নিজস্ব প্রতিবেদক
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জয়জয়কার দেখা গেছে। বুধবার (৮ মে) রাত সাড়ে ১২টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশের ১৩৯টি উপজেলার মধ্যে ১২২টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী প্রার্থীদের নাম জানা গেছে। তাদের মধ্যে ১০১ জনই আওয়ামী লীগের। আওয়ামীলীগের জন্য চ্যালেঞ্জে ছিলো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করা এবং সহিংসতা এড়িয়ে যাওয়া। এ দুটোই সফলভাবে সম্পাদন করা গেছে বলে জানিয়েছেন দেশীয় পর্যবেক্ষকরা।
বেশকয়েকটি ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রথমবার ভোটে দাঁড়িয়েই চমক সৃষ্টি করেছেন নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক শাবাব চৌধুরী। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান আ ন ম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিমকে ৭০৩ ভোটে হারিয়ে জয়লাভ করেন তিনি।
মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী চাচা পাভেলুর রহমান শফিক খানকে হারিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খান। বুধবার (৮ মে) অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের নির্বাচনে ১৪ হাজার ২৯১ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে চমক দেখিয়েছেন আসিব।
এ ছাড়া রাজৈর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন মো. মোহসীন মিয়া। মাদারীপুর জেলা নির্বাচন অফিসার মো.আহম্মদ আলী নির্বাচনি ফলাফল নিশ্চিত করেন।
নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ হতে পারে জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘সকালে বৃষ্টি এবং ধান কাটার মৌসুম বিধায় ভোট পড়ার হার কম হতে পারে। ভোটাররা ধান কাটতে থাকায় ভোটকেন্দ্রে আসেননি, এটা জানতে পেরেছি। এছাড়া কিছু কিছু জায়গায় ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। ভোটার বেশি এলে আরও বেশি ভালো হতো। কিন্তু আমরা গণনা করি কে বেশি ভোট পেয়েছেন। আমার বিষয় হচ্ছে ভোট হয়েছে কিনা, ভোটাররা আসতে পেরেছেন কিনা, ভোট দিতে পেরেছেন কিনা, কোথাও কোনও অনিয়ম হলো কিনা। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি।’
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জাকারিয়া কাজল মনে করেন কোন ধরনের সহিংসতার ঘটনা ছাড়া এই নির্বাচন সম্পাদনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন সফলতার মুখ দেখেছে। যে দু িএকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা দেখা গেছে সেগুলো আমাদের স্থানীয় সংস্কৃতির অংশ, সেগুলোকে সহিংসতা বলা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা আওয়ামীলীগের জন্য বড় পরীক্ষা ছিলো। প্রথমধাপে ৩০-৩৫ শতাংশ ভোট হয়েছে। সাধারণত উপজেলায় ভোট কাস্ট হতে বেশি দেখা যায়। আগামীগুলোর ক্ষেত্রে দল হিসেবে আওয়ামীলীগ ভোটারদের কেন্দ্রে আনার বিষয়ে কাজ করলে ভালো ফল পাবে।
উল্লেখ্য, জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও বর্জন করেছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে অনেকেই হয়েছেন বহিষ্কৃত।
প্রথম ধাপের নির্বাচনে দলীয়ভাবে বিএনপি অংশ না নিলেও সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোট করেছেন অনেক নেতা। যদিও নেতাদের এমন সিদ্ধান্তের কারণে বহিষ্কার হয়েছেন অনেকে। তবে তাদের মধ্যেই নির্বাচিত হয়েছেন কেউ কেউ। জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য থেকে জানা গেছে, বান্দরবান সদর উপজেলায় ১৯ হাজার ১৪৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আব্দুল কুদ্দুছ। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বড় ব্যবধানে জিতেছেন।
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আমিনুল ইসলাম বাদশা ভোট পেয়েছেন ১৮ হাজার ৮৮৩টি। এতে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ ফারুক। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভোট হয়েছে তিন উপজেলায়। এর মধ্যে দুটিতেই বেসরকারিভাবে জয় পেয়েছেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতারা।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম মনে করেন নির্বাচন যথেষ্ট সুষ্ঠু হয়েছে। এই মৌসুমে ভোটার স্থানান্তর হয় বলে ভোটের পরিমান কম হয়েছে। তবে ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য প্রার্থীদের কাজ করতে হবে। তারা ঘরে ঘরে গেলে ভোটাররা আগ্রহী হবে কেন্দ্রে যেতে। আগামী নির্বাচনগুলোতে সেই প্রচেষ্টা দেখা যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।