নিজস্ব প্রতিবেদক
উপজেলা নির্বাচন ঘিরে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের দ্বন্দ্ব-কোন্দল চরমে উঠেছে। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে অংশগ্রহণকারী মোট ৭৩ জন নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। তবে বহিস্কৃত নেতারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না বলে জানিয়েছেন। তারা বলছেন, বহিষ্কারের আগে শোকজ করতে। সন্তোষজনক জবাব না পেলে তবেই বহিষ্কার করার নিয়ম। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দলের গঠনতন্ত্র মানছেন না বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে।
শুক্রবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানায় বিএনপি। এতে বলা হয়, বহিষ্কার করা ৭৩ জন নেতার মধ্যে ২৮ জন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী। ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ২৪ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ২১ জন। ৭৩ জনের মধ্যে ৫৫ জন উপজেলা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পদধারী নেতা রয়েছেন। অন্যরা সাবেক নেতা ও তাঁদের স্বজন।
তবে যাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে, তাঁরা দলের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাবছেন না। বহিষ্কার করা হতে পারে, এমন আঁচ তাঁরা আগেই পেয়েছিলেন। ফলে সাংগঠনিক শাস্তির জন্য তাঁদের এক ধরনের মানসিক প্রস্তুতি ছিল। বহিষ্কৃত সবাই শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকবেন বলে জানিয়েছেন।
কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রমিজ উদ্দিন। বহিষ্কারাদেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে বহিষ্কার নিয়ে ভাবছি না। তাদের ক্ষমতা আছে বলেই বহিষ্কার করেছে। এটা কোনো বিষয় না। আমি নির্বাচনের মাঠে আছি এবং শেষ পর্যন্ত থাকব।’
ফরিদপুর সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে অংশ নিচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রউফ উন নবী। বহিষ্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বহিষ্কার সোজা কথা না। আগে শোকজ করবে। তারপর সন্তোষজনক জবাব না পেলে বহিষ্কার করবে। আর বহিষ্কার করবে কেন? আমি তো দল থেকে নির্বাচন করছি না। স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। ৪০ বছর রাজনীতি করে যদি নির্বাচন না করতে পারি, তাহলে দল করে লাভ কি?’
গাজীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা বিএনপির সহসভাপতি ইজাদুর রহমান মিলন জানান, তিনি বহিষ্কারের কোনো চিঠি পাননি। দল যে সিদ্ধান্তই নিক, ভোটের মাঠে আছেন। শেষ পর্যন্ত থাকবেন।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নাজুমল আলম বলেন, ‘দল যা ভালো মনে করেছে তা করেছে, দলের বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। আমি তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করছি। নির্বাচন থেকে পিছপা হব না। মাঠ ছাড়ব না।’
শাল্লা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারম্যান প্রার্থী গণেন্দ্র চন্দ্র সরকার বলেন, ‘আমি ৫০ বছর ধরে রাজনীতি করছি। তৃণমূলের মানুষের সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক। তারাই আমাকে প্রার্থী করেছে। আমি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই নির্দেশনা মানি না।’
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি শামসুর রশীদ মজনু ওই উপজেলার চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন৷ তিনি উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি এবং জেলা বিএনপির সদস্যও ছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি এখানকার বিএনপি নেতাদের অবহেলার শিকার৷ আমি বটতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলাম মোট ১৪ বছর৷ কিন্তু আর আগে উপজেলা বা সংসদ নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি৷ বিএনপির বড় কোনো পদও আমাকে দেয়া হয়নি৷ কিন্তু এলাকার সাধারণ মানুষ আমাকে ভালোবাসে৷ তারা আমাকে চায়৷ তাই আমি প্রার্থী হয়েছি৷’’
কিশোরগগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী নজমুল আলম বলেন, ‘‘আমি তো জাতীয় পর্যায়ের নেতা না, তৃণমূলের নেতা৷ তাই আমাকে তৃণমুলে থাকতে হবে৷ আমি যদি সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকি, তাহলেই আমি নেতা৷ সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকলে তো আর দলের সঙ্গে বেঈমানি করা হয় না৷’’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি ওমরাও খান উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি নির্বাচন করায় বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত নয়, উল্টো লাভবান হবে৷ কারণ, আমি তো কাজ করছি মানুষের জন্য৷ তাদের নিয়েই আমার রাজনীতি৷ এখন নির্বাচনে আমার এলাকার মানুষ আমাকে চায়৷ তাদের তো আমরা মূল্যায়ন করতে হবে৷ এর ফলে আমার এলাকায় বিএনপি আরো শক্তিশালী হবে৷ আর নির্বাচন তো দলীয়ভাবে হচ্ছে না৷ তাছাড়া নির্বাচনে কারচুপি হবে বলে আমি মনে করি না৷ এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ভালো হয়েছে৷ আওয়ামী লীগ উপলব্ধি করতে পেরেছে৷’’