প্রধানমন্ত্রীর সফরে পাঁচ মূলনীতির উন্নয়ন করতে চায় চীন

নিজস্ব প্রতিবেদক

৪৯ বছর আগে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে বাংলাদেশ এবং চীন উভয় দেশ মূল ইস্যুতে একে অপরকে সমর্থন করেছে এবং আধুনিকীকরণকে এগিয়ে নিতে একসঙ্গে কাজ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার চীন সফরকে ঘিরে পাঁচটি মূলনীতিকে একটি নতুন স্তরে উন্নীত করতে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে চীন। চীনের রাষ্ট্রয়াত্ত্ব সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস এক প্রতিবেদনে এতথ্য জানিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর নিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে নের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, “বাংলাদেশ ভালো প্রতিবেশী, ভালো বন্ধু ও ভালো অংশীদার। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর ঘিরে পাঁচটি মূলনীতিকে একটি নতুন স্তরে উন্নীত করতে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে চীন। এগুলো হচ্ছে – শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, পারস্পারিক আস্থা গভীর করা, উন্নয়ন কৌশল আরও সমন্বয় করা, উচ্চমানের একটি বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনেশিয়েটিভ এগিয়ে নেওয়া এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও উন্নত করা।” 

তিনি দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন, যা শ্রদ্ধা, সমতা এবং পারস্পরিক উপকার ও সহযোগিতার দ্বারা চিহ্নিত হয়েছে বলে মনে করেন। তিনি বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার একটি সুন্দর উদাহরণ স্থাপন করেছি।

সম্প্রতি বছরগুলোতে চীনের নেতারা কৌশলগত দিকনির্দেশনায় চীন ও বাংলাদেশ তাদের কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্ব গভীর করেছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ সহযোগিতা অর্জন করেছে বলে মনে করেন তিনি। 

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরের লক্ষ্য এই প্রচেষ্টাকে আরও এগিয়ে নেওয়া।

নতুন মেয়াদ শুরু হওয়ার পর এবং শেষ চীন সফরের পাঁচ বছর পর এই সফর করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরকালে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। দুই প্রধানমন্ত্রী সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। তারা ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব গভীর করা, পারস্পরিক উপকারী সহযোগিতা সম্প্রসারণ এবং পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য, ব্যবসা এবং বিনিয়োগের সুযোগ বিষয়ক একটি শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন, যা দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়টি তুলে ধরবে।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বেল্ট অ্যান্ড রোড রিসার্চ সেন্টারের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মোহাম্মদ সাইয়েদুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরকে একটি স্মরণীয় ঘটনা হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এতে সহযোগিতার নতুন পথ তৈরি এবং উভয় দেশের পারস্পরিক স্বার্থে বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।

তিনি মনে করেন, চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই বা বিশেষ সুবিধার দাবি নেই।

সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ইনস্টিটিউটের গবেষণা বিভাগের পরিচালক কিয়ান ফেং গ্লোবাল টাইমসকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটি শেখ হাসিনার পঞ্চম চীন সফর এবং এ বছরের শুরুতে পুনঃনির্বাচিত হওয়ার পর তার প্রথম সফর। এটি চীন ও বাংলাদেশি নেতাদের মধ্যে ঘন ঘন উচ্চ পর্যায়ের বিনিময়ের ইঙ্গিত দেয় এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে উভয় পক্ষ যে গুরুত্ব দেয়- তা তুলে ধরে।’

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে চীন ও ভারতের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ নীতি প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

  • Related Posts

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    প্রভাষ আমিন চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে একটা দারুণ বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কার বিরুদ্ধে আন্দোলন, কেন আন্দোলন, দাবি কার কাছে- এসব ঠিক পরিষ্কার নয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে এক প্রজ্ঞাপন…

    Continue reading
    ‘রাজাকার’ ইস্যু বানিয়ে একই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি

    নিজস্ব প্রতিবেদক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে রবিবার (১৪ জুলাই) চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, সরকারি চাকরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা সুবিধা পাবে না, তাহলে কি…

    Continue reading

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    মুক্ত মতামত

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    ‘রাজাকার’ ইস্যু বানিয়ে একই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি

    প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    নিয়োগ পরীক্ষায় পাস না করেও কি কোটা ব্যবস্থায় চাকরি পাওয়া যায়?

    কোটা পুনর্বহালে স্থিতাবস্থা মানে কি?

    প্রধানমন্ত্রীর সফরে পাঁচ মূলনীতির উন্নয়ন করতে চায় চীন

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি