১০:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫

বিদ্যালয় চত্বরে প্রধান শিক্ষকের ব্যক্তিগত গাড়ির গ্যারেজ নির্মাণ

নীলফামারীর সৈয়দপুরে বিদ্যালয়ের অর্থে শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠে প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ি রাখার জন্য একটি গ্যারেজ নির্মাণ করেছেন। আর এটি করা হয়েছে শহরের তুলশীরাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে চত্বরে। এ নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত ১৯১৪ সালে সৈয়দপুর তুলশীরাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শহরের চাঁদনগর এলাকায় দানশীল বিশিষ্ট মাড়োয়ারি ব্যবসায়ী শহীদ তুলশীরাম আগরওয়ালার দানকৃত ২.৮৯ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠা করা হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।

আর তাঁর নামানুসারে বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয় তুলশীরাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। গেল ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ করা হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৪২০জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। বিদ্যালয়টি অত্রাঞ্চলের একটি প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

এদিকে, বিদ্যালয়টিতে গত ২০২৩ সালে ৪ এপ্রিল যোগদান করেন সহকারী শিক্ষক শিল্পী আক্তার। তিনি নীলফামারীর ডিমলা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বদলি হয়ে আসেন এখানে। বর্তমানে তিনি তুলশীরাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্বে রয়েছেন।

তিনি গত বছরের (২০২৪ সাল) ৭ মে থেকে প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) এর দায়িত্বভার গ্রহন করেন। তাঁর ব্যক্তিগত একটি গাড়ি (কার) রয়েছে (নম্বর ঢাকামেট্টো-ক-১১-১৮৪৯)। আর তাঁর ওই গাড়িটি (কার) রাখতে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিদ্যালয় চত্বরে ছাত্রীদের খেলার মাঠে একটি টিনশেট গাড়ির গ্যারেজ তৈরি করেন তিনি। তাও আবার বিদ্যালয়ে ভেতরে তাঁর অফিস কক্ষ ও শ্রেণি কক্ষের সামনে। এমনিতেই বিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য নেই পর্যাপ্ত খেলার মাঠ। যে স্বল্প পরিসরে মাঠ টুকু রয়েছে তারও কিছু অংশ জুড়ে গ্যারেজ তৈরি করা হয়েছে। ফলে বিদ্যালয়ের ভেতরে মাঠটি একেবারে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) যোগদানের পর তাঁর গাড়ির জন্য বিদ্যালয়ের মাঠে একটি বড় আকারের গাড়ির গ্যারেজ তৈরি করা হয়েছে। ফলে আমরা বিদ্যালয়ে টিফিনকালীন শারীরিক চর্চা তথা খেলাধুলা করবো তারও কোন সুযোগ পাই না। টিফিনে আমাদের শ্রেণি কক্ষে বসে অলস সময় কাটতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক বলেন, তুলশীরাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও তুলশীরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুইটি পাশাপাশি। একই চত্বরে বিশাল এলাকাজুড়ে অবস্থিত হলেও নেই শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত খেলার মাঠ। যে টুকু জায়গা রয়েছে তারও কিছু অংশ জুড়ে একটি বিশাল গাড়ির গ্যারেজ তৈরি করে রেখেছেন প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত)।

এ বিষয়ে গত রবিবার দুপুরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) শিল্পী আক্তারের সঙ্গে তাঁর অফিস কক্ষে বসে কথা হয় এ প্রতিনিধি’র। এ সময় তিনি প্রতিষ্ঠানের অর্থে তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ির রাখার জন্য খেলার মাঠে গ্যারেজ নির্মাণের কথা অপকটে স্বীকার করেন।

এ নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার রংপুর অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (স্কুল) মোছা. রোকসানা বেগমের সঙ্গে ০১৭১৯-৯০৪০৮৪ নম্বর মুঠোফোনে কথা হয় এ প্রতিনিধির। তিনি বলেন, আমি খুব শিগগিরিই ওই প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে যাবো। এছাড়াও নীলফামারী জেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদনের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

দিনাজপুরে অ্যাডভোকেসি প্ল্যাটফর্মের বিভাগীয় বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

বিদ্যালয় চত্বরে প্রধান শিক্ষকের ব্যক্তিগত গাড়ির গ্যারেজ নির্মাণ

প্রকাশিত ১১:৩১:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

নীলফামারীর সৈয়দপুরে বিদ্যালয়ের অর্থে শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠে প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ি রাখার জন্য একটি গ্যারেজ নির্মাণ করেছেন। আর এটি করা হয়েছে শহরের তুলশীরাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে চত্বরে। এ নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত ১৯১৪ সালে সৈয়দপুর তুলশীরাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শহরের চাঁদনগর এলাকায় দানশীল বিশিষ্ট মাড়োয়ারি ব্যবসায়ী শহীদ তুলশীরাম আগরওয়ালার দানকৃত ২.৮৯ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠা করা হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।

আর তাঁর নামানুসারে বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয় তুলশীরাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। গেল ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ করা হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৪২০জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। বিদ্যালয়টি অত্রাঞ্চলের একটি প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

এদিকে, বিদ্যালয়টিতে গত ২০২৩ সালে ৪ এপ্রিল যোগদান করেন সহকারী শিক্ষক শিল্পী আক্তার। তিনি নীলফামারীর ডিমলা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বদলি হয়ে আসেন এখানে। বর্তমানে তিনি তুলশীরাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্বে রয়েছেন।

তিনি গত বছরের (২০২৪ সাল) ৭ মে থেকে প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) এর দায়িত্বভার গ্রহন করেন। তাঁর ব্যক্তিগত একটি গাড়ি (কার) রয়েছে (নম্বর ঢাকামেট্টো-ক-১১-১৮৪৯)। আর তাঁর ওই গাড়িটি (কার) রাখতে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিদ্যালয় চত্বরে ছাত্রীদের খেলার মাঠে একটি টিনশেট গাড়ির গ্যারেজ তৈরি করেন তিনি। তাও আবার বিদ্যালয়ে ভেতরে তাঁর অফিস কক্ষ ও শ্রেণি কক্ষের সামনে। এমনিতেই বিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য নেই পর্যাপ্ত খেলার মাঠ। যে স্বল্প পরিসরে মাঠ টুকু রয়েছে তারও কিছু অংশ জুড়ে গ্যারেজ তৈরি করা হয়েছে। ফলে বিদ্যালয়ের ভেতরে মাঠটি একেবারে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) যোগদানের পর তাঁর গাড়ির জন্য বিদ্যালয়ের মাঠে একটি বড় আকারের গাড়ির গ্যারেজ তৈরি করা হয়েছে। ফলে আমরা বিদ্যালয়ে টিফিনকালীন শারীরিক চর্চা তথা খেলাধুলা করবো তারও কোন সুযোগ পাই না। টিফিনে আমাদের শ্রেণি কক্ষে বসে অলস সময় কাটতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক বলেন, তুলশীরাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও তুলশীরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুইটি পাশাপাশি। একই চত্বরে বিশাল এলাকাজুড়ে অবস্থিত হলেও নেই শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত খেলার মাঠ। যে টুকু জায়গা রয়েছে তারও কিছু অংশ জুড়ে একটি বিশাল গাড়ির গ্যারেজ তৈরি করে রেখেছেন প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত)।

এ বিষয়ে গত রবিবার দুপুরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) শিল্পী আক্তারের সঙ্গে তাঁর অফিস কক্ষে বসে কথা হয় এ প্রতিনিধি’র। এ সময় তিনি প্রতিষ্ঠানের অর্থে তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ির রাখার জন্য খেলার মাঠে গ্যারেজ নির্মাণের কথা অপকটে স্বীকার করেন।

এ নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার রংপুর অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (স্কুল) মোছা. রোকসানা বেগমের সঙ্গে ০১৭১৯-৯০৪০৮৪ নম্বর মুঠোফোনে কথা হয় এ প্রতিনিধির। তিনি বলেন, আমি খুব শিগগিরিই ওই প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে যাবো। এছাড়াও নীলফামারী জেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদনের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।