নিজস্ব প্রতিবেদক
ঘূর্ণিঝড় রিমাল রবিবার রাত ৯টার দিকে উপকূলীয় অঞ্চলের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানে। এ সময় সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীতে ছিল ভাটার প্রবাহ। যার কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে প্লাবিত এলাকার মানুষেরা পড়েছে ভোগান্তিতে। যদিও ঘূর্ণিঝড় শুরুর আগেও সংশ্লিষ্ট সবগুলো মন্ত্রণালয় সতর্ক অবস্থান নেওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র, স্বেচ্ছাসেবীরা প্রস্তুতি নিতে পেরেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে রেখেছিলেন পুরো পরিস্থিতি। সোমবার ঘূর্ণিঝড় রিমাল যখন নিম্নচাপে রূপ নেয় তখনই ঘোষণা দেওয়া হয় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী মো. মুহিববুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় সরকার সার্বিকভাবে প্রস্তুত ছিলো। আঘাত হানার পূর্বে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার সকল লোককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে আমরা সামরিক ও বেসামরিক সকল যান-বাহনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের মেডিকেল টিম সমুহ প্রস্তুত ছিলো এবং আছে। সামরিক বাহিনী ও নৌবাহিনীসহ প্রয়োজনীয় সকল বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছিলো।
এবারের দুর্যোগে নজর কেড়েছে বেশকিছু উদ্যোগ। তারমধ্যে একটি হলো নাানাবিধ হটলাইন। প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। রবিবার (২৬ মে) এক বিজ্ঞপ্তিতে রিমাল মোকাবিলায় বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণকেও রিমাল মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানায় তারা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে বিদ্যুৎ বিভাগ বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নেয়। সম্ভাব্য আক্রান্ত প্রতিটি জেলায় খোলা হয় কন্ট্রোল রুম। এদিকে ঝড়ের প্রভাবে ভারী বৃষ্টির কারণে ভূমিধস ঘটলে দুর্ঘটনা কবলিত জেলা ও উপজেলাগুলোর ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের (জিএসবি) অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়।
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে ৩৬ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। তবে ঝড়ে পন্টুন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দৌলতদিয়ার তিনটি ঘাটের মধ্যে একটি বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ৫০ ঘণ্টা পর লঞ্চ চালু হয়েছে। এত দীর্ঘস্থায়ী ঝড়ের পরে দ্রুত স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে সবাই একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।
দৌলতদিয়া ঘাটে কর্মরত বিআইডব্লিউটিএ’র ট্রাফিক সুপারভাইজার মো. শিমুল ইসলাম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে রবিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুর্ঘটনা এড়াতে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কেটে গেলে পুনরায় মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক হয়।’
কেবল উপকূলে নয়, ঢাকাতেও নেওয়া হয় বেশকিছু কার্যকর ব্যবস্থা। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকার প্রধান প্রধান সড়কগুলো থেকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ভারী বর্ষণে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করেছে বলে দাবি করছে সংস্থাটি। ডিএনসিসির হটলাইনে (১৬১০৬) ২৪ ঘণ্টায় ২৮১ নাগরিক ফোন করে জলাবদ্ধতাসহ নানান সমস্যার কথা জানিয়েছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।
ডিএনসিসির মুখপাত্র মকবুল হোসাইন বলেন, হটলাইনে সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত মোট ২৮১ জন নাগরিক ফোন করে গাছ ভেঙে পড়া ও পানি জমে থাকার তথ্য জানিয়েছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে কুইক রেসপন্স টিম পৌঁছে ভাঙা গাছ ও পানি অপসারণ করা হয়েছে।
দল হিসবে আওয়ামী লীগের কর্মীদের বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়। দলের সংশ্লিষ্ট সাংগঠনিক ইউনিটগুলো ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে যাবে জানিয়ে সোমবার ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের যাওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। এ সময় তিনি ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে জনপ্রতিনিধিসহ দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন।