দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলায় বিএনপির দুইটি পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষনায় পুরো উপজেলা জুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করেছে। এমনকি বড় ধরণের সংঘর্ষের সম্বাবনা এড়াতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বৈঠকের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ।
রবিবার(১৬ মার্চ) বেলা ১০ টায় উপজেলার পাকেরহাট শাপলা চত্ত্বরের সামনে মানববন্ধন করেছে দিনাজপুর-৪ আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী কর্নেল (অব:) মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। তার কিছুক্ষণ পর একই স্থানে দিনাজপুর-৪ আসনের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান মিয়ার পক্ষে মানববন্ধন করেছেন তার সমর্থনরা। ফলে পাকেরহাট বাজারের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে আখতারুজ্জামান মিয়ার সমাবেশ চলাকালে কয়েকজন কর্মী তাদের ফেসবুক লাইভে পার্টি অফিস ভাংচুর চিত্র তুলে ধরেন। তবে সেই ভিডিও চিত্রে কে বা কাহারা হামলা করেছেন, তা দেখা যায়নি।
জানা যায়, দিনাজপুর-৪ (খানসামা-চিরিরবন্দর) আসনে ইউনিয়ন বিএনপি’র আয়োজনে দুইপক্ষের নেতাকর্মীরা ইফতার ও দোয়া মাহফিলকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার(১৪ মার্চ) মনোনয়ন প্রত্যাশী কর্নেল (অব:) মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর নেতাকর্মীরা চিরিরবন্দর উপজেলার ৬,৯, ও ১০ নম্বর ইউনিয়নে বিএনপি কর্তৃক আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলে কেন্দ্র করে হামলা ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কর্নেল সমর্থকদের চারজন কর্মী আহত হন। সেই ঘটনার প্রতিবাদে আহতদের পরিবার বর্গ ও এলাকাবাসী মানববন্ধনের ডাক দেন।
অন্য দিকে, সাবেক সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান মিয়ার নেতাকর্মীরা খানসামা উপজেলা বিএনপির দাবী সুসংগঠিত রাজনীতিতে দ্বিধা বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনঃর্বাসনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ ডাকেন। দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে আতংক ছড়িয়েছে পড়ে উপজেলা জুড়ে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মোস্তাফিজের একজন সমর্থক জানান, গত ১৪ মার্চ চিরিরবন্দরে বিএনপির ব্যানারে কারেঙ্গাতলী নামক স্থানে দোয়া ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এসময় প্রতিপক্ষের হামলার ফলে ইফতার মাহফিল স্থগিত হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে খানসামার উপজেলার পাকেরহাট শাপলা চত্বরে মানববন্ধনের ঘোষণা দেয়া হয়।
খানসামা উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ন সম্পাদক সাঈদ আহমেদ সেলিম বুলবুল জানান, রমজান মাসে হঠাৎ করে জনৈক মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী নামে একজন ব্যাক্তি উপজেলা বিএনপির কাউকে কোন কিছু না জানিয়ে সুসংগঠিত বিএনপিকে দ্বিধাবিভক্ত করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিএনপির সদস্য না হয়েও মনোনয়ন প্রত্যাশি হয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নে ইফতার মাহফিল শুরু করেন। এরই প্রতিবাদে উপজেলা বিএনপির সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষনা করা হয়। বিএনপির নেতাকর্মীরা আসার পূর্বেই জনৈক মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে বিপক্ষের লোকজন উপজেলা বিএনপির দলীয় অফিসে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। এ ঘটনায় বিক্ষোভের পাশাপাশি প্রতিবাদ সমাবেশও করা হয়।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক চৌধুরী জানান, বিএনপিকে বিভক্তকরণের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদেই তাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি ডাকা হয়েছে।
এবিষয়ে দিনাজপুর জেলা বিএনপির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক রবিউল ইসলাম তুহিন কথা হলে তিনি বলেন, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী আওয়ামীলীগের সুবিধাভোগী একজন লোক। তিনি উপজেলায় ফ্যাসিবাদের বিএনপির নাম করে পুনঃর্বাসন করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা চলছে। খানসামা বিএনপির এক বিন্দু রক্ত থাকতে এই কাজ খানসামার মাটিতে আমরা কখনো করতে দিব না। আপনি দুইদিন আগে আমাকে ফোন দিয়ে বলে আপনি কি তুহিন সাহেব আমি বলি হুম আমি তুহিন। যে বিএনপির তুহিনকে চেনে না, বিএনপির আমিনুল হক বিএসসিকে চিনো না, যে মোহাম্মদ আলী সরকার ইউনিয়নের সভাপতিকে চেনেনা সে চিনে না, বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে সে কি পরিচয় দিতে চায়! সে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টদের সাথে নিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করে। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে আমাদের বিএনপিকে রক্ষা করতে হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ কামরুজ্জামান সরকার বলেন, দুপুরের দিকে উপজেলা জুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল। এমনকি ব্যবসায়ীরা ফোন দিয়ে জানান পরিস্থিতি স্বাভাবিক না করা হলে এলাকায় বড় ধরণের সংঘর্ষের ঘটনা ও ব্যবসায়ীদের দোকান ভাঙচুর ও লুট হতে পারে। তাই দ্রুত দুই পক্ষের সাথে বৈঠকের মাধ্যমে প্রশাসন ও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তিনি জানান, পাশাপাশি দুইপক্ষকেই সংঘাত এড়িয়ে চলার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নজমুল হক জানান, উপজেলা পরিষদে বৈঠকের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়। তবে অফিস ভাংচুরের বিষয়টি আমার জানা নেই। অফিস ভাংচুরের অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।