ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যর মেজরিটি দল শিবিরকে চায় কেন?

বিশেষ প্রতিনিধি

ছাত্রদলের নেতৃত্বে গঠিত ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যে যুক্ত হতে চায় ছাত্রশিবির। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াতের এই সংগঠনটি ছাত্র ঐক্যে যুক্ত হওয়ার জোরালো তৎপরতা শুরু করেছে। সূত্র বলছে, ঐক্যের কিছু কিছু সংগঠন চায় শিবির তাদের সাথে যুক্ত হোক। কেননা মাঠের আন্দোলনের জন্য শিবিরকে তাদের লাগবে বলে তারা মনে করে। শিবির কেন লাগবে প্রশ্নে বিশ্লেষকরা বলছেন, সাংগাঠনিকভাবে শক্তিশালী হওয়ায় শিবির থাকলে তারা রাস্তার আন্দোলন জোরালো করতে পারবে বলে মনে করছে। কিন্তু এটা ভুল কৌশল। কেননা জামায়াত বিএনপিকে সাথে নিলে তারা জনসমর্থন হারাবে।

ভোটের অধিকার, সন্ত্রাস-দখলদারমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস, সর্বজনীন শিক্ষা ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ১৫টি ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য’ আত্মপ্রকাশ করে। চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ে ছাত্রদের সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে ছাত্রদল, ছাত্র ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন কাজ শুরু করে। গত আগস্টে প্রক্রিয়াটি একটি গঠনের মধ্যে আসে। এতে রাখা হয়নি ছাত্রশিবিরকে।

ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের ১৫টি সংগঠন হলো— জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্রলীগ (জেএসডি), গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এলডিপি), নাগরিক ছাত্র ঐক্য, জাগপা ছাত্রলীগ, ছাত্র ফোরাম (গণফোরাম, মন্টু), ভাসানী ছাত্র পরিষদ, জাতীয় ছাত্রসমাজ (কাজী জাফর), জাতীয় ছাত্রসমাজ (বিজেপি-পার্থ), জাগপা ছাত্রলীগ (খন্দকার লুৎফর), ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, বিপ্লবী ছাত্র সংহতি এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।

ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ছাত্রশিবির শুরু থেকেই আমাদের এখানে ঢুকতে চায়। এটার কৌশল হিসেবে তারা কয়েকটি সংগঠনের মাধ্যমে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপ প্রয়োগ করছে। কীভাবে শিবিরকে এই ঐক্যে নেওয়া যায়, শিবির ছাড়া ছাত্র ঐক্য কাজ করতে পারবে না। তারা প্রভাবিত করতে চেষ্টা করছে।’

কেন অন্য সংগঠনগুলোর মনে হয় তাদের সাথে শিবিরকে লাগবে জানতে চাইলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘বিএনপি কখনোই জামায়াত বা তার অঙ্গসংগঠনকে ছাড়তে পারবে না। তারা এটা করতে চায় না। এই সংগঠনগুলোর আদর্শ জন্ম পথ সব এক, আমি এদের একই মায়ের পেটের সহেদর হিসেবে দেখি। ফলে কখনও বাদ দিয়েছে িএমনটা নয়। বরং তারা অপ্রকাশ্যে কিছুদিন থেকে মানুষের সমবেদনা জোগাড় করতে চেয়েছিলো।’

গত ১১ অক্টোব ছাত্রশিবিরের ঝটিকা মিছিল থেকে সংগঠনটির ১২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয় ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য। মূলত সেদিন থেকেই এই বিষয়টি জোরেশোরে উঠতে শুরু করে। বিবৃতিতে কাদের সাক্ষর ছিলো সেটা দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যায় কারা শিবিরকে এই ঐক্যে যুক্ত করতে যায়। সাক্ষরদাতারা হলেন, ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক রাশেদ ইকবাল খান (ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছাত্রদল), মশিউর রহমান রিচার্ড (সভাপতি-ছাত্র ফেডারেশন) ও আরিফুল ইসলাম আদীব (সাধারণ সম্পাদক, ছাত্র অধিকার পরিষদ)।

  • Related Posts

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    প্রভাষ আমিন চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে একটা দারুণ বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কার বিরুদ্ধে আন্দোলন, কেন আন্দোলন, দাবি কার কাছে- এসব ঠিক পরিষ্কার নয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে এক প্রজ্ঞাপন…

    Continue reading
    ‘রাজাকার’ ইস্যু বানিয়ে একই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি

    নিজস্ব প্রতিবেদক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে রবিবার (১৪ জুলাই) চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, সরকারি চাকরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা সুবিধা পাবে না, তাহলে কি…

    Continue reading

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    মুক্ত মতামত

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    ‘রাজাকার’ ইস্যু বানিয়ে একই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি

    প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    নিয়োগ পরীক্ষায় পাস না করেও কি কোটা ব্যবস্থায় চাকরি পাওয়া যায়?

    কোটা পুনর্বহালে স্থিতাবস্থা মানে কি?

    প্রধানমন্ত্রীর সফরে পাঁচ মূলনীতির উন্নয়ন করতে চায় চীন

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি