নীলফামারীতে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে॥ ভাঙনে আতঙ্কে মানুষ

গত কয়েক দিনের অব্যাহত বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও এখন কমতে শুরু করেছে। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে পানি কমতে শুরু করায় নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার নদী পাড়ে চল এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার(২০ জুন) সকাল ৬টায় তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার (৫২.১৫) ৫১ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বিকাল ৬টায় তা কমে ৫১ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার (বিপৎসীমার দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত ২৪ ঘন্টায় ডালিয়ায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৫৩ মিলিমিটার। তিনি আরো জানান, গত শুক্রবার রাত থেকে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। সোমবার(১৯ জুন) সকাল ৬টায় পানি বিপৎসীমার (৫২.১৫) দশমিক ৫ সেন্টিমিটার(৫২.২০) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে সকাল ৯টার দিকে পানি দশমিক ১০ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার দশমিক ৫ সেন্টিমিটার(৫২.১০) নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওইদিন দুপুর থেকে পানি কমতে শুরু করে রাতের দিকে অনেকটা কমে আসে।
এদিকে গত কয়েকদিনে নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চলগুলোতে এরইমধ্যে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এখনো ঘর-বাড়িতে পানি প্রবেশ না করলেও তলিয়ে গেছে এসব এলাকার আবাদী জমি ক্ষেত। চরাঞ্চলের মানুষের ফসলের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। হঠাৎ পানি বাড়ার ফলে গবাদি পশুপাখির খাবার নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তারা।
ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ি এলাকার কৃষক আহমেদ আলী বলেন, কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাতের ফলে খাল-বিল সব ভরে গেছে। তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাড়ির পাশে চলে এসেছে। যেকোনো সময় পানি বাড়িতে উঠতে পারে। আমার তিন বিঘা জমিতে চাষ করা বাদাম সহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
খালিশা চাঁপানি ইউনিয়ন পশ্চিম চরখালিশা গ্রামের মতিয়ার রহমান বলেন, তিস্তার পানি কখনও বাড়ছে আবার কখনও কমছে। এভাবে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে চরাঞ্চলের ঘর-বাড়ি নিমজ্জিত হয়ে যাবে। আমরা খুব দুশ্চিন্তায় আছি।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, কয়েক দিন ধরে তিস্তার পানি বাড়া-কমার মধ্যেই রয়েছে। আজ সকালে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ও বিকালে ৬০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, তবে আগামী ২২ ও ২৩ জুন এসব তিস্তা পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানতে পেরেছি। তবে আগামী ১০ দিনের মধ্যে বড় কোনো বন্যার সম্ভাবনা নেই বলেও জানান তিনি।
টেপা খড়িবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তাপাড়ের মানুষজন বন্যার আশঙ্কায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। এখনো বন্যা দেখা না দিলেও কয়েক জায়গায় নদী ভাঙনের খবর পেয়েছি।

  • Related Posts

    শানের কণ্ঠে ‘শ্যাম কালিয়া’

    বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনে প্রতিভাবান গায়ক শান সায়েক। স্বতন্ত্র এবং প্রাণবন্ত কণ্ঠের এই গায়ক একই সঙ্গে সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালক হিসেবেও সুপরিচিত। সম্প্রতি নতুন বছর উপলক্ষে আধুনিক লোকসঙ্গীত গানের ভিডিও নিয়ে শ্রোতাদের…

    Continue reading
    ১৭ বছর পর কারামুক্ত হলেন লুৎফুজ্জামান বাবর

    সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর কারামুক্ত হয়েছেন। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে তিনি কারাগারে বন্দি ছিলেন। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুর পৌনে ২টায় কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হন তিনি। বিষয়টি…

    Continue reading

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    মুক্ত মতামত

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    ‘রাজাকার’ ইস্যু বানিয়ে একই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি

    প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    নিয়োগ পরীক্ষায় পাস না করেও কি কোটা ব্যবস্থায় চাকরি পাওয়া যায়?

    কোটা পুনর্বহালে স্থিতাবস্থা মানে কি?

    প্রধানমন্ত্রীর সফরে পাঁচ মূলনীতির উন্নয়ন করতে চায় চীন

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি