বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে নীলফামারীতে সনাক এর উদ্যোগে মানববন্ধন

আজ (বুধবার) বিশ্ব পরিবেশ দিবস। প্রতিবছর ৫ জুন বিশ্বের প্রতিটি দেশে পালিত হয় দিবসটি। দিবসটির মূল লক্ষ্য পরিবেশ দূষণের কারণ ও দূষণ থেকে বাঁচার উপায় খুঁজে বের করা। এ ছাড়া মানুষকে পরিবেশ রক্ষায় সচেতন করে তোলাও এ দিবসের অন্যতম একটি লক্ষ্য। ‘‘ভূমির অবক্ষয় ও মরুকরণ রোধ এবং খরা সহনশীলতা অর্জন; চাই আন্তর্জাতিক ও জাতীয় অঙ্গীকারের কার্যকর বাস্তবায়ন’’ দাবিতে নীলফামারীতে মানববন্ধন করেছে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে নানাবিধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে উক্ত কর্মসূচি আয়োজন করা হয়।মানববন্ধনে সনাক ও ইয়ুথ এনগেজমেন্ট এন্ড সাপোর্ট (ইয়েস) গ্রুপের সদস্যবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

বুধবার সকালে জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে ঘন্টাব্যাপী চলমান মানববন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সনাক সভাপতি মো. আকতারুল আলম। তিনি ভূমির অবক্ষয় ও মরুকরণ রোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে সনাক-টিআইবিএর ১৯টি দাবি উত্থাপন করেন । দাবী সমূহ হলো:

১. তাপমাত্রাহ্রাস এবং খরা ও মরুকরণ প্রতিরোধে সরকার প্রদত্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার সমূহের সময়াবদ্ধ ও কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
২. পরিবেশ সুরক্ষায় এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-১৫ অর্জনে জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত বিষয় গুলোকে যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করে সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতিতে অন্তর্ভুক্ত এবং তাবাস্তবায়নে গুরুত্বারোপ করতে হবে।
৩. ‘‘ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইন ২০২৪’’এর প্রেক্ষাপট অংশে পরিবেশ সুরক্ষা, খাদ্য উৎপাদনে ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার শব্দগুলোর সঙ্গে ‘‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা’’উল্লেখ করতে হবে।
৪. জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, ভূমি পুনরুদ্ধার, মাটির উর্বরতাবৃদ্ধি সহ খরা মোকাবেলায় কৃষি ব্যবস্থাপনার জন্য টেকসই ভূমি ব্যবহার কৌশল ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
৫. প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর, জলাশয়, বনাঞ্চল, পাহাড় ও পরিবেশ সংবেদনশীল এলাকা সঠিক ভাবে চিহ্নিত করে তা সংরক্ষণে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৬. অবৈধভাবে দখলকৃত বনভূমি ও নদীর জায়গা উদ্ধারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭. ২০৩০ সালের মধ্যে ল্যান্ডডিগ্রেডেশন নিউট্রালিটি বা ভূমির অবক্ষয় শূন্যে নামিয়ে আনতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৮. ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে পরিবেশ ও জলবায়ু-সংক্রান্ত বিষয়কে যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।
৯. বনভূমি, জলাভূমি ও কৃষিজমির অবক্ষয় রোধে অপরিকল্পিত নগরায়ন এবংশিল্পকারখানা স্থাপন বন্ধকরতে হবে।
১০. পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণএবং সেই সম্পদে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রবেশগম্য তা নিশ্চিত করতে হবে।
১১. জলবায়ু তহবিলের কার্যক্রমে খরা মোকাবেলা ও পানি ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে।
১২. বন, নদী ও জলাভূমির দখল এবং এর শ্রেণি পরিবর্তন করে সরকারি ও বেসরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন বন্ধ করতে হবে; ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন রোধে পরিবেশ আইন সহ সংশ্লিষ্ট আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
১৩. অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ভূগর্ভস্থ পানির উত্তোলন বন্ধ করতে হবে; ভূমি ও পানি দূষণ রোধে কৃষি ও মৎস্য চাষে কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
১৪. পলিথিনসহ শিল্পবর্জ্য নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালার কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
১৫. প্রয়োজনীয় জলবায়ু তহবিল প্রদানে উন্নত দেশগুলোকে বাধ্য করতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক পরিসরে অধিপরামর্শ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।
১৬. তাপমাত্রা হ্রাস, খরা ও মরুকরণ প্রতিরোধে সরকারকে জলবায়ু সহনশীল প্রযুক্তি ব্যবহারে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।
১৭. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় আদিবাসী, উপকূলীয় এবং খরা উপদ্রুত অঞ্চলের জনগোষ্ঠী ও ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলকে গুরুত্ব প্রদান করে প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।
১৮. বাস্তুতন্ত্র, ভূমি ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণকে উৎসাহিত করে টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।
১৯. পরিবেশ সংরক্ষণ-সংক্রান্ত কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত সহ স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি মূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

  • Related Posts

    আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টের উদ্বোধন

    নীলফামারীর ডিমলায় ডিমলা মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে শনিবার রাতে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট ২০২৫ এর ট্রফি উন্মোচন ও উদ্বোধন করেন ডিমলা উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও আরাফাত…

    Continue reading
    নীলফামারীতে কালের বির্বতনে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন ঐতিহ্য মৃৎশিল্প

    কালের বির্বতনে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। নীলফামারী সদর উপজেলা ও সৈয়দপুর উপজেলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প দুইটি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও নানাবিধ সমস্যার কারণে আজ বিলুপ্তির পথে। এক সময়ে মাটির জিনিসপত্র…

    Continue reading

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    মুক্ত মতামত

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    ‘রাজাকার’ ইস্যু বানিয়ে একই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি

    প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    নিয়োগ পরীক্ষায় পাস না করেও কি কোটা ব্যবস্থায় চাকরি পাওয়া যায়?

    কোটা পুনর্বহালে স্থিতাবস্থা মানে কি?

    প্রধানমন্ত্রীর সফরে পাঁচ মূলনীতির উন্নয়ন করতে চায় চীন

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি