নীলফামারীর ডিমলায় ডালিয়া পয়েন্টে গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষন ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে মঙ্গলবার (২ জুলাই) সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ৫১ দশমিক ৯৮ সেন্টিমিটার যা বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওই পয়েন্টে বিপদসীমা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার।
আজ বুধবার (৩ জুলাই) সকাল ছয়টায় ৫১ দশমিক ৯৮ ও ৯ টায় ৫১ দশমিক ৯৬ সেন্টিমিটারে অবস্থান করছে। তবে পানির উঠানামা উজানের ভারী বর্ষন ও পাহাড়ী ঢলের ওপর নির্ভর করে।
পানি বৃদ্ধি পেয়ে তিস্তা তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে, উপজেলার খগাখড়িবাড়ী, খালিশাচাপানী, বাইশপুকুর, টেপাখড়িবাড়ী, ঝুনাগাছচাপানী, পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নসহ বেশকিছু এলাকা পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। নদীর আশপাশের পরিবারগুলো পানি বন্দিসহ কৃষিক্ষেত,পুকুর, বাদাম ক্ষেত ও বীজতলা তলিয়ে রয়েছে। এ ছাড়াও, বন্যার্তরা হাঁস, মুরগি ও গরু ছাগল নিয়ে বিপাকে পড়েছে এবং চুলা জ্বালাতে পারছে না।
পাউবো সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ছয়টায় ৫১ দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার ফের সকাল ৯টায় দুই সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ৫১ দশমিক ৮৭ থেকে দুই সেন্টিমিটার কমে দুপুর ১২ টা আবার ৫১ দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটারে নেমে আসে। যা বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। আবার বিকাল ৩টায় ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ৫১ দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হয়।
আবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফের ব্যারাজ পয়েন্টে তিন সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ৫১ দশমিক ৯৮ সেন্টিমিটার যা বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। যা আজ বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বিপদসীমার ৫১ দশমিক ৯৬ সেন্টিমিটার অর্থাৎ ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাউবোর পানি পরিমাপক (মিটার রিডার) নুরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে ৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বন্যার পানি উঠানামা নির্ভর করে উজানের বন্যার ওপর। বন্যার পানি নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন বলেন, গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষনে উজানে বন্যা দেখা দেওয়ায় ইউনিয়নের পূর্বখড়িবাড়ী ও চরখড়িবাড়ী এলাকার একটি বালির বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে ওই দুই গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। যা স্থানীয়ভাবে আমরা মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছি। তবে বৃষ্টিপাত ও উজানের বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এলাকার ঘরবাড়ী সরিয়ে নিতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা-উদ-দৌল্লা বলেন, গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ব্যারাজ পয়েন্টে ৫১ দশমিক ৯৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে আজ সকাল ৯টায় ৫১ দশমিক ৯৬ সেন্টিমিটার অর্থাৎ ব্যারাজ পয়েন্টে ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যা নিয়ন্ত্রনে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। তিস্তাপাড়ের মানুষকে সর্তক করার পাশাপাশি সকল প্রকার দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুুত আছি বলে তিনি জানান।
এদিকে, ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালমা জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেখভালের নির্দেশ দেয়া আছে। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবে। পানিবৃদ্ধি পাওয়ায় সার্বক্ষনিক এলাকার খোঁজ খবর নিচ্ছেন তারা।