রিজার্ভ বিষয়টির ‘রাজনৈতিক’ ব্যবহার বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

গত দেড়বছর ধরে গণমাধ্যমের নিয়মিত বিষয় হিসেবে ‘রিজার্ভ বাড়ছে’ আর ‘রিজার্ভ কমছে’ প্রতিবেদন বিভ্রান্তিকর হয়ে উঠছে বলে মত অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকের। যেভাবে কিছুদিন পর পর রিজার্ভ শেষ হয়ে এলো বলে আলোচনা তোলা হয় তাতে করে এতোদিনে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তারা বলছেন, সাধারণ মানুষ যারা থিওরি বুঝেন না, তাদের মনে শঙ্কা জাগিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। রিজার্ভ ওঠা নামা করে।

সাম্প্রতিক সময়ে আবারও আলোচনায় রিজার্ভ। দুই বছর আগে দেশে শুরু হওয়া ডলারের সংকট না কাটার ফলে দেশিক মুদ্রার মজুত বাড়াতে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, সেগুলো রিজার্ভ বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছে বলে কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন। সেই বিষয়টিকে আমলে নিচ্ছেন না কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন নয়, তবে আরও সংবেদনশীলতার সঙ্গে এই বিষয়ে মন্তব্য করার পক্ষে তারা।

গত ডিসেম্বর থেকে হিসেব দেখলে রিজার্ভ ওঠানামার মধ্যে রয়েছে। এবং একইসঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে একের পর এক উদ্যোগ নেওয়া হয় রিজার্ভ বাড়াতে, এবং সেটি কার্যকরি হয়েছে বলেও মত অর্থনীতিবিদদের। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি থেকে রিজার্ভ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। এরমধ্যে গত জানুয়ারিতে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আমাদের অর্থনীতির প্রাণবিন্দু। অন্য দেশের তুলনায় আমাদের রিজার্ভ ভালো অবস্থায় আছে। তবে আইএমএফ যে টার্গেট দিয়েছে, সেটা কখনও পূরণ করা যাবে বা কখনও পূরণ সম্ভব নয়।’

এই যে কমবেশি তার উদাহরণ দিয়ে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ১৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে যাওয়া রিজার্ভ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষে ২১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে উন্নীত হয়। সে মাসে পরপর টানা দুই সপ্তাহে রিজার্ভ বেড়েছে ২২৭ কোটি মার্কিন ডলার। এদিকে ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলারে ছিলো। সর্বশেষ সোমবার (১৩ মে) বিকালে আকুর বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ বিপিএম-৬ অনুযায়ী ১৮ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভ আছে গ্রস ২৩ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত দুই মাসে ১৬৩ কোটি ডলার আমদানি বিল পরিশোধ করেছে। ফলে রিজার্ভ কিছুটা কমেছে। সামনের মাসে আইএমএফের ঋণের কিস্তি আসবে। এ ছাড়া জুনের মধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থছাড় হবে। একইসঙ্গে প্রবাসী আয় ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেলে আগামী মাসেই পরিস্থিতি বদলে যাবে।

রিজার্ভ বিষয়ে আলাপ যতটা না অর্থনৈতিক তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক হয়ে গেছে উল্লেখ করে রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায় বলেন, এটা একেবারেই রাজনৈতিক করে তোলা হয়েছে। এরআগে কখনও রিজার্ভ শব্দটা জনসাধরণ শুনেছেন? এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলে কেউ বুঝে কেউ না বুঝে গণমাধ্যমের ও বিরোধীদলের কল্যানে রিজার্ভ বিষয়টি জেনে গেছেন। রিজার্ভ রাখে কেনো? সঞ্চয় করে কেনো? সেই সঞ্চয় পরিবারের মানুষের কাজে লাগাতে চায়। তো সেই কাজতো চলছে। রিজার্ভ নিয়ে যারা নেতিবাচক কথা বলছেন – তারা যেনো রিজার্ভ কমলেই খুশি হন।

  • Related Posts

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    প্রভাষ আমিন চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে একটা দারুণ বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কার বিরুদ্ধে আন্দোলন, কেন আন্দোলন, দাবি কার কাছে- এসব ঠিক পরিষ্কার নয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে এক প্রজ্ঞাপন…

    Continue reading
    ‘রাজাকার’ ইস্যু বানিয়ে একই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি

    নিজস্ব প্রতিবেদক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে রবিবার (১৪ জুলাই) চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, সরকারি চাকরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা সুবিধা পাবে না, তাহলে কি…

    Continue reading

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    মুক্ত মতামত

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    ‘রাজাকার’ ইস্যু বানিয়ে একই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি

    প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    নিয়োগ পরীক্ষায় পাস না করেও কি কোটা ব্যবস্থায় চাকরি পাওয়া যায়?

    কোটা পুনর্বহালে স্থিতাবস্থা মানে কি?

    প্রধানমন্ত্রীর সফরে পাঁচ মূলনীতির উন্নয়ন করতে চায় চীন

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি