গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অববাহিকার ওপর যতগুলো দেশ রয়েছে সবাই সেই নদীর পানি সমানভাবে পাবেন। কিন্তু ভারত সরকার সেই আইন লঙ্ঘন করে তিস্তায় গজলডোবা বাঁধ দিয়ে পানি একতরফা ব্যবহার করছে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই -স্লোগানে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচিতে রংপুরের গঙ্গাচড়া বাজারে মঞ্চে অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা দেখেছি শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার শুধু গদি টিকিয়ে রাখার জন্য, দেশের মানুষের স্বার্থ ও দেশের মর্যাদা কীভাবে বিকিয়ে দিয়েছে। ফলে আমরা তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা পাইনা।
ভারত একতরফাভাবে পানি ব্যবহার করছে। অথচ আন্তজার্তিক আইনে আছে অভিন্ন নদীতে সব দেশের অধিকার সমান। ভারত উজানে আছে বলে, তিস্তার ওপর তাদের অধিকার বেশি এটা মোটেও সত্য না। আন্তর্জাতিক আইন মতে সঠিক নয়। ওই যে তিস্তা নদী যার উৎপত্তি স্থল সিকিম থেকে অসংখ্য বাঁধ দিযে রেখেছে। তিস্তার ব্যাপারে ভারত আইন লঙ্ঘন করেছে। গজল ডোবার পরে যেটুকু পানি আছে তা নিয়ে চুক্তি করার কোনো দরকার নেই।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট এই দেশের ছাত্র-শ্রমিক-জনতা, এদেশের ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সর্বোপরি দেশের মানুষ আন্দোলনে ছিল। তারা শুধু একটি ফ্যাসিস্ট সরকারকে গদি থেকে নামায়নি, দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছিল। ফলে আমার প্রিয় এই বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার সুযোগ পেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আজকে বাংলাদেশের সব মানুষকে সব দিক থেকে সংগঠিত হতে হবে। যাতে আমরা দেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে পারি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের যে স্বপ্ন তৈরি হয়েছিল। এই দেশে সাম্য প্রতিষ্ঠা পাবে। মানুষের সমান অধিকার থাকবে। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে, সেটা আদালত কিংবা অর্থনৈতিক হোক। যে ধর্ম-জাতি-লিঙ্গেও হোক না কেন, সব মানুষের মানবিক মর্যাদা থাকবে। সেই আশা আকাঙ্ক্ষা স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও পূরণ হয়নি। আমার পিছিয়ে গেছি। সর্বশেষ ১৫ বছরে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের উল্টো স্রোতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালে আমাদের দেশের মানুষ সেই আকাঙ্ক্ষা আবারও জাগিয়ে তুলেছে। বাংলাদেশ হবে বৈষম্যহীন, এদেশ কারো কাছে মাথা নত করবে না।
রংপুর মহানগর বিএনপির আহবায়ক সামসুজ্জামান সামুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ উন নবী ডনের সঞ্চালনায় এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
এসময় বক্তব্য দেন- গঙ্গাচড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান মাবু, জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শরীফ নেওয়াজ জোহাসহ বিভিন্ন স্থরের নেতারা।
তিস্তা নদীর দুই পাড়ের ৫টি জেলার ১১টি পয়েন্টে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার ১১টি পয়েন্টে করা হয়েছে মঞ্চ ও থাকার ব্যবস্থা। তিস্তাপাড়ের মানুষ তাদের দাবি আদায় করতে টানা ৪৮ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। তিস্তা নদীর ১২৫ কিলোমিটারের দুই তীর জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছে। এই অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছে শিশু, বৃদ্ধ, নারী, পুরুষ সবাই।
সমাবেশের বিভিন্ন পয়েন্টে পৃথক পৃথকভাবে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় পার্টির (কাজি জাফর) চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কণ্ঠশিল্পী বেবি নাজনী, বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক।