বুড়িমারী স্থলবন্দরে মজুরি নিয়ে শ্রমিক ও সর্দারদের সংঘর্ষ, সাংবাদিকসহ আহত ১৫

মো: আফজালুল হক রিন্টু, পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি

লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকায় বকেয়া মজুরির দাবি এবং কম মজুরির অভিযোগে লোড-আনলোড শ্রমিক ও সর্দারদের সংঘর্ষে এক সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত তিনজনকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে এই সংঘর্ষ হয় বলে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। সংঘর্ষের জেরে পাটগ্রামের ইউএনও, সহকারী পুলিশ সুপার ও ওসিকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
আহতরা হলেন বুড়িমারীর কলাবাগান এলাকার আসাদুজ্জামান (২৫), পণ্ডিতপাড়ার জামিয়াল (৫৬), তেলিপাড়ার মো. বাবুল (৪৫), ব্যাঙকান্দার ফাতানুর (৪০), মধ্য খিলাপুরের মো. নুরনবী (২৩), বামনদলের আলী হোসেন (২৫), কইল্লাটারির মো. সুমন (২০), গুচ্ছগ্রামের শরিফ উদ্দিন ও মনিজুল এবং এশিয়ান টিভির পাটগ্রাম প্রতিনিধি এম এ কামাল। এর মধ্যে নুরনবী, শরিফ ও মনিজুলকে গতকাল বিকেলে পাঠানো হয়েছে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
শ্রমিক সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি নিয়ে সর্দারদের বিরোধের জেরে গত সোমবার উত্তেজনা ও মহাসড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটে। পরে পাটগ্রামের ইউএনও নুরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে ১৬ সেপ্টেম্বরের পর বিষয়টি সুরাহার আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকে আবারও উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। দুপুরে উভয় পক্ষ দেশি অস্ত্র, লাঠি ও পাথর নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ রাবার বুলেট ছোড়ে। সংঘর্ষের কারণে পাটগ্রাম-বুড়িমারী মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
উত্তেজিত শ্রমিকরা মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মহাসড়কের উভয় পাশে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী অনেক যানবাহন আটকে ছিল। বুড়িমারী থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোনো নৈশ কোচ। সংঘর্ষের কারণে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমও ব্যাহত হয়। শ্রমিকদের উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করায় বিকেলে ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে এলে বুড়িমারী উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ অফিসেই ইউএনও, সহকারী পুলিশ সুপার ও ওসি সাধারণ শ্রমিক ও সর্দারদের প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনায় বসেন।
সন্ধ্যা পর্যন্ত আলোচনা চলছিল।
বুড়িমারী স্থলবন্দরের শ্রমিকরা জানান, প্রতিষ্ঠা থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন পরিচালনা করেন ২৪ জন সর্দার। সম্প্রতি সংগঠনের সর্দারদের বিরুদ্ধে সাধারণ শ্রমিকরা অর্থ আত্মসাৎ, সংগঠনের নির্বাচন না দিয়ে নিয়ন্ত্রণ, ন্যায্য মজুরি না দেওয়ার অভিযোগ করছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পাটগ্রামের ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২০ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়েছে।’
পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আমি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কথা চলছে।

  • Related Posts

    বন্যায় ঘরহারাদের ঘর তৈরি করে দিচ্ছে হুয়াওয়ে

    সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের অসংখ্য মানুষ। ফসল, গবাদি পশু থেকে শুরু করে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও হারিয়েছে অনেক পরিবার। সেরকম কিছু পরিবারের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসেছে হুয়াওয়ে। এবছর নিজেদের ত্রাণ কার্যক্রমের…

    Continue reading
    এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু

    বন্যার কারণে সিলেট শিক্ষা বোর্ড ছাড়া সারা দেশে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হচ্ছে রোববার (৩০ জুন)। এবার পরীক্ষার্থী ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন।গতবারের চেয়ে পরীক্ষার্থী বেড়েছে ৯১ হাজার…

    Continue reading

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    মুক্ত মতামত

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    ‘রাজাকার’ ইস্যু বানিয়ে একই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি

    প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    নিয়োগ পরীক্ষায় পাস না করেও কি কোটা ব্যবস্থায় চাকরি পাওয়া যায়?

    কোটা পুনর্বহালে স্থিতাবস্থা মানে কি?

    প্রধানমন্ত্রীর সফরে পাঁচ মূলনীতির উন্নয়ন করতে চায় চীন

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি