সৈয়দপুরে রেলপথ সংস্কার কাজে ব্যবহার হচ্ছেপুরাতন ইটের খোয়া

নীলফামারীর সৈয়দপুরে মালবাহী ট্রেনের প্রায় লাইনচ্যূতির ঘটনা নিত্য নৈমিত্যিক। এ কারণে দীর্ঘদিন পর এখানকার লুপলাইনগুলোর সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু এ সংস্কার কাজ দায়সারাভাবে করার অভিযোগ ওঠেছে। সংস্কার কাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করায় এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় ও রেলওয়ে কর্মচারীররা। সংস্কার কাজ যথাযথ না হওয়ায় ওই রেলপথে ফের ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ও ভারত থেকে আমদানি করা পাথর ওয়াগন থেকে ভেকুমেশিন দিয়ে পন্যবাহী ট্রাকে পাথর লোড করার কারণে সৈয়দপুর স্টেশণের পূর্বপাশের লুপলাইনগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এতে করে মালবাহী ট্রেনের প্রায় লাইনচ্যূতির ঘটনা ঘটত। এর কারণে স্থানীয় রেলওয়ে দপ্তর ওই লাইন চলাচলের জন্য অনুপোযোগী ঘোষনা করে। পরবর্তীতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ লুপলাইন সংস্কারের জন্য দরপত্র আহবান করে। দরপত্র অনুযায়ী রেলওয়ে স্টেশনের উত্তরে রেলওয়ের সংকেত ঘর ও দক্ষিনে দুই নং রেলক্রসিং পর্যন্ত ১হাজার ৪৪০ মিটার রেলপথ সংস্কারের জন্য সাত কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। দরপত্রের মাধ্যমে সংস্কার কাজটি পায় যশোরের মেসার্স ক্যাসেল কনস্ট্রাকশন নামে রেলওয়ে ঠিকাদারী এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে সংস্কার কাজ শুরু করে। আগামী জুলাই মাসে কাজটি শেষ হওয়ার কথা।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে রেলের কর্মকর্তা বলেন, সিডিউল অনুযায়ী প্রতিটি রেলপথের রেল লাইন উত্তোলনের পর ১ ফুট ৯ ইঞ্চি (২১ ইঞ্চি) গভীর করে বক্স আকারে নিচের অংশ (সাববেজ) তৈরি করার কথা। কিন্তু ২১ ইঞ্চির জায়গায় কোথাও কোথাও মাত্র ১০-১১ ইঞ্চি গভীরতায় সাববেজ করা হচ্ছে। তাছাড়া সাববেজ তৈরিতে খোয়া ও বালুর মিশ্রণ ৬০ অনুপাত ৪০ হওয়ার কথা তা করা থাকলেও বালুই বেশি পরিমানে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাছাড়া ৩৮ মিলিমিটার পরিমাপের খোয়া ব্যবহার করার কথা তার চেয়ে অনেক বড় আকারের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। এতে করে সাববেজ ঠিকমতো কমপ্যাক্ট না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম খোয়া দেওয়া হচ্ছে। আর রেলপথের পাশের মাটির নিচ পাড়ে থাকা পুরাতন তিন নম্বর ইট তুলে তা খোয়া করে ব্যবহার করা হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি মালিকের সাথে একাধিকবার চেস্টা করেও তাঁর সাথে যোগাযোগ না হওয়ায় তার মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। ঠিকাদারের স্থানীয় প্রতিনিধি মো: রবিনের কাছেও জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) মো. সুলতান মৃধা বলেন, সংস্কার কাজটি করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। আর কাজের মান যাচাই করার দায়িত্ব স্থানীয় রেলওয়ে কার্য বিভাগের। তাই বিষয়টি কার্যবিভাগই বলতে পারবেন।
সৈয়দপুর রেলওয়ের উর্ধ্বতন উপসকারী প্রকৌশলী (কার্য) শরিফুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথেই সংস্কার কাজ এলাকায় যাই। সেখানে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে নিম্নমানের খোয়া অপসারণ করা হয়েছে এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে সতর্ক করা হয়েছে।
এ নিয়ে সিনিয়র সহকারী উর্ধ্বতন প্রকৌশলী (ইনচার্জ) কাজী ওয়ালিউল হক বলেন, কাজের মানের সাথে কোনো আপোস করা হবে না। কাজের মান শতভাগ বুঝে নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সংস্কারকাজ নিয়মিত পরিদর্শন করা হবে বলে জানান তিনি।

  • Related Posts

    শানের কণ্ঠে ‘শ্যাম কালিয়া’

    বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনে প্রতিভাবান গায়ক শান সায়েক। স্বতন্ত্র এবং প্রাণবন্ত কণ্ঠের এই গায়ক একই সঙ্গে সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালক হিসেবেও সুপরিচিত। সম্প্রতি নতুন বছর উপলক্ষে আধুনিক লোকসঙ্গীত গানের ভিডিও নিয়ে শ্রোতাদের…

    Continue reading
    ১৭ বছর পর কারামুক্ত হলেন লুৎফুজ্জামান বাবর

    সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর কারামুক্ত হয়েছেন। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে তিনি কারাগারে বন্দি ছিলেন। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুর পৌনে ২টায় কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হন তিনি। বিষয়টি…

    Continue reading

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    মুক্ত মতামত

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    ‘রাজাকার’ ইস্যু বানিয়ে একই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি

    প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    নিয়োগ পরীক্ষায় পাস না করেও কি কোটা ব্যবস্থায় চাকরি পাওয়া যায়?

    কোটা পুনর্বহালে স্থিতাবস্থা মানে কি?

    প্রধানমন্ত্রীর সফরে পাঁচ মূলনীতির উন্নয়ন করতে চায় চীন

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি