নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে বিকৃত ও খণ্ডিত করে প্রচার করে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের একাংশ বিশৃঙ্খল সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি বলছেন, প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলেননি। অথচ তাঁর বক্তব্য বিকৃত করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করা হচ্ছে।
রবিবার গণভবনে চীন সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কোটা বিষয়ক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্টভাবে বলেন, ‘বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন, এ বিষয়ে কোনো কিছু বলা ঠিক হবে না। আদালত থেকে রায় আসুক, তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের সব মানুষের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। নারী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, অনগ্রসর জেলা সহ অনগ্রসর নাগরিকদের জন্য সুযোগ করে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। সমান যোগ্যতা সম্পন্ন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও রাজাকারের সন্তানের মধ্যে আমি অবশ্যই একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে বেছে নিবো। কারণ তাদের পূর্বপ্রজন্ম দেশের জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছে ‘
প্রধানমন্ত্রীকে একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘মেধা ও কোটার মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কোটা থেকে যারা নিয়োগ পায়, তারাও মেধাবী, তারাও প্রিলিমিনারি, লিখিত এবং ভাইবা পাস করে আসে। তারপর যখন সমান নম্বর প্রাপ্ত একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, একজন রাজাকারের সন্তান তখন আপনি কাকে বেছে নেবেন?
এই প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অবশ্যই। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান চাকরি পাবে না? রাজাকারের সন্তান চাকরি পাবে?
অথচ কারো বক্তব্য বিকৃতভাবে প্রচার করা বাংলাদেশের দণ্ডবিধি অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একইভাবে অনলাইনে “অপপ্রচার বা মিথ্যা বলিয়া জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও, কোনো তথ্য সম্পূর্ণ বা আংশিক বিকৃত আকারে প্রকাশ, বা প্রচার করেন বা করিতে সহায়তা করেন”, তবে তা সাইবার নিরাপত্তা আইন অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃতভাবে প্রচার করে রবিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মিছিল করে আন্দোলনকারীরা। এসব তারা নিজেদেরকে ‘রাজাকার’ বলে গর্বের সঙ্গে স্লোগান দেয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকাররা নিজেদের রাজাকার পরিচয় নিয়ে বড়াই করতো। সে সময়ে দৈনিক সংগ্রাম সহ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী গণমাধ্যমগুলো রাজাকারদের কৃতিত্ব নিয়ে সংবাদও প্রকাশ করেছে। আন্দোলনকারীরা নিজেদেরকে স্ব-ঘোষিত “রাজাকার” বলে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও বাংলাদেশের অস্তিত্বকেই অপমানিত করেছেন।
রাজাকাররা একাত্তরে নারী ধর্ষণ, মানুষ হত্যা, লুটপাট ও সন্ত্রাসের সাথে জড়িত ছিল। উপরন্তু তারা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী, পাকিস্তানপন্থী। বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের খুনি-ধর্ষক ও স্বাধীনতার বিরোধীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ রাষ্ট্রদ্রোহমূলক এবং ঘৃণ্য একটি অপরাধ।
কোনো স্বাভাবিক মানুষ নিজেকে রাজাকার বলতে পারার কথা না উল্লেখ করে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন তা তারা আবারও শুনে দেখতে পারে। কোনভাবেই তিনি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলেননি। অথচ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃতি করে প্রচার করছে তারা। সতর্ক না থাকলে বার বার তারা এই চেষ্টা অতীতে করেছে, আবারও করবে।