মঙ্গলবার , ৫ মার্চ ২০২৪ | ২রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আবহাওয়া
  6. ই-পেপার
  7. কৃষি
  8. খেলাধুলা
  9. গল্প ও কবিতা
  10. জাতীয়
  11. জীবনযাপন
  12. ধর্ম
  13. প্রযুক্তি
  14. বাংলাদেশ
  15. বিনোদন

সৈয়দপুরে ব্যাঙমারী উচ্চ বিদ্যালয়ে শ্রেণী কক্ষের সংকটে চরম ভোগান্তি

প্রতিবেদক
সৈয়দপুর প্রতিনিধি
মার্চ ৫, ২০২৪ ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার শ্বাষকান্দর ব্যাঙমারী উচ্চ বিদ্যালয়ে শ্রেণী কক্ষের ব্যাপক সংকটে দুঃসহ ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠার ২ যুগেও সরকারি কোন বরাদ্দ না পাওয়ায় প্রয়োজনীয় কক্ষের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। একমাত্র সেমিপাকা টিনসেট দোচালা ভবনের ছোট ছোট মাত্র ৫ টি কক্ষে চলছে দেড় শতাধিক ছাত্র ছাত্রীর লেখাপড়া।
পরিস্থিতি সামাল দিতে বাঁশের বেড়া আর টিনের চালের ২ টি ঘর তৈরী করে কয়েক বছর ধরে কোনরকমে পাঠদান চালালেও এখন সেগুলোও জরাজীর্ণ হয়ে বাস অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই দূরাবস্থা বিরাজ করায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। পাঠদানে সৃষ্টি হয়েছে অবর্ণনীয় বিড়ম্বনা। আগামী গ্রীষ্ম ও বর্ষায় আরও দূরাবস্থার আশংকায় মহা দুশ্চিন্তায় প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, ২০০২ সালে এলাকার বিদ্যোৎসাহী নিজ উদ্যোগে ৭৮ শতক জমি দান পূর্বক প্রতিষ্ঠা করেন ব্যাঙমারী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। যা আজ উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নীত হয়েছে। ৭ জন শিক্ষক ও ৬ জন কর্মচারী নিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। গত ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠানটি ও শিক্ষক কর্মচারীরা এমপিওভুক্ত হয়।
কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়নে আজাবধি সরকারি কোন বরাদ্দ মেলেনি। যে কারণে শিক্ষার্থী বাড়লেও সুযোগ সুবিধা বাড়েনি। বরং দিন দিন নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বিশেষ করে শ্রেণী কক্ষের বড় সংকট সৃষ্টি হয়েছে। স্বল্প জায়গায় গাদাগাদি করে বসে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এতে মারাত্মক অসুবিধা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে একটি মাত্র সেমিপাকা টিনসেড ভবন। সেখানে ৫ টি ছোট ছোট র”মে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ছাত্র ছাত্রীর ক্লাস নেয়া হচ্ছে। প্রতি ক্লাসে ৪-৬ টি বেঞ্চ বসানোর মতো জায়গা নেই। তার উপর ছেলে ও মেয়েদের আলাদাভাবে বসানোয় বেঞ্চ প্রতি ৪-৫ জন করে বসতে বাধ্য হচ্ছে। এতে অত্যন্ত ঠাসাঠাসি অবস্থায় স্কুল টাইম কাটাতে হয় শিক্ষার্থীদের।
আর প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মচারীরা বাঁশের বেড়া আর টিন দিয়ে তৈরি ছোট্ট একটি ঘরে অফিস রুম বানিয়েছেন। বেড়া ভেঙে একেবারে জরাজীর্ণ। চালের টিনও স্থানে স্থানে ফুটো হয়ে গেছে। পুরো ঘরটি নড়বড়ে অবস্থা। যে কোন সময় ভেঙে পড়ার উপক্রম। জোরে বাতাস হলে দূর্ঘটনার সমুহ আশঙ্কা।
প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, আশপাশের দুই চার গ্রামে কোন মাধ্যমিক বা নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাই। একারণে এলাকার স্বার্থে আমার বাবা এই স্কুল গড়ে তোলেন। মাত্র ৩ র”মের একটি টিনসেড ঘর দিয়ে যাত্রা শুর”। পরে বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান মরহুম হেলাল চৌধুরী এই ঘরের সাথে আরও দুইটি র”ম করে দেন।
প্রথম দিকে সমস্যা না হলেও হাইস্কুলে উন্নীত হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পাওয়ায় আসনের চাহিদা বেড়েছে। একারণে ১৬৮ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে এই স্বল্প পরিসরে ক্লাস করানো দূরহ হয়ে পড়েছে। শ্রেণিকক্ষের সংকট এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে। ধর্ম ক্লাসের সময় হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষের বাইরে মাঠের এক কোনায় বেড়াহীন চালার নিচে নিয়ে গিয়ে পাঠদান করতে হয়। বিজ্ঞান ক্লাসের সময়ও একই সমস্যা দেখা দেয়।
তাছাড়া জরাজীর্ণ এই ঘরের অফিসে কষ্ট করে সব শিক্ষক কর্মচারীকে বসতে হয়। অফিসিয়াল জর”রী কাগজপত্র সহ অন্যান্য শিক্ষা সামগ্রী ও সহায়ক সরঞ্জামাদী রাখা জটিল হয়ে গেছে। একদিকে নিরাপত্তার অভাব অন্যদিকে যে কোন সময় প্রাকৃতিক দূর্যোগে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা। মুল ভবনে অফিস করলে ক্লাস র”ম কমে যাবে। এজন্য ঝুঁকি নিয়ে এখানেই অফিস রাখা হয়েছে। এদিকে এবারই ষষ্ঠ শ্রেনীতে ভর্তিচ্ছুক অনেককে ফেরত দিতে হয়েছে। আগামী বছর এক্ষেত্রে আরও বেগ পেতে হবে।
এই সমস্যা বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ উর্ধতন কর্মকর্তাদের শ্বরনাপন হয়েও দীর্ঘদিনে কোন সমাধান পাইনি। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিনের মাধ্যমে ওয়াসব্লকটি পাইলেও বিগত সংসদ সদস্য কর্তৃক কোন সহায়তাই পাইনি। ফলে শ্রেণীকক্ষ সংকট আজও কাটেনি। এতদিন কষ্টে সৃষ্টে চললেও এখন অবস্থা খুবই দূর্ভোগপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
শীতকালটা এভাবে কাটলেও আগামী গ্রীষ্ম ও বর্ষায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে পড়বে। টিনসেড ক্লাস র”মের সাথে বারান্দার টিনগুলো চৌচির হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে পানি পড়ে ক্লাসের ভিতরে ঢুকে। এতে ক্লাস করায় সমস্যা হয়। আর গরমে এক বেঞ্চে ৩ জনের বেশি বসতে পারবেনা। ফলে সংকট আরও গুর”ত্বর হবে। তাই অনতিবিলম্বে নতুন শ্রেণীকক্ষের ব্যবস্থা করা না হলে দূর্বিষহ অবস্থায় পড়বো আমরা।
সেজন্য পাঠদান স্বাভাবিক রাখতে একটি একাডেমিক ভবন খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এই সমস্যা সমাধানে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের আশু সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। যাতে আপাতত কিছু অনুদানের মাধ্যমে মেরামত কাজ করানো যায়। তাহলে কিছু দিন চালিয়ে নেয়া যাবে।
অন্যান্য যেমন, বেঞ্চ সংকট ও ল্যাব করার বিষয়েও উদ্যোগের পাশাপাশি শ্রেণীর অভাব ঘোচাতে স্থায়ী সমাধান হিসেবে ফ্যাসিলিটিস ডিপার্টমেন্টের সহায়তায় একটি ভবন নির্মাণে ব্যবস্থা নেয়া হলে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার পরিবেশ ও সুযোগ সুবিধা যথাযথ ভাবে সুরাহা হবে। সেই সাথে শিক্ষক সংকট নিরসনের আবেদনও জানান তিনি।
নীলফামারী -৪ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক বলেন, ব্যাঙমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষ সংকটের কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কষ্টের মধ্যে ক্লাস করছে। বিদ্যালয়ের সকল সমস্যা জরুরি ভিতিতে সমাধান করা হবে।

সর্বশেষ - রংপুর বিভাগ