কাঞ্চন সরকার, চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে প্রাণনাশের ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ ও মামলা ধামাচাপা দিতে মা-মেয়ে ও ছেলেকে ঘরের মধ্যে প্রেট্রোল দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার আসামী উপেন চন্দ্র পাল ওরফে কালু (৩৬) গতকাল ১৯ জানুয়ারি রবিবার দিনাজপুর আদালতে আত্নসমর্পণ করেছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার নশরতপুর গ্রামের বছির মেম্বারপাড়ার ভুক্তভোগী কিশোরী (১৫) ওই এলাকার পালপাড়ার মৃত নির্মল চন্দ্র পালের ছেলে উপেন চন্দ্র পাল ওরফে কালুর (৩৬) বাড়িতে কুমারের মাটির কাজ নেয়। এতে কালুর দৃষ্টি পড়ে ভিকটিমের ওপর। দীর্ঘদিন ধরে কালু তাকে বিভিন্ন উচ্চাবিলাসী প্রলোভন দেখিয়ে কুপ্রস্তাবসহ উত্ত্যক্ত করে আসছিল। একপর্যায়ে ভিকটিম এসব ঘটনা তার মাকে জানায়। ভিকটিমের মা কালুকে ডেকে নিয়ে বিরক্ত করতে নিষেধ করেন। এরপর কালু উত্ত্যক্তের মাত্রা আরও বৃদ্ধি করে। গত ২রা ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় ভিকটিম একাকী বাড়ির পাশে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যায়। এ সুযোগে ওত পেতে থাকা কালু ভিকটিমকে ওড়না দিয়ে বেঁধে বাঁশঝাড়ে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এরপর বিষয়টি কারও নিকট প্রকাশ না করার জন্য তাকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদর্শন করে। ভিকটিম গত ১৩ই ডিসেম্বর ঘটনাটি তার মাকে জানায়। এ ঘটনায় কালু ও তার পরিবারের লোকজন স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করে কালক্ষেপন করতে থাকে। নিরুপায় হয়ে ভিকটিমের মা গত ১৪ই চিরিরবন্দর ডিসেম্বর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। আরও জানা যায়, এ মামলা করার কারণে গত ৭ই জানুয়ারি রাগে কালু ভিকটিমের বাড়ির বাইরে চর্তুদিকে খড় দিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিয়ে তাদেরকে হত্যার চেষ্টা করে। বিষয়টি টের পেয়ে সবাি ঘর থেকে বের হয়ে আসে। এসময় তাদের চিৎকারে পাড়া-প্রতিবেশীরা ঘটনাস্থলে ছুটে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। আগুনে তাদের শরীরে দেয়া কম্বল-চাদরসহ ঘরের আসবাবপত্র পুড়ে যায়।
এ ধর্ষণ ঘটনায় মামলা দায়ের হওয়ার মাস পেরিয়ে গেলেও আসামী গ্রেপ্তার না হওয়ায় গত ১৮ই জানুয়ারি শনিবার দুপুর ২টায় আসামীকে গ্রেপ্তার ও সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে ভুক্তভোগী মুসলিম নারী ও এলাকাবাসীর আয়োজনে উপজেলার রানীরবন্দরের সুইহারি বাজারে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করে। এতে আগামী তিনদিনের মধ্যে আসামীকে গ্রেপ্তার করা না হলে কঠোর আন্দোলনে নামবে জলে তৌহিদি জনতা হুশিয়ারী দেন।
চিরিরবন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি-তদন্ত) আহসান হাবিব জানান, পুলিশ আসামী কালুকে হণ্যে হয়ে খুঁজছিল। ঘটনার পর থেকে সে পলাতক ছিল। অবশেষে কালু গতকাল ১৯ জানুয়ারি রবিবার দিনাজপুর আদালতে আত্নসমর্পণ করেছে।