা উপজেলা হিসাবরক্ষন কর্মকর্তার সাথে যোগসাজস করে নীতিমালা লঙ্ঘন করে বিল উত্তোলন করে টাকা আত্মসাৎ করছেন।
উপজেলা হিসাবরক্ষন কর্মকর্তা হারুন নুর রশিদ বলেন, আমি যে কোন বিলের কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা সেটি যাচাই বাছাই করে বিল প্রদান করি। নীতিমালা কি বলে, প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ভাই প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা যেভাবে চেয়েছে আমি সেভাবেই দিয়েছি। তাহলে আপনার দায়িত্ব কি জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ভাই আমি আত্মসাৎের উদ্দোশে টাকা তুলিনি। তাহলে নীতিমালা লঙ্ঘন করলেন কেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আপনারা যা পারেন লেখেন, আমার কোন সমস্যা নেই। জেলা কর্মকর্তা বিভাগীয় কর্মকর্তা এমনকি মন্ত্রনালয় পর্যন্ত সবার সাথে আমার ভাল সম্পর্ক আছে আপনারা আমার কিছুই করতে পারবেননা।
নীলফামারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কুমারেশ চন্দ্র গাছির সাথে কথা বললে তিনি বলেন, বিষয়টি যাচাই বাছাই করে দেখব যদি নীতিমালা লঙ্ঘন করে কেউ টাকা উত্তোলন করে থাকে তাহলে বিধি অনুযায়ী ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।


























