নীলফামারী জেলা শহরে যানজট নিরাসনে দায়িত্ব পালন করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রোড ডিভাইডার ও মানবঢাল তৈরী করে শহরকে যানজট মুক্ত করছেন তারা। তাদের হাতের ইশরায় সারিবদ্ধ হয়ে চলাচল করছে যানবাহনগুলো। কেউ কাউকে ওভারটেকও করছে না।
সকাল থেকে শহরের গাছবাড়ী মোড়, বড় বাজার ট্রাফিক মোড়, কালিবাড়ী মোড়, আন্দবাবুর পুল, পিটিআই মোড়, ডিসি চত্তর, চৌরঙ্গীর মোড়, মাধার মোড়সহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে এভাবে স্বেচ্ছায় কাজ করে যাচ্ছেন শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবীরা। তাদের এমন মহৎ কর্মকান্ড দেখে পথচারিরা বলছেন, ভালোভাবেই শিক্ষার্থীসহ স্বেচ্ছাসেবকরা ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে এনেছে, তাদের কাজ দেখে সবাই খুব খুশি হয়েছে।
একদিক দিয়ে আসা, অপর দিক দিয়ে যাওয়া যেন নিয়মে পরিনত হয়েছে। আবার মোটরবাইক চালকদের মাথায় হেলমট পড়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। ট্রাফিকের কাজ করতে শিক্ষার্থী, আনসার, বিএনসিসি, স্কাউটস ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। এরফলে নীলফামারী শহর হয়ে উঠেছে যানজটমুক্ত।
পুলিশ লাইন্স স্কুলের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাখিবুল ইসলাম রোহান জানান, একজন সাধারণ শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নিয়ে নিজের শহরে সকাল থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত যানজট নিরসনে এভাবে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এতে আমার শিক্ষক, বাবা ও মা একাজে শতভাগ উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। আমিও নিজেকে গর্বিত মনে করছি।
এদিকে, জেলার ডিমলা উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের সহকারী তহশিলদার জেলা শহরে কেনাকাটা করতে এসে মোকছেদুল হক বলেন, তাদের এমন পরিশ্রম, বুদ্ধিমত্তা ও দেশপ্রেম দেশবাসির কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। এতে যানজট মুক্ত হচ্ছে শহর। মানুষ নির্বিগ্নে চলাফেরা করতে পারছে। আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই শিশু শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থী আশরাফুল আহমেদ, রিসাদ ইসলাম, মো. সাজুসহ অনেকেই জানান, গত ৫ আগষ্টের পর থেকে বর্তমান পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যরা মাঠে নেই। নেই ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরাও। ফলে গোটা শহরে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কয়েকদিন ধরে তারা যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছে। তারা বলেন, আমাদের সহযোগিতা করছেন, সরকারী বেসরকারী ও সেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মকর্তারা।
জেলা শহরের বড় বাজার ট্রাফিকমোড়ে দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষার্থী সাজু আহমেদ বলেন, নতুন বাংলাদেশ দেশগড়ার কাজ করছি। দেশটা আমাদের, আমরাই বসবাস করছি। সকলে মিলে দেশকে সাজাতে হবে। এসময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে দেখা গেলো চৌরঙ্গীর মোড় ও ডাইলপট্টি মোড়ের ফুটপাথ থেকেও আবর্জনা ফেলছিলেন তারা।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া ওই শিক্ষার্থী জানান, মাঠে ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় যানজট চলছিলো শহরজুড়ে। এতে অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ও হাসপাতালের রোগি, গর্ভবতী মায়েরা চরম দুর্ভোগে পড়েছিল। ফলে আমরা সামাজিক মুল্যবোধ থেকে ট্রাফিকের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছি। ফায়ার ফাইটার, আনসারসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা আমাদের সহযোগিতা করছেন।
জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোর্শেদ আজম জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর পুলিশ এখনো কাজে যোগদান করেনি। ফলে শহরে যানযটের সৃস্টি হয়েছে। মানুষ স্বাভাবিক অবস্থায় চলাফেরা শুরু করেছে। ফলে শহরকে পরিস্কার পরিচ্ছন্নসহ তারা নিরলসভাবে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছে। এই মহতি কাজে তারা প্রসংসার দাবি রাখে।
নীলফামারী ফায়ার এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক এনামুল হক বলেন, তার দপ্তরের পক্ষ থেকে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে প্রত্যেক উপজেলায় ছয়জন করে ও জেলা পর্যায়ে ১৮ জন ফায়ার ফাইটারদের নিয়োজিত করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে শহরকে যানজট মুক্ত করতে যতদিন পর্যন্ত কাজ করার প্রয়োজন তারা ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করবেন।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর থেকে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা কাজে যোগদান না করায় শহরে যানজটসহ নানা ধরণের সমস্য তৈরী হচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই দুর্দিনে সেচ্ছায় যানজট নিরসনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবীরা ভূয়শি প্রশংসার দাবি রাখে। এসময় তাঁরা যেভাবে দেশকে সহযোগিতা করেছে, জাতি তাঁদের অবদান অক্ষরে অক্ষরে মনে রাখবে।
শানের কণ্ঠে ‘শ্যাম কালিয়া’
বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনে প্রতিভাবান গায়ক শান সায়েক। স্বতন্ত্র এবং প্রাণবন্ত কণ্ঠের এই গায়ক একই সঙ্গে সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালক হিসেবেও সুপরিচিত। সম্প্রতি নতুন বছর উপলক্ষে আধুনিক লোকসঙ্গীত গানের ভিডিও নিয়ে শ্রোতাদের…