আমাদের অনেকেরই সারাদিন ক্লান্ত লাগে আর মুড বিগড়ে থাকে। এজন্য সেরোটোনিন বাড়ায়, এমন খাবার খেতে হবে।

এমন অলস দিনে তো বটেই,  সপ্তাহের কাজের দিনগুলোতেও কেন যেন ক্লান্তি ভর করে যখন তখন। আর মুডের বারোটা বেজে থাকে বলে কিছুই ভালো লাগে না৷ এমন অবস্থা কিন্তু আমাদের অনেকেরই হয়। আমরা আসলে জানিনা, এ থেকে খুব সহজেই মুক্তি দিতে পারে সঠিক খাদ্যাভ্যাস। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সেরোটোনিন বাড়ায় এমন খাবার রোজ খেলে সারাদিন এভাবে ক্লান্ত লাগবে না। মুডও থাকবে ভালো।

সেরোটোনিন বাড়ায় এমন খাবার রোজ খেলে সারাদিন ক্লান্ত লাগবে না

সেরোটোনিন আসলে কী

সেরোটোনিন হচ্ছে  মানবদেহে উৎপাদিত একটি রাসায়নিক যৌগ, যা মানুষের মনমেজাজ, ঘুম, পরিপাকতন্ত্রের ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। পাশাপাশি হিলিং ফ্যাক্টর হিসেবেও এর ভূমিকা রয়েছে। এই সেরোটোনিন মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ থেকে পুরো মানবদেহে প্রয়োজনীয় বার্তা প্রেরণ করে। সেরোটোনিনের মাত্রা কমে গেলে মানুষের মধ্যে হীণমন্যতা, বিষন্নতার প্রভাব বেড়ে যায়। বলা যায়, মানুষের মনমেজাজের প্রায় অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে এই সেরোটোনিন। এজন্য অনেকেই সেরোটোনিনকে হ্যাপি হরমোন বা ফিল গুড হরমোন হিসেবেও আখ্যায়িত করে। এই সেরোটোনিনের মাত্রা মানবদেহে স্বাভাবিক থাকা খুবই জরুরী।

সেরোটোনিনের মাত্রা কমে গেলে যা হয়

১. ঘুমের সমস্যা বেড়ে যাওয়া

২. মেজাজ খিটখিটে থাকা

৩.  হজমে সমস্যা দেখা দেওয়া

৪. ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া

৫.  শরীরের ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া

৬. শরীর সহজে নড়াচড়া করতে সমস্যা দেখা দেওয়া

৭. শারীরিক এবং মানসিক দুর্বলতা বেড়ে যাওয়া

৮. হাড়ের ক্ষয় বৃদ্ধি পাওয়া

সেরোটোনিন নেমে গেলে সারাদিন ক্লান্ত লাগে, মুড বিগড়ে থাকে

বুঝতেই পারছেন, এই সেরোটোনিনের মাত্রা ঠিক রাখা আমাদের জন্য অতি আবশ্যক। এই হ্যাপি হরমোন বিশেষ কিছু খাদ্য বেশি বেশি খেলেই বাড়বে। প্রোটিনের সরল রূপ অ্যামিনো এসিড  ট্রিপ্টোফেনই মূলত শরীরে সেরোটোনিন উৎপাদনে কাজ করে। সুতরাং যেসব খাদ্যে ট্রিপ্টোফেন আছে সেগুলো প্রতিদিনের ডায়েটে রাখলে সহজেই এর মাত্রা স্বাভাবিক রাখা যায়।

সেরোটোনিন-বান্ধব খাবার কোনগুলো

১. ডিম

গবেষণায় জানা যায়, উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ ডিম শরীরে ট্রিপ্টোফেনের মাত্রা বৃদ্ধি করে থাকে। সুতরাং ডিম প্রতিদিনের ডায়েটে রাখা যেতে পারে। তাছাড়া ডিমে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড, কোলিন, টাইরোসিন থাকে যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ডিম

২. চিজ বা পনির

চিজ বা পনিরে পর্যাপ্ত ট্রিপ্টোফেন থাকে। তাই চিজ খেলে সেরোটোনিন উৎপাদনের হার বৃদ্ধি পায়।

পনির

৩. আনারস

পাকা আনারসে প্রচুর পরিমাণে ট্রিপ্টোফেন পাওয়া যায়। তাছাড়া পাকা লাল টমেটো খেলেও প্রচুর পরিমাণে এই অ্যামিনো অ্যাসিড মেলে।

আনারস

৪. বীজ ও বাদাম

সকল ধরনের বাদামে আছে ওমেগা  ৩ ফ্যাটি এসিড আর ট্রিপ্টোফেন। তাছাড়া অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ফাইবার আর ভিটামিনসহ নানা উপকারী উপাদান রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বাদামে। চিয়া সিড খুবই উপকারী একটি বীজ। এতে পর্যাপ্ত ট্রিপ্টোফেন থাকে।

বীজ ও বাদাম

৫. মাছ

মাছ প্রোটিনের উৎস হিসেবে সবচেয়ে উপকারী বলা যায়। স্যালমন মাছে প্রচুর ট্রিপ্টোফেন রয়েছে। তাই প্রতিদিনের ডায়েটে মাছ রাখতে পারেন।

মাছ

৬. ডার্ক চকলেট

ডার্ক চকলেটে প্রচুর অ্যামিনো এসিড থাকে, যা শরীরের সেরোটোনিন লেভেল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

চকলেট

৭. সবুজ শাকসবজি

সবুজ শাকসবজিতে ভিটামিন আর ফাইবার পাওয়া যায়, যা সেরোটোনিনের মাত্রা ঠিক রাখে।

ব্রকলি

সঠিক খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনযাপন সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখা প্রয়োজন। প্রতিদিন  ব্যায়াম, হাঁটাহাটি করলে সেরোটোনিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এতে মনমেজাজ ভালো থাকে, কাজ করতে স্পৃহা পাওয়া যায়, আত্মবিশ্বাস বাড়ে আর ঘুমের সমস্যাও দূর হয়।

সূত্র: হেলথলাইন

ছবি: পেকজেলস ডট কম