টানা ভারী বৃষ্টি ও বাঁধ খুলে দেয়ায় ভারত থেকে নেমে আসা উজানে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে দেশ। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর স্বাস্থ্য ও খাদ্য ঝুঁকি মোকাবিলায় সব পক্ষ মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করার রূপরেখা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ৪৪ এনজিওর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২৪ আগস্ট) বিকেল ৪টায় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় এই বৈঠক শুরু হয়ে বিকেলে সাড়ে ৫টায় শেষ হয়। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান।
শফিকুল আলম জানান, ‘প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সরকার এই মুহূর্তে বন্যা মোকাবিলাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমাদের অব্যশই এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। সবাই মিলে এ দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে হবে।’
ড. ইউনূস বন্যা মোকাবিলায় উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ বিতরণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সমন্বয় বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, ‘বন্যা মোকাবিলায় সরকার, এনজিওসহ যারা যারা কাজ করছেন, তাদের সবার মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে। সম্ভব হলে জেলা পর্যায়েও বন্যা মোকাবিলার কাজে সমন্বিতভাবে করতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কোটি কোটি মানুষ বন্যায় উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ নিয়ে এগিয়ে আসছে। তাদের মহৎ উৎসাহের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। এজন্য আমাদের সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
টানা ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে দেশ। বন্যায় বিপর্যস্ত হয়েছে ১১টি জেলা। ভয়াবহ বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ।
বৈঠকে মুহাম্মদ ইউনূস বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরে আরও বেশি কাজ করতে হবে বলে উল্লেখ করে বন্যা পরবর্তী খাদ্য ও স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব পক্ষকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
ছাত্র-জনতার অভুত্থানের মাধ্যমে দেশে দ্বিতীয় বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে উল্লেখ করে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস বলেন, ‘তরুণরা আমাদের জন্য মহৎ সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। দ্রুত এই সুযোগের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে।’
সরকার প্রধান আরও বলেন, কেবল বন্যা মোকাবিলায় গুরুত্ব দিলে হবে না, কিভাবে দেশকে বন্যামুক্ত রাখা যায় সেদিকেও মনোযোগী হতে হবে।
এদিকে, শনিবার (২৪ আগস্ট) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দেয়া সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা রাজ্যে বৃষ্টি কমে এসেছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে এলাকাগুলোর ছয়টি নদীর নয়টি স্টেশনের পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব এলাকার নদীর পাঁচটি স্টেশনে এখন পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে।
এতে বলা হয়েছে, বিগত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকায় উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি। উজানের নদ-নদীর পানি কমে যাচ্ছে। ফলে এখন মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি শুক্রবার (২৩ আগস্ট) থেকে উন্নতি হচ্ছে।