বেগম রোকেয়া দিবস আজ

নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া দিবস আজ। প্রতি বছর বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ৯ ডিসেম্বর সরকারিভাবে ‘রোকেয়া দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। এবারও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে দেশজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

১৮৮০ সালের এদিনে বেগম রোকেয়া রংপুরের মিঠাপুকুর থানার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা জহির উদ্দিন মুহম্মদ আবুল আলী হায়দার সাবের এবং মাতা রাহাতুন্নেছা চৌধুরানী। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েও তিনি নারী জাগরণের অগ্রদূতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

১৮৯৬ সালে ১৬ বছর বয়সে বেগম রোকেয়ার বিয়ে হয় ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট খান বাহাদুর সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে। রোকেয়া পেলেন আরেকজন প্রগতিশীল মানুষের সাহচর্য। স্বামী সাখাওয়াত হোসেন বেগম রোকেয়ার লেখাপড়ার প্রতি অকুণ্ঠ আগ্রহ দেখে তার প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন তাকে বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে এবং তার লেখালেখিতে সাহায্য করতে লাগলেন। এই শিক্ষাই বেগম রোকেয়াকে ভাবতে শিখিয়েছিল সে সময়ের অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন জীবন, শিক্ষাহীন নারীসমাজের মুক্তির কথা।

১৯০২ সালে ‘পিপাসা’ নামে একটি বাংলা গল্প লিখে সাহিত্যের জগতে প্রবেশ করেন বেগম রোকেয়া। আর ১৯০৫ সালে রোকেয়া ইংরেজিতে লিখলেন তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘সুলতানাস ড্রিমস’। সাখাওয়াত হোসেন লেখাটি পড়ে অভিভূত হয়ে পড়েন এবং তাকে উৎসাহ দেন লেখাটি বই আকারে প্রকাশ করার জন্য। ১৯০৮ সালে সুলতানাস ড্রিমস বই আকারে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে বইটি বাংলায় ‘সুলতানার স্বপ্ন’ নামে রূপান্তরিত হয়ে নতুন আঙ্গিকে প্রকাশিত হয়। এই বইটিকে বিশ্বের নারীবাদী সাহিত্যে একটি মাইলফলক হিসেবে গণ্য করা হয়। তার অন্য গ্রন্থগুলো হলো ‘অবরোধবাসিনী’, ‘মতিচ‚র’, ‘পদ্মরাগ’।

‘নারীশিক্ষার প্রসার ছাড়া নারীসমাজের মুক্তি নেই এবং সমাজের কোনো আশা নাই’ এই মূলমন্ত্রে বিশ্বাসী বেগম রোকেয়া তার স্বামীর মৃত্যুর পর ১৯০৯ সালে ভাগলপুরের তদানীন্তন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ শাহ আব্দুল মালেকের সরকারি বাসভবন গোলকুঠিতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস হাই স্কুল।

স্কুল প্রতিষ্ঠা ছাড়াও তিনি নিগৃহীত নারীসমাজের অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠাকে আরও বেগবান করার জন্য ১৯১৬ সালে ‘আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সঙ্গে চলতে থাকে সমাজের নানা অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তার ক্ষুরধার লেখনি।

১৯১৯ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘মুসলিম মহিলা ট্রেনিং স্কুল’। সেখানে নারীদের রান্না, সেলাই, সন্তান পালনসহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। বেগম রোকেয়া নারীশিক্ষার প্রসারের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন। মিসেস আর এস হোসেন নামে সে সময়ের বিখ্যাত সব পত্রিকায় তিনি নারী জাগরণের ক্ষুরধার লেখা লিখেছেন।

১৯৬৩ সালে প্রথম রোকেয়ার নামে একটি কলেজ স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে এটি জাতীয়করণ করা হয়। ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী হলের নামকরণ করা হয় তার নামানুসারে। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়’ নামকরণ করেন।

  • Related Posts

    নতুন বছরে সোনার দামে রেকর্ড

    নতুন বছর শুরুর পর প্রথমবারের মতো দেশের বাজারে ফের বেড়েছে সোনার দাম। এ দফায় ভরিতে সর্বোচ্চ এক হাজার ১৫৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন মূল্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। দাম বাড়ানোর…

    Continue reading
    বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তনের সুপারিশ

    ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ করার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। আর প্রজাতন্ত্রের পরিবর্তে ‘নাগরিকতন্ত্র’ করার প্রস্তাবও করেছে কমিশন। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশন…

    Continue reading

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    মুক্ত মতামত

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    ‘রাজাকার’ ইস্যু বানিয়ে একই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি

    প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    নিয়োগ পরীক্ষায় পাস না করেও কি কোটা ব্যবস্থায় চাকরি পাওয়া যায়?

    কোটা পুনর্বহালে স্থিতাবস্থা মানে কি?

    প্রধানমন্ত্রীর সফরে পাঁচ মূলনীতির উন্নয়ন করতে চায় চীন

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি