কর্ণফুলী নদীর উপর সেই শতবর্ষী, ঐতিহ্যবাহী পুরাতন কালুরঘাট সেতুটির অধিকাংশ সংস্কারের পর তার উপর দিয়ে রেলইঞ্জিন চালিয়ে সফলভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে গতকাল শনিবার। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিমের সহায়তার বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় বিভাগের প্রকৌশলী ও প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার পর সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত শতবর্ষী কালুরঘাট সেতু দিয়ে ৯০ টন সিরিজের ইঞ্জিন দিয়ে ট্রায়াল রান দেয়া হয়।
রেলওয়ের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ টিমের কর্মকর্তারা বলছেন, পরীক্ষামূলকভাবে আজ রবিবার সকালে ট্রেন যাবে কক্সবাজার। আগামী ১১ নভেম্বর চট্টগ্রাম- কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে ৭ ঘন্টা ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়া যাবে আড়াই ঘণ্টায়।তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও কক্সবাজার-চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে পাহাড়-নদী-সবুজ অরণ্যের মধ্য দিয়ে সমুদ্রনগরী বা পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ট্রেন যাবে তা এতদিন অনেকটা স্বপ্ন ছিল। তবে সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে শিগগিরই। যদিও কয়েক মাস আগে প্রবল বৃষ্টিতে দোহাজারি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন নির্মিত রেললাইনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেক জায়গায় রেললাইনে মাটি সরে গেছে। রেললাইন বেঁকে গিয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় মনোবল ও সাহসের কারণে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শমতো সেসব ঠিক করে মোটামুটিভাবে ট্রেন চলাচলের উপযোগী একটি অবস্থায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন।
ঢাকা থেকে আসার পথে বেশ কয়েকটি নদীতো পাড়ি দিয়েই আসবে ট্রেন। তারপর চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যেতে পাড়ি দেবে কর্ণফুলী, শঙ্খ, মাতামুহুরী নদীসহ আরো বেশ কয়েকটি খাল। পাড়ি দিতে হবে দেশের অন্যতম অভয়ারণ্য চুনতি অভয়ারণ্য। চুনতি অভয়ারণ্যের মধ্য দিয়ে ট্রেন যাওয়ার সময় যাতে হাতির চলাচলে কোনো বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য হাতির চলাচলের জন্য রাখা হয়েছে পথ। আর সেই পথের নিচ দিয়ে পার হবে ট্রেন।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আশা করছেন- এই ট্রেন চলাচলের ফলে হাতির স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও চলাচলে তেমন কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। তবে পরিবেশবাদীদের দাবি ছিল চুনতি অভয়ারণ্যকে কোনোভাবে বাইপাস করা যায় কিনা। কিন্তু তা আর করা সম্ভব হয়নি ভৌগলিক কারণেই। হাতির জন্য তৈরি করা হয়েছে তাদের পথ চলাচলের করিডোর।
প্রায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল পথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে শনিবার থেকে- এমনটি বলা চলে কালুরঘাট সেতুর উপর দিয়ে ইঞ্জিন দিয়ে ট্রায়াল দেয়ার পর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১১ নভেম্বর কক্সবাজারে নির্মিত অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন ঝিনুকাকৃতির রেলস্টেশনসহ ঢাকা- কক্সবাজার-ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে।
তবে কিছু কাজ বাকি থাকায় এই রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হবে চলতি বছরের পহেলা ডিসেম্বর থেকে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি বেশ কিছু ট্রেন যাবে কক্সবাজারে। পর্যটকবাহী এক একটি ট্রেনে থাকবে ৮০০ থেকে ১২০০ যাত্রী। সব মিলিয়ে এ রেলপথে বছরে যাত্রী আসা যাওয়া করবে প্রায় ২ কোটি।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় জোনের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা বলেছেন , নদীর উপর ব্রিজের কাজ করা চ্যালেঞ্জ ছিল, কিন্তু সবার সহযোগিতায় সেটি ঠিকভাবে করতে পেরেছি। ৩টি ইঞ্জিন দিয়ে সফল ট্রায়াল রান হয়েছে, আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে কালুরঘাট সেতু হয়ে ট্রেন কক্সবাজার যাবে এ আশা করছি।
গত বৃহস্পতিবার কালুরঘাট সেতু দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিমের উপস্থিতিতে ২২০০ ও ৩০০০ সিরিজের ইঞ্জিন চালানোর কথা ছিল। কিছু ত্রুটি থাকায় তা সম্ভব হয়নি। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিম প্রধান অধ্যাপক ড. সাইফুল আমিন বলেন, ট্রেন চলাচলের জন্য বুয়েটের টিম কাজ করছে। সেটি সফল হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ট্রেন চলাচল শুরু হলে ঢাকা থেকে মাত্র ৭ থেকে সাড়ে ৭ ঘন্টায় সমুদ্র নগরী বা পর্যটননগরী কক্সবাজারে পৌঁছানো যাবে। আর চট্টগ্রাম থেকে যেতে সময় লাগবে মাত্র আড়াই ঘণ্টা। ঢাকা থেকে কক্সবাজার চলাচলে টিকেটের মূল্য হবে দেড় হাজার টাকা।